32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৪০ | ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
শিল্পায়নের ফলেই বাড়ছে অধিক পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ দূষণ পরিবেশগত অর্থনীতি

শিল্পায়নের ফলেই বাড়ছে অধিক পরিবেশ দূষণ

শিল্পায়নের ফলেই বাড়ছে অধিক পরিবেশ দূষণ

বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ সুন্দর হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে পুথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই পরিবেশ মানুষের বেঁচে থাকার প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। এই যে চলে যাওয়া তার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী মানবসভ্যতার খামখেয়ালিপনা।

পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলেই প্রথমে আসে পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিনদিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে মানবসভ্যতা টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ জনবহুল এবং আর্থিক সংকটে রয়েছে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরো বেশি।

আলোচনা করা প্রয়োজন দূষণের কারণগুলো কি কি? বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। একেক দেশে দূষণের কারণগুলো একেক রকমের হতে পারে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ইটের ভাটা এবং রাস্তার ধুলাবালি পরিবশেকে অধিক দূষণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যানবাহন বাড়ছে এবং শিল্পায়নের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন কলকারখানা।

অধিক পরিমাণে শিল্পায়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি এ শিল্পায়ন থেকে যে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এসব যারবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করছে।

যার ফলে শ্রবণ শক্তি কমে আসছে পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে পানি দূষণ।

ক্ষতিকর শিল্প বর্জ্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে নদীতে মিশে যাচ্ছে । যার প্রেক্ষিতে নদ-নদীর পানি দূষিত হচ্ছে এছাড়াও ভালো এবং উন্নত ফসল ফলানোর জন্য জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার কীটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষক। প্রয়োগের ফলে এসব রাসায়নিক সার পানিতে মিশে গিয়ে পানি দূষণ হচ্ছে দ্রুত।



একদিকে পানি দূষিত অন্যদিকে অধিক ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ। দুটোর মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব পানি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। আর বিপদে পড়ে এসব পানি যারা ব্যবহার করছেন তারা বিভিন্ন রকমের রোগে ভোগছেন। এর ফলে প্রাণিকুল এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।

আমরা জানি দেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে দেশের বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সরকারি পর্যায়েও বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। এছাড়া সংরক্ষিত বনের গাছ যেমন রাতের আধারে উজাড় হচ্ছে অন্যদিকে শিল্পায়ন হচ্ছে বনাঞ্চলে।

কিছু জমি ব্যবহারের অনুমতি নিলেও শিল্প মালিকরা ইচ্ছে মতো দখল করে নিচ্ছে জায়গা। যে পরিমাণে বন উজাড় করা হচ্ছে তার অর্ধেকও বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে না। যার ফলে তৈরি হচ্ছে মরুময়তা। অন্যদিকে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।

এছাড়াও বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম পরিচিত ব্যবহার্য জিনিষের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক। এ দ্রব্যটির ব্যবহার দিনদিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়াতে মাটির জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটি পোড়ানোর সময়ও উৎপন্ন হয় হাইড্রোজেন যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

এর ব্যবহার প্রথমে সীমিত করে পরবর্তীতে পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে পলিথিন সবচেয়ে ভয়াবহ বর্জ্য। এ বর্জ্যরে কোন শেষ নেই। তাই পলিথিন বন্ধ করে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকার বিভিন্ন সময় এর ব্যবহার বন্ধের জন্য কিছু অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

সবসময়ই আমাদের রাজধানী ঢাকা দূষিত নগরীর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। এর অন্যতম কারণ অধিক জনসংখ্যা। অধিক জনসংখ্যার ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। যার চাপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে শহর। ফলে বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে আমাদের প্রিয় শহর।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা অধিক পরিমাণে দেখা দেযায় পানি ব্যবহার বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বেশিরভাগ জেলার পানিতে আর্সেনিক পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বেশি মাত্রায় যেটি লক্ষ্য করা যায় তা হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি।

গ্রিণহাউজ নির্গমনের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত ওজোন স্তর ছিদ্র হয়ে সূর্যের আর্ক তেজস্ক্রিয় বেগুনি রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে বিনা বাঁধায় পতিত হচ্ছে এবং ধূলি, কার্বন ও অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থের সাথে ভূ-পৃষ্ঠে অধিক তাপ আটকা পড়ছে যার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দুই মেরু ও হিমালয় পর্বতশৃঙ্গে জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। এতে পরিবেশের বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রেন্টমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ) নামের এ রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ু দূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যুর কারণ ।



এবং এর ফলে বছরে ৫.২ বিলিয়ন দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭.৬% সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের এবং বাইরের বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫% অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮.৩২% এর সমপরিমাণ।

পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ -মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্বক প্রভাব ফেলছে। সীসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিকের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে।

শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুনগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী বির্নিমাণে বর্তমান সভ্যতার কর্ণধারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একান্ত জরুরি। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করা আমাদের অঙ্গীকার।

যতদিন দিন যাচ্ছে ততই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পৃথিবী বিশেষ করে আমাদের মতো জনবহুল এবং অনুন্নত দেশগুলোর ওপর প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি।

উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে বারবার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত বিশ্ব অধিক শিল্পায়ন ঘটাচ্ছে তার প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর। যার প্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। প্রাণিকুল আজ হুমকির সম্মুখীন।

এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এসমস্যা এককভাবে কোনো দেশের নয় এ সমস্যা সমগ্র বিশ্বের। কারো বেশি কারো কম। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের যে অঙ্গীকার আমরা করে থাকি বা ইতোপূর্বে আমরা করেছি তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। অঙ্গীকার শুধু কাগজেপত্রে নয় এর বাস্তবায়ন হতে হবে মাঠে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত