হাওরে আগাম বন্যা এবং প্রতিকারের সহজ পাঠ
হাওর হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বাটি আকৃতির বা উর্ধমূখী চাকতি আকৃতির অগভীর নিম্নাঞ্চল (Bowl or Upper faced Saucer shaped shallow depressions Pocket)। হাওর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ “সাগর” এর একটি অপভ্রংশ রূপ যার অর্থ সমুদ্র। বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলের বিশাল জলরাশি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সমূদ্রের ন্যয় দেখায় বলে ইহাকে হাওর বলা হয়।
বিশ্ব পরিবেশ এর ভারসাম্য রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক জলাভূমিসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মৎসসহ বিভিন্ন জলজ জীববৈচিত্রের লীলাভূমি।
আমাদের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের প্রাকৃতিক জলাভূমিসমূহ এবং সেগুলোতে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহ সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে ইরানের শহর “রামসার” এ প্রথম বিশ্ব জলাভূমি সম্মেলন (World Wetland Convention) অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ১৭১টি দেশ উক্ত সম্মেলনে যোগদান করে। ইহা World Wetland Convention অথবা Ramsar Convention নামে পরিচিত। বাংলাদেশ পরবর্তীতে এ Convention এ স্বাক্ষর করে। প্রতি ৩ বছর পর পর এ Convention অনুষ্ঠিত হয়।
এ Convention এর উদ্দেশ্য হলো জলাভূমির টেকসই ব্যবহার (Sustainable use of Wetland) যার অর্থ হলো জলাভূমির প্রাকৃতিক অবকাঠামোগত কোন ক্ষতি না করে, কোন দূষণ না ছড়িয়ে এবং উহার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের (Flora and Funa) (জীববৈচিত্র) সংরক্ষন নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ, মৎস ও কৃষি উৎপাদনে টেকসই ব্যবহারসহ জলাভূমিকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো।
এতদ্ব্যতীত, সারা বিশ্বে যে সকল জলাভূমি বিপন্ন জলজ প্রাণী (Waterfowl habitat) বিচরণ ক্ষেত্র সেগুলোকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষণের জন্য Ramsar sites হিসাবে তালিকাভূক্তকরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাবে সংরক্ষণ করা। বাংলাদেশের টাঙ্গুয়ার হাওর এবং সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চল (সুন্দর বনের পশ্চিমাংশের জলজ এলাকা) Ramsar sites এর অন্তর্ভূক্ত।
এতদ্ব্যতীত, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (Sustainable Development Goals- SDGs) এর ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার ১৪তম লক্ষ্যমাত্রাতেও (Goal 14: Life below Water) জলাভূমির প্রাকৃতিক অবকাঠামোগত কোন ক্ষতি না করে এবং উহার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের (জীববৈচিত্র) সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণের বিষয়টি বলা হয়েছে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববাসীর সাথে ২০৩০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে SDGs বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।
বাংলাদেশে মোট ৩৭৩ টি হাওর রয়েছে যা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও বি. বাড়িয়া জেলায় ১৯.৯৯ লক্ষ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের উৎপত্তি মধুপুর ট্র্যাক্টের উত্থানের সাথে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা বদ্বীপ সৃষ্টির কারণেই বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে নিম্নাঞ্চলীয় পকেট (Depressions Pocket) তৈরী হয়েছে।
মধুপুর ট্র্যাক্ট – এটি বাংলাদেশের উত্তর-মধ্য অংশে ৪,২৪৪ বর্গ কি.মি. এর একটি বৃহৎ উচ্চভূমি এলাকা, যা উত্তরে জামালপুরের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল থেকে পূর্ব-দক্ষিণে ফতুল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
অপেক্ষাকৃত কম দূরত্ব, ব্যয় সাশ্রয়ী ও কার্যকরী (Feasible) বিবেচনায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বি.বাড়িয়ার সাথে মধুপুর ট্র্যাক্ট এর নরসিংদীর সাথে ভৈরবের মধ্য দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়িভাবে স্থল যোগাযোগ কাঠামো স্থাপন ফলে পূর্ব-দক্ষিণমধ্যঞ্চলীয় মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলকে উত্তর- দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে ২ ভাগে বিভক্ত করেছে।
