সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ
সময় বদলেছে। বদলেছে প্রকৃতি, পরিবেশ ও আবহাওয়া। বদলেছে মানুষের মন, মনন, চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও বিশ্বাসও। তেমনিভাবে বদলেছে জীবনের গতি-প্রকৃতি। গত কয়েক বছর ধরে চরম বৈরি আচরণ করছে আবহাওয়াও।
এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে ওঠছে ক্রমেই বিপর্যস্ত। বেড়ে গেছে ভারী বর্ষণ। বৃষ্টিপাতেও ব্যাপক অসঙ্গতি হচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও পাহাড়ধস, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্রপাত। অথচ মরুময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের উত্তর জনপদ। পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টি-ধস বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। তবে এই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি এখনো দুর্বল। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যা বার্ষিক গড়ে অন্তত ২৫০ মিলিমিটার। সীমিত জায়গা বা এলাকায় হঠাৎ কিংবা স্বল্প সময়ের মধ্যে অতিবর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ কারণে বেড়েছে জনদুর্ভোগও। রাজধানীসহ বড় বড় শহর-নগরে পানিবদ্ধতা ও দুর্ভোগের এটি অন্যতম কারণও। গত বছর বর্ষাজুড়ে দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা এর আগের বছরের চেয়ে বেশি।
গত বর্ষার পরও শরৎকাল জুড়ে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল এমনকি চীনেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে বেড়েছে দুর্যোগ ও দুর্ভোগের মাত্রাও।
সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের আবহাওয়া আবহমানকালের চিরচেনা রূপ ও বৈশিষ্ট্যের বদল হয়েছে। এলোমেলো হয়ে ওঠছে আবহাওয়া ও পরিবেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশে সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে।
ক্রমাগত অস্বাভাবিক আচরণ করছে আবহাওয়া। বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নিত্যনতুন দুর্যোগ-দুর্ভোগ ও সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। ফল-ফসলের উৎপাদন ব্যাহত এবং উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্বাভাবিক মতিগতি এবং চরম ভাবাপন্ন রূপে দেখা দিচ্ছে আবহাওয়া।
পরিবেশবিদগণ বলছেন, আবহাওয়া-জলবায়ু হয়ে উঠছে রুগ্ন খেয়ালি বৈরি এমনকি রুদ্র রুক্ষ প্রলয়ঙ্করী। অনেক সময়েই পূর্বাভাসের সাথে মিলছে না। মানুষবান্ধব নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন জটিল সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়ার বিরূপতা জীবনযাত্রায় চরম অনিষ্ট ও দুর্ভোগ ডেকে আনছে। এর ফলে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে মানব সম্পদের সার্বিক উৎপাদনশীলতা। কমছে সক্ষমতার হার।
সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও করাল গ্রাসে বসতি হারিয়ে প্রতিবছর পিছু হটে মূল ভূখন্ডের দিকে ধেয়ে আসছে উপকূল, চর, দ্বীপাঞ্চলের ভূমি ও বসতিহারা অভাবী মানুষজন। সাগরের ওপরতল ফুলে-ফেঁপে উঠছে। উপর্যুপরি সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে সমুদ্র বন্দরসমূহকে। তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামায় চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া জেঁকে বসেছে।
অতিসম্প্রতি পর্যবেক্ষণ অনুসারে, আবহাওয়া-জলবায়ুর অন্যতম প্রধান নিয়ামক ও সূচক বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি হচ্ছে। গত কয়েক মাসেই সারাদেশে সামগ্রিকভাবে গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
তবে এলাকাভেদে কম-বেশি বৃষ্টি বা তারতম্য ঘটেছে। গত ৮ মাসের আবহাওয়ায় দেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক হারের চেয়ে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল। বাতাসের আর্দ্রতায়ও খুব হেরফের হচ্ছে। এতে করে অনুভূত হচ্ছে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। বছরের অধিকাংশ সময়ই গুমোট হয়ে থাকছে আবহাওয়া।
এ কারণে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে নৌ-দুর্ঘটনাও। মারাত্মক ভাঙন বিস্তৃত হচ্ছে সমুদ্র উপকূল ও নদ-নদীর বিস্তীর্ণ অববাহিকায়। বৈরি জলবায়ু পরিবেশের মুখে ক্ষতির শিকার গৃহস্থ অসংখ্য মানুষ হারাচ্ছে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু, চাষবাসের জমি।
এদের বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’। ‘মোরা’ ‘সিডর’ ‘নার্গিস’ ‘আইলা’, ‘কোমেন’, ‘আম্পান’র মতো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো ও ভূমিধসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে।