সংকটাপন্ন অবস্থায় সিলেট বিভাগের নদ-নদী
সিলেট বিভাগের চার জেলার ৩৫টি নদ-নদী বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বিভাগের অনেক নদ-নদী দখলদারির কারণে তার গতিপথ ও অস্তিত্ব হারাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে নগরের বন্দরবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁর মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সিলেটের নদ-নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সভার প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলপথ’ নিয়ে একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার। আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার।
সভায় বক্তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ও নদীরক্ষা কমিশনের তথ্যে গরমিল আছে। নদীরক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, বিভাগে নদ-নদী ১৬৮টি। অন্যদিকে পাউবো বলছে, মাত্র ৩৬টি।
এসব নদীর বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিয়া নদীর ২ কিলোমিটারেই আছে ১৮৬ জনের অবৈধ দখলদারি। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই মূলত নদী দখলে জড়িত। এগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করা প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পীযুষ কান্তি সরকার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সীমা রানী বিশ্বাস, পাউবোর সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তানভীর ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তারা আরো বলেন, সিলেটের ধলাই নদের সাদা পাথর ও সুনামগঞ্জের জাদুকাটা নদীতে সৌন্দর্য উপভোগে যান পর্যটকেরা। কিন্তু সেখানে বালু ও পাথর তোলা হচ্ছে।
অবৈধ দখলদার ও বালুমহালের কারণে পর্যটকেরা গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না। এই দখলদার ও বালুমহাল থেকে নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় নদীকে বাঁচানো প্রয়োজন।
সভায় মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সারি বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাই আল হাদী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফয়সল আহমদ, নূর আহমদ, আইনজীবী জাকিয়া জালাল, সৈয়দ মনির আহমেদ, অরুণাভ বণিক, সাজিদুর রহমান, ফজল খান, কামাল হোসাইন, নাসির উদ্দিন আহমেদ, ফজলুল করিম সাঈদ প্রমুখ।
সভা থেকে সিলেটের নদ-নদী রক্ষায় করণীয় হিসেবে ছোট-বড় নদ-নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা, নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণ করা, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে অবিলম্বে উচ্ছেদ করা, সিএস (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এসএ) ম্যাপ অনুযায়ী নদীগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা, নদী খনন ও দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করা, ভূমির শ্রেণিসংক্রান্ত ভুল সংশোধন করা, নদীতীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের ব্যবস্থা করা, পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ করা, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নকারী সব অবকাঠামো অপসারণ করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও নাছরিন আক্তার বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা বলা হয়। এই নদীর বিরূপ প্রভাবের কারণেই সিন্ধু সভ্যতা বিলুপ্ত হয়েছে। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে বালুমহাল হলে যাঁরা অনুমোদন দেন, তাঁরা সবাই দায়ী। এর দায়ভার তাঁদের নিতেই হবে।