সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ICCCAD) সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে কারণ সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং আরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আনুমানিক বার্ষিক গড় ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার, যা জিডিপির ০ দশমিক ৭ শতাংশ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের এইচ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা বন্যা, পানির উৎস হ্রাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করছি।
বিশ্বব্যাংকের হিসেবে এসব কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। সম্ভবত জনসংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগ বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হতে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে দেশের ধান উৎপাদন ৬ থেকে ৯ শতাংশ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ত পানি মাছ চাষ ব্যাহত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা দরিদ্র উপকূলীয় মানুষের জীবিকায় প্রভাব ফেলবে। তাদের জন্য মাছ আমিষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসও।
লবণাক্ত পানি ভূগর্ভস্থ পানি এবং ভূ-পৃষ্ঠের পানির উৎসেও ঢুকতে পারে, যা পানীয় জলের সরবরাহ এবং মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করবে।
বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের (আইডব্লিউএফএম) পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন,
‘একবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ার চারপাশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা বাড়বে। এটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য ধ্বংস করবে, আরও বেশি লোককে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করবে।’
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের অভিযোজন নীতি এবং স্থানীয় উদ্যোগ অনেক জীবন বাঁচিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলি এড়াতে পেরেছে।