দুঃসাধ্যই সাধ্য করে দেখিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আকাশ।অভিনব পদ্ধতিতে আকাশ ইতালীর বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘ল্যাম্বোরগিনি’র আদলে স্বল্প মূল্যে তৈরি করেছেন ব্যাটারিচালিত পরিবেশবান্ধব গাড়িটি।
আকাশ জানান, গাড়িটিতে প্রায় ৫টি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে সময় নেবে ৫ ঘণ্টা। আর রাস্তায় নামলে দুইজন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে গাড়িটি। পুরো গাড়িটি এই অবস্থায় দাঁড় করাতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে আসলে তিন লাখ টাকাতেও বানানোও যাবে।
অটোরিকশা ওয়ার্কশপে আকাশের তৈরি গাড়িটি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। গাড়িটি তৈরি প্রসঙ্গে আকাশ বলেন, ছোট বেলা থেকেই নিজের তৈরি গাড়িতে চড়ার শখ ছিল তাঁর। অটোরিকশা নির্মাণের গ্যারেজ থেকে বডি তৈরি করতে করতে দেড় বছর আগে তিনি শুরু করে গাড়ি তৈরির। ক্যালেন্ডারের পাতায় ইতালির বিখ্যাত ল্যাম্বোরগিনির মডেল দেখেই সেটি অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকেন তিনি।
বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ করে টাকা নিয়েই অল্প অল্প করে কাজ শুরু করেন আকাশ। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে ও জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করেন। ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে তৈরি করেন তিনি।
আকাশ আহমেদ বলেন, গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। বাকি সব কিছু আমার নিজের হাতে তৈরি। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট, ব্যাকলাইট, গিয়ার, এসবও আমার নিজের হাতে তৈরি। যা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় আজ সেটি পূর্ণাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে।
গত ১৮ জুন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা ডিসির কার্যালয়ে নিয়ে আসেন আকাশকে। বিষয়টি ডিসিকে জানানো হলে স্ত্রীকে নিয়ে নিচে নেমে আসেন। তিনি আকাশের তৈরি গাড়িটি দেখেন। এ সময় স্ত্রীসহ গাড়িটিতে বসে কার্যালয় ও আদালত প্রাঙ্গণ ঘুরে আসেন ডিসি।
জেলা প্রশাসক বলেন, নারায়ণগঞ্জে এমন প্রতিভাবান ছেলের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। আমার মনে পড়ছে বাংলাদেশের সড়ক ব্যাবস্থাপনায় থ্রি হুইলার নিয়ে অনেক কথা হয়। পাশাপাশি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়।আমরা যদি আকাশের ব্যাটারিচালিত গাড়িটিকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারি তাহলে সড়কে আমুল পরিবর্তন আসবে বলে আমার বিশ্বাস। তখন দেখা যাবে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের পরিবর্তে এরকম চার চাকার গাড়ি রাস্তায় চলছে।
গাড়িটি বাজারজাত করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রসঙ্গে ডিসি বলেন, আমি সরকারের থেকে পৃষ্ঠপোষকতা এনে দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করবো। গাড়িটির ছবিসহ লিখিত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠাবো। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। আমার মনে হয় এই তিনটি স্থানে প্রতিবেদন পাঠানোর পর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সড়কে যেসব গাড়ি চলে তার অধিকাংশই পরিবেশবান্ধব হয় না। সাধারণত পরিবেশবান্ধব গাড়ির প্রতি সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। তাই আমি মনে করি সরকারের সুদৃষ্টি সে অচিরেই লাভ করবে এবং এর মাধ্যমে গাড়ির জগতে নতুন দিগন্তে উন্নীত হতে পারবে বাংলাদেশে।