শিশুদেরকে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে হবে
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেছেন, আমরা ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি টেকসই ও সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। এটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নাগরিকদেরও দায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পৃথিবী এক নজিরবিহীন জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি এবং এটি মোকাবিলার দায়িত্ব আমাদের সবার ওপরে বর্তায়।
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের কোনও কর্মের ফলে যাতে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাদের অংশগ্রহণ কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং অপরিহার্য।’
রবিবার রাজধানীর বেইলি রোডে জাতিয় মহিলা সমিতিতে ‘একশনএইড বাংলাদেশ’ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বে এর প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শিশুদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আনিসুর রহমান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা এবং বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়াতে আমাদের ঝুঁকি বেশি।
বাংলাদেশে প্রতি তিন জন শিশুর মধ্যে একজন এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন শিশু বিরূপ আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পরিবেশগত সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, জলবায়ু ন্যায্যতার লড়াইয়ে শিশুদের সম্পৃক্ত করা একটি টেকসই এবং সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক।’
অনুষ্ঠানে সাবেক সচিব ড. অপরুপ চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অরিজীত চৌধুরী, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের উপ সচিব রুমানা ইয়াসমিন ফেরদৌসী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক রাবেয়া খন্দকারসহ অতিথিরা আলোচনায় সভায় অংশ নেন।
সাবেক সচিব ড. অপরুপ চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু সংকট কেবল একটি পরিবেশগত ঘটনা নয়, এটি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। তারা গৃহহীন হচ্ছে, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি শিশুবিবাহ ও শিশুশ্রমের মতো কাজের যুক্ত হচ্ছে বাধ্য হচ্ছে।’
অরিজীত চৌধুরী বলেন, ‘যখন কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনও অর্থ বরাদ্দ দেয়, তখন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকার কিছু করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে। যেকোনও সরকারি বা বেসরাকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কার্যক্রমে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রাখার আহ্বান করছি।’
শিশু প্রতিনিধি সিদরাতুল মুনতাহা প্রমি বলে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঠিক মতো হচ্ছে না। শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হয়েও এই পরিবর্তনের পরিণাম ভোগ করছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, বান্দরবান এবং চট্টগ্রাম— এই আটটি জেলায় জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে, তা তুলে ধরার জন্য একশনএইড বাংলাদেশ ৩০০ শিশুর মাঝে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।
জরিপ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকির কারণে ১২৩ জন শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। ৬০ জন শিশু বলেছে যে, তারা তাদের এলাকার পানিতে লবণাক্ততা অনুভব করছে এবং ৫৮ জন উত্তরদাতা বলেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের এলাকায় চাষাবাদ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
৫৩ জন শিশু জানিয়েছে যে, তারা গত তিন বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে এবং ৪ জন শিশু জানিয়েছে, তারা অ্যালার্জি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যাগুলোর মতো স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ২ জন শিশু বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে তাদের পরিবার আবাসস্থল হারিয়েছে।
অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশে-এর উদ্যোগে ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের’ এর শিশুরা ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুদের ওপর প্রভাব ও এ থেকে উত্তরণের জন্য কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের’ শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।