সুইজারল্যান্ডের জলবায়ু নীতিমালা নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে
সুইজারল্যান্ডের জলবায়ু নীতিমালা নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অভিযোগ করে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন দুই হাজারের বেশি নারী।
মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত ইসিএইচআর এই প্রথমবারের মত একটি মামলা শুনতে যাচ্ছে, যেখানে মানবাধিকারের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মুখ্য বিষয়।
এর আগে সুইজারল্যান্ডের আদালতে ছয় বছর মামলা চলেছে এ বিষয়ে, তবে সেই আইনি লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের তাপমাত্রা বিশ্বের গড়ের চেয়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে। আগের চেয়ে ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে তাপপ্রবাহ।
মামলা করতে এক জোট হওয়া ওই সুইস নারীদের গড় বয়স ৭৩। তারা নিজেদের বলছেন ‘ক্লাব অফ ক্লাইমেট সিনিয়রস’।
এই নারীদের ভাষ্যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তারা অধিকার হারাচ্ছেন। স্বাস্থ্য তো বটেই, এমনকি তাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে জলবায়ু পরিবর্তন। নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টও প্রমাণ হিসেবে তারা অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে আদালতে জমা দিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ কমাতে সুইস সরকারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার নির্দেশনা দিক ইউরোপীয় আদালত।
নারীদের এই দলের সদস্য এলিজাবেথ স্টের্ম বলেন, “জলবায়ু বদলে যাওয়ার কারণে হিটওয়েভ বেড়েছে। এতে বয়স্ক নারীদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। অন্য সময়ের চেয়ে হিটওয়েভের দিনে বয়স্ক নারীরা মারা যাচ্ছে বেশি।”
তিনি বলেন, “কিছু মানুষ বলছে, আপনাদের এত অভিযোগ কেন, আপনারা তো কদিন পরে মারাই যাবেন। কিন্তু সুইস সরকারের একটি সভ্য জলবায়ু নীতি না নিতে পারার কারণে আমরা কেউ মারা যেতে চাই না।”
ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অবজারভেটরি বলছে, গড় তাপমাত্রা যে পরিমাণ বাড়ছে, তাতে গোটা ইউরোপে জনস্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বয়স্করা ভুক্তভোগী হবেন। গত ২০ বছরে ইউরোপে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হৃদরোগে ভুগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
জলবায়ুর বদলে যাওয়া যে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, সুইজারল্যান্ড সরকার তা অস্বীকার করছে না। তবে বয়স্করাই এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন- তেমনটা মানতে নারাজ তারা। সুইস নারীদের দলটি সফল হলে ৪৬ সদস্যের ইউরোপীয় কোর্টের সবার জন্য এ মামলাটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
মানুষের বহুমুখী কাজের কারণেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। পরিণামে মানুষের জীবনে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে চাইলে তাপমাত্রা বাড়ার গতিকে অবশ্যই নামিয়ে আনতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার এমনভাবে বেঁধে রাখতে হবে, যাতে ২১০০ সাল নাগাদ তা প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায় এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তা সম্ভব না হলে ইউরোপে অতি বৃষ্টি থেকে বন্যার ঝুঁকি বাড়বে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ দল আইপিসিসি।
তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বনে দাবানল দেখা দিতে পারে। গত গ্রীষ্মে ইউরোপে তাই ঘটেছিল। গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আগের চেয়ে সাত গুণ বেশি জমিতে আগুন লাগার তথ্য রয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানির হাতে।