নদী রক্ষা কমিশন প্রতিবেদন: লম্বা হয়েছে নদী দখলদারের তালিকা, সারা দেশে ৬৩ হাজার দু’শোর বেশি নদী দখলদার
দেশের সকল জেলায় মিলিয়ে আরও লম্বা হয়েছে নদী দখলদারের তালিকা। আগে এই তালিকায় ছিল ৫৭,৩৯০ দখলদারের নাম আর এবার মোট ৬৩,২৪৯ জন দখলদার ও দূষণকারীর তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা জাতীয় কমিশন। তবে কমিশন জানিয়েছে এর মধ্যে গত দুই বছরে ১৮,৫৭৯ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ।
গতকাল ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবারে আয়োজিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ অনুষ্ঠানে তথ্য প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, নদীর দখল ও দূষণ রোধে শুধু আন্তরিক হলেই হবে না, আইনের সঠিক প্রয়োগ আর কঠোর হাতে দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
প্রধান অতিথি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে নদী রক্ষা কমিশন নদীকে বাঁচানোর লক্ষে নিরালস কাজ করে যাচ্ছে। নদী কমিশন যে কাজ করছে তাতে সুধী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র সহ সকল নদী বাঁচাতে আমরা কাজ করছি। এটি আরও জোরদার করা দরকার এবং আমরা তাই করছি। আগামী ক্যাবিনেট সভায় নদী কমিশনের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো, যাতে এটি আরও গুরুত্ব পায়।’
নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা প্রায় ১৮,৫৭৯ দখলদারকে উচ্ছেদ করতে পেরেছি এবং গত এক বছরে দখল ও দূষণকারীদের তালিকা আরও বড় এখন ৬৩,২৪৯-তে উঠেছে।’ ‘নদীর দখল ও দূষণ রোধে আমরা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০০ কোটি টাকা চেয়েছি এবং দুই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছি পরিকল্পনা কমিশনে।
করোনার কারণে স্বভাবিক ভাবেই আমাদের কিছু কাজ পিছিয়ে গেছে। অর্থ ও প্রকল্পগুলো অনুমোদন পেলে আমরা যেসব কাজে পিছিয়ে গেছি তা কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
নদী দখলের কারণে আমাদের নাব্য কমে গেছে। পানি জমে যাচ্ছে। দেশের একদিকে পানি নেই, অন্যদিকে বন্যা হচ্ছে ঘন ঘন। ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। অনেক জায়গায় বড় বড় প্ল্যান্ট হয়েছে। বড় বড় কারখানা করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের প্রায় ৭৭টি খাল ছিল। সেগুলো প্রায় সব দখল হয়ে গেছে।
কিছু ব্রিজ হয়েছে যা নদী দখল করেই করা হচ্ছে। এমন ছোট যে সেটি দিয়ে চলাচল করা যায় না। নাব্যের জায়গাটি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। প্রতি বছর ড্রেজিং করার কথা থাকলেও খুব কম পরিমাণে ড্রেজিং হচ্ছে। ছয় ভাগের এক ভাগও করতে পারছি না।’
চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘নদীর বিষয়ে সবার সচেতনতা আস্তে আস্তে বাড়ছে। যদিও অনেক আইন আছে তবে সেগুলোর মধ্যে কিছু আইন খুবই জটিল। ফলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
পরিবেশের আইন দিয়ে আমরা পরিবেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আইনের যে জরিমানা তা যথেষ্ট নয় আরো বাড়াতে হবে। শাস্তি প্রয়োগ আরো কঠোর করতে হবে। সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে পাশাপাশি কাজ করতে গিয়ে কোথাও সমস্যা হলে সেখানে শক্তভাবে কঠোর হাতে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সবার আগে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। শুধু দখল আর দূষণ বন্ধ করা নয়, লালনও করতে হবে নদীকে। নদীর প্রতি আমাদের প্রতিজ্ঞা তো আছে, কিন্তু নদীর প্রতি দায়িত্ববোধ একটি বড় বিষয়। সম্মিলিত প্রয়াস খুব জরুরি। পরিবেশ এবং উন্নয়ন দুটো বেছে নেওয়া কঠিন। একটা বেছে নিতে হবে।’
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, ‘এত আন্দোলনের পরও এখন এসে দেখা যাচ্ছে যে নদী দখল এবং দূষণ দুই-ই বেড়েছে। পাশাপাশি আদালতের কড়া রায় করেও তা বন্ধ হচ্ছে না। সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা খুবই দুর্বল।
সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে যে মানুষ নদীকে বাঁচাতে চায়। আদালত যতই শক্তিশালী রায় দিক না কেন, কাজ হবে না যদি না সরকার চায় কাজ হোক। কমিশনও কার্যকর হবে না।’
কমিশনের সদস্য শারমিন সোনিয়া মুরশিদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মঞ্জিল মোর্শেদ, বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল প্রমুখ।