সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।কেননা, পরিবেশ আমাদের দেহ ও মনকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।অন্যদিকে, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে বাধা সৃষ্টি করে। যার কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে তৈরি হয় নানাবিধ সমস্যা।সৃষ্টি হয় নানাবিধ রোগের। সেই সাথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুর মানসিক বিকাশও।
অথচ এই অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন দূষিত পরিবেশের স্রষ্টা আমরা নিজেরাই।প্রতিদিন নানাভাবে পরিবেশকে নোংরা ও দূষিত করে চলেছি আমরা। সৃষ্টি করছি জনদুর্ভোগ, সঙ্গে বাড়ছে ভোগান্তিও, ডাস্টবিন ব্যবহারে অনীহাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু ব্যবহার না করে ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলা যেন আমাদের নিত্য অভ্যাস। রাস্তা বা ফুটপাত যেন ময়লা ফেলার প্রধান স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।ফলে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে অসুবিধা, দুর্গন্ধ ও দুর্ভোগ যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। শিক্ষিত বিবেকবান অগণিত মানুষও ময়লা ফেলতে দ্বিধা করেন না। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাস্তার আশ-পাশে গর্ত খুঁড়ে স্বার্থ উদ্ধার করার ফলে বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পরিত্যক্ত জিনিসপত্র রাস্তার আশ-পাশে ফেলে যাওয়ার রীতি এখন অনেক পরিচিত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসস্ট্যান্ডেও নোংরা পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। নজরদারির অভাবে শহরের রাস্তা বা রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোর ভয়ানক অবস্থা।
এগুলোর ফলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নিয়মিত। বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় ঝোপ-ঝাড়, ময়লাযুক্ত স্থান, ড্রেন পরিষ্কার না করার ফলে মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগত অবহেলার ফলে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। দিন দিন রোগ-জীবাণুর পরিমাণ বেশি হওয়ার মূলে দায়ী আমরাই।এর জন্য অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমরা ও আমাদের সন্তানরা।
সিটি করপোরেশনেরও সুনজর না থাকায় শহর এলাকায় দুর্ভোগ দিনে দিনে সীমা অতিক্রম করে চলেছে। যথাসময়ে রাস্তার মেরামত না করা, ড্রেন বা নালা-নর্দমার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবহেলা করায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে বস্তি এলাকার অবস্থা আরো ভয়ানক। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুনজরের অভাবই মূলত দায়ী।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার মধ্যে অন্য একটি হচ্ছে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান বিশ্বব্যাংক তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ও সবুজ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগত সতর্কতা এই সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের ডোবানালা বা ঝোপ-জঙ্গল নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারি।