সাতটি বড় বড় পাহাড় আর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা গঠিত আধুনিক শহর লিসবন। আর তাই এ শহর অনেকের কাছে সেভেন হিল সিটি নামেও পেয়েছে পরিচিত।
লিসবন শহর পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী।শহরটি আটলান্টিক মহাসাগর ও টাগুস নদীর র্তীরে অবস্থিত। পর্তুগিজদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তারা একটা সময় অর্ধেকের বেশি পৃথিবী শাসন করেছে। এশিয়া থেকে আফ্রিকা এবং সুদূর আমেরিকা পর্যন্ত তাদের শাসন বিস্তৃত ছিল। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিল এই পর্তুগিজরা।
পর্তুগালের আলগ্রাভ ও আ্যলেনত্যজু সহ অনেক এলাকা সপ্তম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাই কম বেশি লিসবন ও পর্তুগালের সব জায়গায় মুসলিম নিদর্শন ও বিভিন্ন ইসলামী নাম দেখতে পাওয়া য়ায়।
পর্তুগিজ নাবিক ও আবিষ্কারক ভাসকো দা গামা ১৪৯৭ সালের জুন মাসে, লিসবনের গা ঘেঁসে বয়ে চলা টাগুস নদী থেকে যাত্রা শুরু করে ১৪৯৮ সালে প্রথম বারের মত দুর্যোগপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়া যাওয়ার পথ আবিষ্কার করেছিল। তার সে আবিষ্কার পর্তুগিজদের জন্য বিশাল সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছিল।
লিসবনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হলো গ্রাসায় অবস্থিত, যেখান থেকে পুরো লিসবন ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর হলো এটি, ইতিহাস বলে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের পরে লিসবনের অবস্থান। যাহা ইতালির রোম শহরের ও আগে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে এই শহরে ৬ লাখের ও বেশি মানুষের বসবাস এবং এটি একটি মাল্টি কালচ্যারাল শহর যেখানে বিশ্বের ৯৭টির বেশি দেশের মানুষ বসবাস করে।খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০০ বছর আগে প্রথম এখানে জনবসতি গড়ে উঠেছিল তাই এই শহরে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ১৫ টির বেশি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান রয়েছে পর্তুগালে তাই প্রতি বছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ পর্তুগাল ভ্রমণ করে এবং এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আসে এই নগরীর প্রাচীন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
এখানে অনেক ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাছাড়া রাজধানী লিসবন শহরে সমুদ্র সৈকত রয়েছে।লিসবন সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ২০ কি.মি. দূরে সৈকতের অবস্থান যা মাত্র ১৫-২০ মিনিটে আসা যাওয়া করা যায় বাস, ট্রেন বা কারে।আলফামা লিসবনের অন্যতম প্রাচীন ও পুরাতন এলাকা যেটি ১৭৫৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ও জলোচ্ছ্বাসের পরেও টিকে রয়েছে অক্ষত অবস্থায়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমায় সরু রাস্তা ও প্রাচীন জনপদ দেখার উদ্দেশ্যে।
লিসবনের অন্যতম দর্শনীয় জায়গা জেরোমাস মনস্ট্রার।এটি আবিষ্কারক ভাস্কো দ্য গামার সমাধিস্থল। এটি একটি বৃহৎ গির্জা বা মঠ এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন মট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতকে নির্মিত এই সমাধিস্থলটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।ক্যাসটোলো ডে সাও জর্জ লিসবনের প্রাণকেন্দ্রে, পাহাড়ের পাদদেশে আলফামার পাশে অবস্থিত। এই রাজ প্রাসাদটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।এর মধ্যে অবস্থিত যাদুঘর এবং প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, সুউচ্চ দেয়াল ও পর্যবেক্ষন টাওয়ার নিমিষেই যে কারো মন ভাল করে দিতে পারে। এখান থেকে লিসবনের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। খুব কাছ থেকে টাগুস নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সামান্য দূরে চোখ ফেললে আটলান্টিকের নীল জলরাশির দেখা মেলবে।
লিসবন ওশেনারিয়াম হলো ইউরোপের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকোরিয়াম। ১৯৯৮ সালের লিসবন এক্সপোতে এটির উদ্বোধন হয়েছিল। রহস্যময় নানা সামুদ্রিক প্রাণীর এক কৃত্রিম অভয়ারণ্য, বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও অ্যান্টার্টিক মহাসাগরের জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি অ্যাকোরিয়াম। পাশে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ সেতু ভাস্কো দ্য গামা ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং মনোরম কেবল কার।