সাগরের মূল্যবান প্রবাল এখন হুমকির মুখে
সমুদ্রের নীচে প্রবালের জগত মানুষকে মুগ্ধ করে এলেও বর্তমানে অনেক জীবের মতো প্রবালও লুপ্তপ্রায়৷ ফলে ইটালির দক্ষিণ ও আফ্রিকার উত্তরের অঞ্চলে মূল্যবান প্রবালের ব্যবসার ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷
ইটালির দক্ষিণে নেপলস শহর কয়েক শতাব্দী ধরে মূল্যবান প্রবালের বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত৷ ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির একেবারে পাদদেশে তোরে দেল গ্রেকো নামের ছোট শহর প্রবাল বাণিজ্যের বিশ্ব-রাজধানী হিসেবে পরিচিত৷
কোরালের গহনার চাহিদা আবার বেড়ে চলায় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলি সন্তুষ্ট৷ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ও অলংকারের ব্র্যান্ডগুলি তোরে দেল গ্রেকোয় ভিড় করছে৷
অবশেষে এমন এক দোকানদারের দেখা পাওয়া গেল, যিনি প্রবালের বেআইনি ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত৷ মিকো কাতাল্দো বর্তমানে এক ‘গোল্ড রাশ’ উদ্দীপনা টের পাচ্ছেন, যেমনটা আগে কখনো দেখা যায় নি৷
ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সম্পর্কে আগের তুলনায় বেশি সচেতন হয়েছে বটে, কিন্তু চোরাচালানকারীদের দল ঠিকই ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করছে৷ মিকো বলেন, ‘আমি খুব সাহস করে কিছু বলছি৷ তারা স্পেনে প্রবাল চালান করতে দেয়৷ তারপর সেগুলি ফ্রান্স ও ইটালি চলে যায়৷ তারা কোনো না কোনো উপায় ঠিকই খুঁজে পায়৷’
এবার ভূমধ্যসাগরের অন্য দিকে নজর দেওয়া যাক৷ টিউনিশিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর উপকূলে তাবার্কা নামের জেলেদের এক গ্রাম অবস্থিত৷ কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে মূল্যবান কোরালকে ঘিরেই কর্মকাণ্ড চলছে৷
তবে ইটালির মতো সেখানে ‘গোল্ড রাশ’-এর মতো উন্মাদনা চোখে পড়ছে না৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, দশটির মধ্যে নয়টি দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে৷ যথেষ্ট প্রবালের অভাবে এমন দূরাবস্থা৷
সালাহ বজাউয়ি নিজে অনেককাল ডুবুরি হিসেবে প্রবাল সংগ্রহ করেছেন৷ তবে আইনি পথেই তিনি সেই কাজ করেছেন বলে জানালেন৷ এখন বয়স বেড়ে গেছে৷ তবে তিনি নিজের নৌকা অন্য ডুবুরিদের ব্যবহার করতে দেন৷ তিনি মনে করেন, ‘বেআইনি মাছ ধরা এত বেড়ে গেছে, যে আমরা বিশাল সমস্যার মুখে পড়েছি৷
কারণ এর ফলে আমাদের প্রবালের ভাণ্ডার ও সমুদ্রের তলদেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ কোনো একটি টিলার উপর দশ কিলো প্রবাল বেড়ে উঠলে যন্ত্র দিয়ে বেআইনিভাবে মাছ ধরার কারণে তার আশেপাশের জৈব পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়৷ তখন নয় কিলো কোরাল হারিয়ে যায়, মাত্র এক কিলো উত্তোলন করা হয়৷’
তারপর সেই পণ্য টিউনিশিয়ার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে চালান করা হয়৷ বিশেষ করে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল ও এশিয়ায় চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ একবার গন্তব্যে পৌঁছে গেলে প্রবালের প্রকৃত উৎস নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন৷ উপকূলরক্ষী বাহিনী তাবার্কার ছোট বন্দরে নিয়মিত নৌকার তল্লাসি নেয়৷
আলজেরিয়া, টিউনিশিয়া ও স্পেনের এক যৌথ নেটওয়ার্ক তিন বছর আগে জানতে পেরেছে, যে কোটি কোটি ইউরো মূল্যের কোরাল গোটা বিশ্বে চোরাচালান করা হয়েছে৷
টিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনীর আদাম বেন আরাফা বলেন, ‘তারা প্রায়ই বিজার্টে ও রাজধানী টিউনিসে পণ্য জমা রাখে এবং রপ্তানির চেষ্টা করে৷ ইটালিই হলো ক্লাসিক রুট৷ সেখান থেকে প্রবাল প্রায়ই ভারত পর্যন্ত পাঠানো হয়৷’
মূল্যবান প্রবালকে ঘিরে সব সমস্যার যে একটাই উৎস, শিল্পের কারিগর হিসেবে মুরাদের কাছে তা একেবারে স্পষ্ট৷ আর তা হলো মানুষ ও তার মুনাফার লোভ৷ তিনি বলেন,
‘অন্য অনেক প্রজাতির মতো প্রবালও লুপ্তপ্রায় জীব৷ কারণ আমরা কোনো সময় দিতে প্রস্তুত নই৷ বেড়ে ওঠা, বিকাশের সময় আমরা দেই না৷ আমরা সমুদ্রের সম্পদের আর যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছি না৷’
আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে তোরে দেল গ্রেকোয় কেউ মাথা ঘামায় বলে মনে হচ্ছে না৷ তবে একটা উপলব্ধি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে৷ ব্যবসার কালো দিকের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কোনো এক সময় প্রবাল আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে৷