34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ২:৫৯ | ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
শকুন কমে যাওয়ায় ভারতে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু
পরিবেশ বিশ্লেষন

শকুন কমে যাওয়ায় ভারতে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু

শকুন কমে যাওয়ায় ভারতে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু

একসময় ভারতের সবখানে বিপুলসংখ্যক শকুন দেখা যেত। আবর্জনার স্তূপের ওপর ও মৃত প্রাণীর সন্ধানে ওড়াওড়ি করত বিশেষ শ্রেণির এসব পাখি।

বিমানবন্দরে ওঠানামা করার সময় কখনোবা উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ঢুকে পাইলটদের জন্য বিপদের কারণ হয়েও উঠতে দেখা গেছে শকুনদের। কিন্তু দুই দশকের বেশি আগে থেকে ভারতে শকুন মারা যেতে থাকে। এর কারণ ছিল অসুস্থ গরুর চিকিৎসায় একধরনের ওষুধের ব্যবহার।

১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি ভারতে শকুনের সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি। তখন থেকেই আবার গবাদিপশুর চিকিৎসায় সস্তা নন–স্টেরয়েডাল ব্যথানাশক ‘ডাইক্লোফেনাক’–এর ব্যবহার শুরু হয়।

এতে বিপুলসংখ্যক শকুন কমতে কমতে এসে দাঁড়ায় একরকম শূন্যের কোঠায়। ওই ওষুধে চিকিৎসা করা পশুর মৃতদেহ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর শকুনগুলো মারা যেতে থাকে।

এ ঘটনায় ২০০৬ সালে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। ফলে কিছু এলাকায় শকুন হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা কমে। তবে স্টেট অব ইন্ডিয়া’স বার্ডসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘ মেয়াদে শকুনের অন্তত তিনটি প্রজাতির ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ এ ওষুধের পরোক্ষ বিষক্রিয়ার শিকার হয়।

ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার শুধু শকুন কমে যাওয়ার মধ্যে সীমিত থাকেনি। এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখি কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও নানা সংক্রমণ বেড়ে যায়; যা পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধমিলিয়ন (৫ লাখ) মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখে। এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার সহরচয়িতা ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক ইয়েল ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘শকুনকে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ধরা হয়। কেননা, পরিবেশ থেকে নানা ক্ষতিকর উপাদান ও মৃত পশুর ব্যাকটেরিয়াবাহী দেহাবশেষ অপসারণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শকুন না থাকলে ছড়িয়ে পড়তে পারে রোগবালাই।’



ইয়েল ফ্রাঙ্ক আরো বলেন, ‘মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় শকুনের ভূমিকা বন্য প্রাণী রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। শুধু আকর্ষণীয় ও আদুরে প্রাণীই যে রক্ষা করা প্রয়োজন, তা নয়; বরং সব বন্য প্রাণীই রক্ষা করতে হবে। আমাদের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় সব প্রাণীরই ভূমিকা রয়েছে, যা আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।’

ইয়েল ফ্রাঙ্ক ও গবেষণার অপর সহরচয়িতা অনন্ত সুদর্শন ভারতের একসময়ের শকুনসমৃদ্ধ বিভিন্ন জেলায় শকুন কমে যাওয়ার আগে ও পরে মানুষের মৃত্যুর হারের তুলনামূলক চিত্র দেখেছেন। জলাতঙ্কের টিকা বিক্রি, খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা ও সরবরাহ করা পানিতে প্যাথোজেনের উপস্থিতির মাত্রাও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছেন তাঁরা।

এই গবেষকেরা দেখেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় প্রদাহবিরোধী বা ব্যথানাশক ওষুধের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পর শকুনের সংখ্যা কমে গেছে এবং একসময়ের শকুনসমৃদ্ধ জেলাগুলোয় মানুষের মৃত্যুর হার ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে।

ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার শুধু শকুন কমে যাওয়ার মধ্যে সীমিত থাকেনি। এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখি কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও নানা সংক্রমণ বেড়ে যায়, যা ৫ বছরে প্রায় অর্ধমিলিয়ন মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখে।

গবেষকেরা আরও দেখেন, শকুনের সংখ্যা কমে মানুষের মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার এমন প্রবণতা বেশি ছিল শহরাঞ্চলে। সেখানে গবাদিপশু সংখ্যায় ছিল অনেক। ছিল মৃত পশুর ভাগাড়ও।

এ গবেষকদের ধারণা, ভারতে ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে শকুন কমে যাওয়ায় ওই সময় প্রতিবছর অতিরিক্ত ১ লাখ করে মানুষের মৃত্যু হয়। অকালমৃত্যুর এসব ঘটনার ফলাফল হিসেবে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে ৬৯ বিলিয়ন (৬ হাজার ৯০০ কোটি) ডলারের বেশি।

গবেষণা বলছে, রোগবালাই ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবছর বাড়তি এত মানুষ মারা গেছেন। অথচ শকুন না কমলে এসব রোগের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব হতো ও পরিবেশ থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করা যেত। উদাহরণ হিসেবে, শকুন কমে যাওয়ায় খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায় ও মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক ছড়ায়।

ওই সময় জলাতঙ্কের টিকা বিক্রি বেড়ে যায়, কিন্তু এর সরবরাহ যথেষ্ট ছিল না। মৃত পশুর দেহাবশেষ অপসারণে শকুন যতটা ভূমিকা রাখে, কুকুর ততটা রাখে না। এতে সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে সরবরাহ করা খাওয়ার পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাকটেরিয়া ও প্যাথজেন।

স্টেট অব ইন্ডিয়া’স বার্ডসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে যেসব শকুন রয়েছে, তারা মূলত গবাদিপশুর চেয়ে সংরক্ষিত এলাকার বন্য প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে টিকে আছে।

অব্যাহতভাব শকুন কমতে থাকার বিষয়টি এই পাখির বিরুদ্ধে হুমকি চলমান থাকাকে ইঙ্গিত করছে। একই সঙ্গে তা মানবস্বাস্থ্যের ওপর শকুন কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও বাড়িয়ে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ এখনো শকুনের জন্য এক বড় হুমকি। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত গবাদিপশুর মৃতদেহ কমে যাওয়া, খ্যাপাটে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ওই সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত