সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বলি দেওয়া হচ্ছে শত শত গাছ
সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কাটা হচ্ছে বড় বড় গাছ। শিরীষ, কড়ই, বাদাম-ছোট–বড় এ রকম অনেক গাছ। কাটার পর যাতে গাছের গুঁড়ি (শিকড়) দেখা না যায়, সে জন্য মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। ২০টির মতো গাছ ইতিমধ্যে কাটা পড়েছে। কাটার অপেক্ষায় আছে আরও দুই শতাধিক গাছ।
চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন সড়কের ওমরগনি এম ই এস কলেজসংলগ্ন কবরস্থানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এই গাছ কাটা চলছে। কবরস্থানের নাম ‘পূর্ব নাসিরাবাদ জান্নাতুল মাওয়া’ কবরস্থান।
কবরস্থানের পরিচালনা কমিটির নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই কবরস্থানের জমির পরিমাণ প্রায় ২০ একর বলে জানায় কমিটি সূত্র।
তবে এত গাছ কাটা হলেও এ জন্য নেওয়া হয়নি বন বিভাগের কোনো অনুমতি। স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের বাধাও মানছে না তারা। ব্যানার টাঙিয়ে প্রকাশ্য দিনের আলোয় একের পর এক সবুজ ধ্বংসের উৎসব চলছে।
ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘পূর্ব নাসিরাবাদ জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। নিবেদক—জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থান পরিচালনা কমিটি।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, বড় বড় গাছ করাত দিয়ে কেটে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। কড়ই ও শিরীষগাছ বেশি এখানে। দুজন দিনমজুর গাছ কাটছেন। তাঁদের একজন নূর মোহাম্মদ ও অপরজন সুলতান গাজী বলে নিজেদের পরিচয় দেন।
সুলতান বলেন, ‘কবরের স্থানসংকুলান হচ্ছে না বলে আমাদের গাছ কাটার জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাছ কেটেছি। কবরস্থানের সব কটি গাছ পর্যায়ক্রমে কাটা হবে।’
এখনো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোয় সাদা রং দিয়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে। নম্বর দেওয়া সব কটি গাছ কেটে মাটি ভরাট করা হবে বলে এই শ্রমিক জানান।
জানতে চাইলে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কবরস্থানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমরা গাছ কাটছি। এরপর মাটি ভরাট করে জায়গা বাড়ানো হবে। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগে আবেদন করেছি। অনুমতি পেয়ে যাব।’
অনুমতি পাওয়ার আগে গাছ কীভাবে কাটছেন, জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইনের বাইরে কিছু করব না। অনুমতি তো পাব। তাঁরা পরিদর্শন করে গেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কায়চার বলেন, ‘জায়গাটি খাস হতে পারে। ওখানে মহল্লার কবরস্থান গড়ে উঠেছে। আমাদের কাছে আবেদন করেছে। আমরা এখনো অনুমতি দিইনি। আমি কাল এলাকাটি পরিদর্শন করব আবার।’
গাছ কাটার বিষয়টি দেখতে পেয়ে চার দিন ধরে এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন স্থানীয় কয়েকজন পরিবেশকর্মী। কিন্তু তাঁদের বারণ কানে তোলেনি কমিটি। জানতে চাইলে পরিবেশকর্মী আবু সুফিয়ান বলেন,
শহরের ভেতর যেখানে সবুজের সংকট রয়েছে, সেখানকার এত গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কেউ দেখছেনও না বিষয়টা। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে পরিবেশের এ কেমন ক্ষতি!