ফলে কালক্রমে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা কাঠামো মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত উত্তর হতে দক্ষিণমূখী প্রবাহমান ছোট-বড় সকল নদী, খাল, নিম্নাঞ্চলসমূহ পলি ভরাট হয়ে পূর্ব-দক্ষিণমধ্যঞ্চলীয় মেঘনা অববাহিকায় একটি উঁচু ভূমির উত্থান ঘটেছে।
এর ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উজানে অবস্থিত ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চল ও তার অব্যবহিত ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট জেলায় বৃষ্টিপাতের পানি সাগরে নিষ্কাশনের পথে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার উজান অংশে নিন্মাঞ্চলীয় পকেট (Depressions Pocket) সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উজানের ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চলের চেরাপুঞ্জি এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। আবার বৃহত্তর সিলেট জেলার তিন দিক ঘিরে আছে ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা পার্বত্য অঞ্চল।
এ সকল অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় এবং এ সকল এলাকার বৃষ্টিপাতের পানি মেঘালয় হতে গোয়াইন, সারী, লবাছড়া, বাহ উমিয়ান, বাহ উমঙ্গি, কিনশি, গোমেশ্বরী, সোমেশ্বরী, আসাম হতে সুরমা, বরাক ও মনু এবং ত্রিপুরা হতে খোয়াই প্রভৃতি নদ-নদী দিয়ে সরাসরি বৃহত্তর সিলেট জেলাঞ্চলে প্রবেশ করে যা হাওরাঞ্চলের নিম্নভূমিতে জমা হতে থাকে।
জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত কারণে বর্তমানে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের অপরিকল্পিত ও অদূরদর্শী যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মানে দিন দিন হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা প্রকট হয়ে উঠছে।
ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উজানে অবস্থিত ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রাক বর্ষায় বৃষ্টিপাত সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নদীগুলো দিয়ে উহার পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকা দিয়ে সে পানি সাগরে নিষ্কাশনে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে হাওরে আগাম বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে হাওরাঞ্চলের উঠতি বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়ে ফসলহানীর ঘটনা ঘটছে।
হাওরাঞ্চলের আগাম বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের নামে বর্তমানে যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে শুধু অর্থ ও জনবলের অপচয়ই হচ্ছে না বরং বাংলাদেশের এ প্রাকৃতিক জলসম্পদ, পরিবেশগত ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্রের আঁধারকে ধ্বংস করে চলেছে।
এ সকল কর্মকান্ড সেই দৈনিক সোনার ডিম পাড়া হাঁস ও তার লোভী মালিকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে হাওরাঞ্চলের বিরূপ পরিবেশগত সমস্যা চিন্তা না করে কিভাবে বর্তমানে আমরা বেশী বেশী করে লাভবান হতে পারি- শুধু সেদিকে যেন আমাদের যত খেয়াল ও কর্মযজ্ঞ।
আমরা শুধুমাত্র আগাম বন্যা প্রতিরোধে হাওরাঞ্চলে বাঁধের পর বাঁধ নির্মাণ করে চলেছি, কম্পার্টমেন্টাল ডাইক নির্মাণের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলকে বিভক্ত করণ তথা পোল্ডারাইজেশন করত: হাওরাঞ্চলের জলজ প্রাণীর অবাধ চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে চলছি, নিষ্কাশনে বাঁধা সৃষ্টি মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে।
হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা প্রতিরোধকেই গুরূত্ব দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু হাওরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে না। ফলে আমাদের এহেন কর্মকান্ড দ্বারা হাওরাঞ্চলকে আমরা স্থায়ী জলবদ্ধতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি- অচিরেই যখন জলনিষ্কাশনও হবে না, তখন ফসলও হবে না, জীববৈচিত্রও ধ্বংস হবে এবং হাওর আমাদের আর কোন কাজে না এসে বাংলার দুঃখে পরিনত হবে।
আমাদের এ ধরণের কর্মকান্ড দ্বারা ইতোমধ্যে আমরা আমাদের সংরক্ষিত জীববৈচিত্রময় জলাভূমি চলন বিল ধ্বংস করে দিয়েছি, ভবদাহকে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পরিনত করেছি এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধের ভিতরের ভূমি উঁচুকরনের চিন্তা ব্যতিরিকে অপরিনামদর্শী ভাবে শুধূ বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলকে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পরিনত করনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করে চলেছি, হাওরাঞ্চলেও জলনিষ্কাশনের বিষয়টি চিন্তা না করে আগাম বন্যা প্রতিরোধে বাঁধের পর বাঁধ নির্মাণ, কম্পার্টমেন্টাল বাঁধ নির্মাণ, পোল্ডারাইজেশন প্রক্রিয়া তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।
হাওরের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা এবং হাওরে আগাম বন্যার কারণসমূহঃ
১৭৮৭- ১৮৩০ সাল সময়ের মধ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখ পলি ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি প্রবাহ না থাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বর্তমানে শুধু মাত্র মৌসুমী নদে পরিনত হয়েছে। অধিকিন্তু, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ এবং টঙ্গী- নরসিংদী-ভৈরব সড়ক যোগাযোগ কাঠামো এবং কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া এবং কটিয়াদি হয়ে গাজীপুর, নরসিংদী ও ঢাকা জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহে বিক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের কারনে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ার এগারো সিন্ধু হতে কটিয়াদি পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ একেবারেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে এবং তার ভাটিতে ভৈরবে মেঘনা নদীর পতিত মূখ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ মরগঙ্গায় পরিনত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তেমনিভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের উক্ত অংশ হতে উৎপন্ন নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী জেলা দিয়ে নিম্নমূখী নদী- খালগুলোও মৃতনদীতে- খালে পরিনত হয়েছে।
ভৈরব বন্দর শহরটি মেঘনা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের (বর্তমান পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের) মিলিত পয়েন্টের উজানে ত্রিভূজ আকৃতির স্থল অংশে গড়ে উঠেছে। ফলে মেঘনা প্রবাহিত হচ্ছে ভৈরব শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে এবং পূর্বে পুরাতন ব্রক্ষপূত্র নদ ভৈরবের উজানে অবস্থিত কুলিয়ারচর উপজেলা সদর ও ভৈরব শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মেঘনা নদীর একাধিক চ্যানেল ও নিম্ন ভূমি দ্বারা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযুক্ত ছিল (উক্ত এলাকার গুগল মানচিত্রে এখনো উক্ত অংশে ভাটির দিকে বন্ধ দুটি মরা নদী লক্ষ্যনীয়)।
ফলে হাওরের বিশাল জলরাশির একটা অংশ বিশেষ করে বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি উক্ত চ্যানেলসমূহ ও নিম্নভূমি দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে নিস্কাশিত হতো।
একইভাবে কুলিয়ারচর হতে উজানের কটিয়াদি পর্যন্তও হাওরের নদীগুলো/ভাটির অঞ্চলের সাথে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বেসিনের ছোট-বড় অনেকগুলো নিষ্কাশন খাল সংযুক্ত ছিল, যেগুলোও হাওরের জল পুরাতন ব্রক্ষপুত্রে নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হতো।
আর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও উহা হতে উৎপন্ন আড়িয়াল খাঁ নদী এর দুটি বৃহৎ শাখা দিয়ে উহাতে হাওরের নিষ্কাশিত পানি ভৈরব বাজারের পশ্চিম- দক্ষিণ পাশ দিয়ে ভাটিতে মেঘনায় নিষ্কাশিত করত অর্থাৎ হাওরের পানি নিস্কাশনে ভৈররবের উজানে মেঘনা ও ঘোড়াউৎরা নদী হতে উৎপন্ন হয়ে পুরাতন ব্রক্ষপুত্রে পতিত চ্যানেলসমূহ পুরাতন ব্রক্ষপুত্র ও আড়িয়া খাঁ নদী হাওরের পানি নিষ্কাশনে ভৈরব ব্রীজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনার বিকল্প চ্যানেল হিসাবে কাজ করত।
