রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। সরকার সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব ঘোষণা করার পরেও সেখানে বন্ধ করা যায়নি শব্দ দূষণ।স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপস এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘তীব্র শব্দদূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা দলের প্রধান ও ক্যাপস এর পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারএই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।
অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জানান, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সচিবালয় এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবেল থাকবে।গবেষণার জন্য সচিবালয় এলাকাকে নীরব ঘোষণার আগে ও পরে অর্থাৎ গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই এলাকায় একটি জরিপ চালানো হয়। স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে এলাকার ১২টি স্থানে দিনব্যাপী ৩০০ বার উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ১২টি স্থানের মধ্যে সচিবালয়ের পশ্চিমে মসজিদের পাশের এলাকা ছাড়া সব জায়গায় ৭০ ভাগ এর বেশি সময় ধরে ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি শব্দের মাত্রা ছিল।আর সামগ্রিকভাবে ১২টি স্থানে সম্মিলিতভাবে ৯১ দশমিক ৯৯ ভাগ সময় ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি মাত্রার শব্দ হয়েছিল। সর্বোচ্চ সময় ধরে তিনটি স্থান- পল্টন বাস স্ট্যান্ড (১০০ ভাগ সময়), জিরো পয়েন্ট (৯৯ দশমিক ৪ ভাগ সময়) এবং কদম ফোয়ারাতে (৯৯ দশমিক ২ ভাগ সময়) নিয়মিতভাবে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের বেশি ছিল।
এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার আরো ৭০ টি এলাকায় ক্যাপস-এর গবেষণা দল শব্দ দূষণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেখানেও শব্দের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অত্যধিক ছিল।
সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন বাপা’এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল এবং সভাপতিত্ব করেন বাপা নির্বাহী সহসভাপতি মো. আবদুল মতিন।
সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্থপতি মুহাম্মাদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী।
বাপা নির্বাহী সহসভাপতি মো. আবদুল মতিন জানান, উচ্চ শব্দের কারণে মানুষ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সচেতনতা তৈরি করা ছাড়া শুধু আইন করে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গাড়িতে ৩টি হর্ন ব্যবহার করেন, যার মধ্যে একটি হাইড্রোলিক হর্ন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই যখন আইনের তোয়াক্কা করেন না, তখন সাধারণ ট্রাক-বাসচালকরা কীভাবে আইন মানবে? সবার আগে সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শব্দ দূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের জাতীয় জন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও বাপা সমন্বিতভাবে পরিবেশ বিষয়ক কাজ করে যাবে।