সবাইকে একত্রে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে
পরিবেশের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। সে সম্পর্কে যদি ভাটা পড়ে তাহলে উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ প্রকৃতি চায় মানুষের সাহায্য। কিন্তু তা না করে আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করি, ফলে প্রকৃতি বৈরী রূপ ধারণ করে, প্রতিশোধ নেয়।
যেমন : কলকারখানার বর্জ্য, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বনভূমি ধ্বংস, নদ-নদী ও জলাধার ভরাট, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবেশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থা নিতে পারলেই একটি নিরাপদ বিশ্ব ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, জীববৈচিত্র্য আমাদের টিকিয়ে রেখেছে। পাশাপাাশি বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বায়ু, রাসায়নিকযুক্ত জমি ও খাদ্য, প্লাস্টিক ও পলিথিনযুক্ত দ্রব্য বর্জন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিত উপায়ে করতে পারলে পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকবে।
বলা সংগত, মানুষের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশের উপাদানে অনাকাঙ্ক্ষিত যে পরিবর্তন ঘটছে সেটাই বস্তুত পরিবেশদূষণ। আর এই দূষণ সম্পর্কে আরো বলতে গেলে সাধারণভাবে বোঝায়, মানুষের নিজস্ব স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করা, যা প্রধানত বর্জ্য বা ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে বায়ু, পানি ও মৃত্তিকার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
এগুলো মাটিতে শোষিত হয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির দূষণ ঘটাতে পারে। এ ছাড়া তীব্র দুর্গন্ধ আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। বায়ু, পানি ও মাটি- সব ক্ষেত্রেই দূষণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু এই দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে জনপদকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলার প্রয়াস তেমন একটা দেখা যায় না, যা কি না পরিতাপের বিষয়।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঘনবসতি এলাকায় পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ১৫টি চুনা কারখানা। এসব চুনা কারখানার আগুনের তাপ, ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। এসব কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
পরিবেশদূষণ রোধে কারখানা বন্ধ বা স্থানান্তরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু নোটিস দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। এজন্য কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা।
পরিবেশবিদদের মতে, ধোঁয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনসহ বায়ুদূষণকারী অন্যান্য গ্যাস থাকতে পারে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বলা বাহুল্য, এসব অনিয়মের কারণে দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের জলবায়ুবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর পরিবেশ রক্ষা না হলে আমি, আপনিসহ একে একে দেশ-জাতি সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ ধারণাটি ছোট-বড় সবার মনে গেঁথে দিতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই যদি পরিবেশের নিজ নিজ অংশটুকু রক্ষা করি, তাহলেই পুরো পরিবেশ রক্ষা হবে।
তাই ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় থেকে দেশ-জাতি তথা নিজেকে বাঁচাতে আসুন, এখনই সর্বপ্রথম নিজের ঘর থেকেই পরিবেশ রক্ষার কাজটি শুরু করি- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।