ভৈরব বন্দর শহরটি মেঘনা নদী এবং ব্রক্ষপুত্র নদীর (বর্তমান পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীর) মিলিত পয়েন্টের উজানে ত্রিভূজ আকৃতির স্থল অংশে গড়ে উঠেছে। ফলে মেঘনা প্রবাহিত হচ্ছে ভৈরব শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে এবং পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদী অর্ধমৃত নদী মেঘনা নদীতে ভৈরব শহরের পশ্চিম- দক্ষিণ পাশ দিয়ে পতিত হয়েছে।
ভৈরবের উজানে মেঘনা নদী হতে কুলিয়ারচর উপজেলা শহর ও ভৈরব শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একাধিক চ্যানেল ও নিন্ম ভূমি দ্বারা পূর্ব- দক্ষিণ অংশ দিয়ে দুটি বড় চ্যানেল দ্বারা পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদের সাথে সংযুক্ত ছিল (উক্ত এলাকার গুগল মানচিত্রে এখনো উক্ত অংশে ভাটির দিকে বন্ধ দুটি মরা নদী লক্ষ্যনীয়)।
ফলে হাওরের বিশাল জলরাশির বিশাল একটা অংশ বিশেষ করে বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি উক্ত চ্যানেলসমূহ ও নিন্মভূমি দিয়ে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র পতিত হতো। একইভাবে কুলিয়ার চর হতে উজানের কটিয়াদি পর্যন্তও হাওরেরর নদীগুলো/ভাটির অঞ্চলের সাথে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র বেশিনের সাথে ছোট-বড় অনেকগুলো নিষ্কাশণ খাল সংযুক্ত ছিল, যেগুলোও হাওরের জল নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হতো।
আর পুরাতন ব্রক্ষপুত্র ও উহা হতে উৎপন্ন আড়িয়াল খাঁ এর দুটি বৃহৎ শাখা ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদ দিয়ে ভৈরব বাজারের ভাটিতে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র বেসিনের পানি মেঘনায় নিষ্কাশিত হতো।
কিন্তু ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোণা- কিশোরগঞ্জ-ভৈরব স্থল যোগাযোগ তথা সড়ক ও রেলপথ নির্মাণকালে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বেসিনের সাথে উল্লেখিত নিষ্কাশন অবকাঠামোসমূহ অত্যধিকভাবে সংকুচিত করায় সেগুলো ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ বা ভরাট হয়ে গিয়েছে। ফলে কিশোরগঞ্জ হতে ভৈরব পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে বিকল্প চ্যানেলটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
একইভাবে আশুগঞ্জ হতে আখাউড়া রেললাইন এবং আখাউড়া হতে বি. বাড়িয়া পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোসমূহ নির্মাণের ফলে বর্তমানে এ অংশের উজানে হাওরাঞ্চল এবং ভাটির মেঘনা অববাহিকা ও তিতাস নদীর ভাটির অংশের সাথে সংযোগকারী ছোট নদী ও খালসমূহ ভরাট হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে তিতাস নদী দ্বারা হাওরের কিয়দাংশ পানি নিষ্কাশিত হয় বটে, তবে তা হাওরের আগাম বন্যার প্রকোপ হ্রাসে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেনা। বর্তমানে বাপাউবো কর্তৃক তিতাস নদীর পুণঃখনন কাজ চলমান রয়েছে। খনন কাজ সম্পন্ন হলে উহা হাওরের পানি নিষ্কাশনে আরো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রতিয়মান হয়।
তবে অসুবিধা হলো এ নদটি সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত না হওয়ায় ইহা দ্বারা হাওরের পানি নিষ্কাশনে অনেক সময় ব্যয় হয় বলে আগাম বন্যা নিরসনে এর ভূমিকা সীমিত।
তাই বর্তমানে হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভৈরব ব্রীজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদী। অথচ এ মেঘনা নদী কালক্রমে মানব কর্মে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে এবং বর্তমানে এর মাত্র ৭০০ মিটার প্রসস্থ চ্যানেল দ্বারা পানি নিষ্কাশিত হতে পারে। এই ৭০০ মিটার প্রস্থেও একেবারে লাগোয়া উজান ভাটিতে রেলপথের ২ টি এবং সড়ক পথের ১ টি ব্রীজ এর পিলার দ্বারা আরোও সংকুচিত হয়েছে
তিনটি ব্রীজের মোট ২৪টি পিলার রয়েছে এবং পিলারসমূহের প্রস্থের দিক (Alignment) নদীর প্রবাহের গতিপথের দিক (Alignment) এর সাথে সর্বত্র ভাবে একমূখী না হওয়ায় সাংঘর্ষিক হয়ে নদীর প্র্রবাহ পথ আরো সংকুচিত এবং প্রবাহ প্রচন্ডভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
অধিকিন্তু, মেঘনা নদীর উক্ত ৭০০ মিটার প্রস্থে ভৈরব রেল ব্রীজের নীচে ডানতীরের ভাটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর ডিলার মেঘনা পেট্রোলিয়াম লি: ও যমুনা পেট্রোলিয়াম লি: তেল উত্তোলনের ডিপো অবস্থিতির কারণে সবসময় ২/৩ টি পেট্রোলিয়াম নৌ- ট্যাংকার নোঙ্গরে থাকে যেগুলোসহ ভৈরব নৌ-বন্দরের করে রাখা জাহাজ ও অবকাঠামোসমূহ হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে প্রচন্ড বাঁধার সৃষ্টি করছে এবং একইভাবে নদীর ঠিক অপর পাড়ে ভারত-বাংলাদেশ বানিজ্য জেটি নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে সেটিও হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে প্রচন্ড বাঁধা সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের এত বিশাল জলরাশি উপরে বর্ণিত ভৈরব ব্রীজসমূহের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীর এই সংকুচিত এবং নিয়ন্ত্রিত পথেই নিষ্কাশিত হতে হয়।
এর ফলে প্রাক বর্ষায় হাওরে আগাম বন্যা এবং বর্ষাকালে হাওরাঞ্চল ও এর সাথে সংযুক্ত জেলাসমূহের হাওর বর্হিভূত উজানের এলাকায় ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হচ্ছে।
আগাম বন্যা/বন্যা মোকাবেলায় বা এর প্রকোপ হ্রাসে হাওরাঞ্চলের নিষ্কাশণ ব্যবস্থার উন্নয়ন কৌশল:
- ০১) পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদকে সারা বছর প্রবাহমান রাখার জন্য সক্রিয় করা এবং এর জন্য-
(ক) জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ এ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান Intake পয়েন্ট এ পলি ভরাট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বা অনবরত পলি অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং উক্ত পয়েন্ট হতে বর্তমানে যতটুকু পর্যন্ত নদী পলি ভরাট হয়ে আছে (আনুমানিক ২০ কি.মি.) তা অপসারণ করা/ পূনঃখননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(খ) কিশোরগঞ্জ জেলার এগারোসিন্ধু হতে মেঘনায় পতিত মূখ পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পূনঃখনন করা।
- ০২) ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার আলী নগর এ নরসুন্দা নদীর একটি শাখা উৎপন্ন হয়ে ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর, নান্দাইল উপজেলা সদর হয়ে করিমগঞ্জে নরসুন্দা নদীর অপর আরেকটি শাখা যা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাটির দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা সীমানায় উৎপন্ন হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে করিমগঞ্জ পর্যন্ত পৌছেছে সেটির সাথে মিলিত হয়ে হাওরাঞ্চলের ইটনা উপজেলা সদরের ধনু নদীতে পতিত হয়েছে। বর্তমানে নরসুন্দা নদীর উভয় শাখা একেবারেই মৃত ও বেদখল হয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পরিনত হওয়ার পূর্বে নরসুন্দা নদীর উক্ত ২টি শাখা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ হতে ধনু নদীতে পানি নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে হাওরে আগাম বন্যার সময় (মার্চ- এপ্রিল-মে) কোন পানিই থাকে না এবং উক্ত সময়ে নদী প্রায় শুস্ক থাকে।
ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশের লেভেল (-)১.০০ মি. পিডব্লিউডি এবং আগাম বন্যার সময় করিমগঞ্জের পাশে ধনু নদীতে পানির বিপদসীমা ৫.১৫ মি. পিডব্লিউডি অতিক্রম করে এবং হাওরে আগাম বন্যার সৃষ্টি হয়।
নরসুন্দা নদের উভয় শাখা পুনঃখনন করা হলে ধনু নদীর পানি ০.০০ মি. পিডব্লিউডি এর অধিক উচ্চতায় উপনীত হলেই ধনু নদীর পানি ব্রহ্মপুত্র নদে নিস্কাশন শুরু হবে।
উল্লেখ্য যে, ধনু নদীর সর্বনিম্ন পানি সমতল ১.৪০মি পিডব্লিউডি। সুতরাং নরসুন্দা নদীর উভয় শাখা পুনঃখনন করা হলে সারা বছরই হাওরের পানি ব্রহ্মপুত্র নদে নিষ্কাশিত হতে থাকবে। ফলে হাওরে বন্যার উপক্রম হওয়ার পুর্বেই বন্যা প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে আগাম বন্যা প্রতিহতে কাজ করতে থাকবে।
- ০৩) কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে আপার মেঘনা নদীর সাথে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগ চ্যানেলগুলোর যে দুটি প্রলম্বিত মরা গাং বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোকে পূণঃখনন করতঃ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা। এক্ষেত্রে, জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের উক্ত অংশের রেলওয়ের ব্রীজ দুটি এবং সড়ক পথের ব্রীজ দুটি প্রস্তস্থ করে পূণঃনির্মাণ করার প্রয়োজন হবে।
- ০৪) তিতাস নদীর পূণঃখনন কাজ চলমান থাকলেও উহাকে হাওরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশণের বিকল্প চ্যানেল হিসাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে পরিবর্তিত নকশায় পূণ: খননের কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
উপরে বর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র অতীতের সক্রিয় পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীটির পূণর্জাগরণ ঘটবে, বর্ষা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের সংঘটিত বন্যা হ্রাসে যমুনা নদীর বাইপাস নদী হিসাবে কাজ করবে যা পদ্মা অববাহিকায়ও বন্যা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, দেশের পূর্ব মধ্যাঞ্চল (ভৈরব বাজার) ও মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল (নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ডেমরা, ঢাকার পূর্বাচল, ঘোড়াশাল, গাজীপুর) এর সাথে পূর্ব-মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের সাথে সরাসরি নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে, একই ভাবে উক্ত অঞ্চলসমূহের সাথে নরসূন্দা নদী দিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেট জেলার শহর-বন্দরগুলোর সাথে নৌ-চলাচল প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে সহজেই সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাস্থ পুরকাজের নির্মাণ সামগ্রী এবং হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ঢাকা জেলা ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নৌ-পথে পরিবহনে বিপ্লব ঘটাবে।
অপর দিকে পশ্চিমে যমুনা নদী হতে পূর্বের হাওর পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও বৃহত্তর ঢাকা জেলার মরে যাওয়া নদীগুলো ক্রমান্বয়ে পূন:খননের মাধ্যমে সক্রিয় করা যাবে এবং তাতে এতদাঞ্চলের নিষ্কাশণ ও সেচ ব্যবস্থাসহ জীববৈচিত্র ও পরিবেশ এর উন্নয়ন ঘটাবে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা এই যে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা হতে ভাটির দিকের নদীগুলো খননের মাধ্যমে ঐ সকল জেলা হতে ভাটিতে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে হাওরাঞ্চলের বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে।
কিন্তু হাওরাঞ্চল নিন্মাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের প্রবিন্ধকতাসমূহ অপসারন না করে/পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন না করে যদি হাওরাঞ্চলের উজানের নদীগুলো পুনঃখনন করা হয়, তবে উজানের দিকের হাওরাঞ্চলে কিছুটা বন্যার প্রকোপ কমতে পারে ঠিকই, কিন্তু হাওরের নিম্নাঞ্চলের জেলাগুলোর যেমন কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং বি. বাড়িয়ার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল তো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছেই, তাছাড়া হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোসহ ভাটির জেলাগুলোও হঠাৎ হাওরের বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তাই হাওরাঞ্চলের নদীগুলোর পুনঃখননের প্রয়োজন আছে ঠিকই, তবে সেগুলো হাওরাঞ্চল এর নিন্মাংশ হতে পানি নিষ্কাশণের ভাটির প্রতিবন্ধকতাসমূহ অপসারন করার পর/পর্যাপ্ত নিষ্কাশন সূবিধা সৃষ্টি/পুন:সৃষ্টির পর।
সুতরাং স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, হাওরের পানির নিষ্কাশনের ভাটির দিকে প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাসমূহ অপসারণ তথা বন্ধ হয়ে যাওয়া/ পলি ভরাট হয়ে যাওয়া নদ, খাল বিলসমূহ পূন:খনন করত: নিষ্কাশণ ব্যবস্থা উন্নত করা হলে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের বন্যার প্রকোপ ভালভাবেই হ্রাস করা সম্ভব হবে।
এতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানের নামে অর্থের অপচয় যেমন রোধ করা সম্ভব হবে, তেমনি মানব জাতির অত্যাচার হতে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ মিঠা পানির বিশাল জলাভূমি সম্পদ এর পরিবেশ ও প্রকৃতি তথা হাওরাঞ্চলও রক্ষা করা সম্ভব হবে, Wetland convention এর শর্তসমূহ প্রতিপালিত হবে এবং বাংলাদেশ SDG অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
সৌজন্যেঃ পানি পরিক্রমা