31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১১:৩৪ | ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না: পরিবেশ ও অধিকারকর্মী
পরিবেশ বিশ্লেষন

লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না: পরিবেশ ও অধিকারকর্মী

লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না: পরিবেশ ও অধিকারকর্মী

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১৮ জন পরিবেশ ও অধিকারকর্মী। বুধবার একনেকের সভায় অনুমোদন দেওয়া ওই প্রকল্প থেকে সরে আসতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের পরিবেশ ও মানবাধিকারকর্মীরা এই বন সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে বারবার অবহিত করলেও সেসব উদ্বেগে কর্ণপাত করা হয়নি।

একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগে দেশের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সরকারের উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে।



বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুলতানা কামাল, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ফাদার জোসেফ গোমেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ¥আলী, প্রকৃতিবিষয়ক সংস্থা তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সুরমা ওয়াটারকিপার আবদুল করিম এবং কুবরাজ আন্তোপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং।

এই পরিবেশ ও অধিকারকর্মীরা বলেছেন, ১৯২০ সালে তৎকালীন সরকার এ বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে।

লাঠিটিলা বনে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো শূকর, ক্ষুদ্র লেজযুক্ত উদবিড়াল, উল্টো লেজি বানরসহ বিপন্নপ্রায়-বিরল ২০৯ প্রজাতির বন্য প্রাণী; ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এ বন দেশের ছয়টি আন্তসীমান্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশে ভূমিসংকটের ফলে চাহিদার তুলনায় বনভূমির পরিমাণ যথেষ্ট কম।

এমন অবস্থায় প্রাকৃতিক বনকে সুরক্ষা দেওয়া ও দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে লাঠিটিলায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রাকৃতিক বন রক্ষায় সরকারের চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

পরিবেশকর্মীরা বলেন, এর আগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-১ ও গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-২ নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুই পার্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে বন বিভাগের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

দায়িত্ব অবহেলা ও চরম স্বেচ্ছাচারিতায় একের পর এক বন্য প্রাণী মৃত্যুতে নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। দুটি সাফারি পার্ক পরিচালনায় ব্যর্থতা ও পরিবেশের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও লাঠিটিলায় আরেকটি সাফারি পার্ক নির্মাণের চেষ্টা অনভিপ্রেত।



বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে লাঠিটিলা সাফারি পার্ক নির্মাণে সরকারের সিদ্ধান্তে দেশের নাগরিকেরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চল হওয়ার পরও লাঠিটিলায় এত দিন বিভিন্নভাবে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে।

বনে বসবাসকারীদের জন্য নানা ধরনের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, যা বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। এ অবস্থায় বন বিভাগ থেকে এসব বসতি উচ্ছেদ করে বনের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা উচিত ছিল।

১৮ জন পরিবেশ ও অধিকারকর্মী বিবৃতিতে বলেছেন, প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সাফারি পার্ক তৈরি করে বনটিকে একেবারে আমূলে বদলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা আছে।

পুরো পরিকল্পনা এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা চিন্তা করে শুধু সিলেট অঞ্চল নয়, সারা দেশে পরিবেশসচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্ট (পিএইচআরএফ) প্রশাসনিকভাবে জুড়ি ও বড়লেখা—দুই উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। ২০১৫ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে সংরক্ষিত বনটির আয়তন ৮০ বর্গকিলোমিটার।

এর মধ্যে লাঠিটিলার আয়তনই ২০ বর্গকিলোমিটার। এমন অবস্থায় সাফারি পার্কের নামে বন ধ্বংসের আয়োজনে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের আর্থিক লাভ ছাড়া দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না।

প্রতিবাদে বলা হয়, ‘সাফারি পার্ক নির্মাণের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই দেশের অন্যান্য নাগরিকের উদ্বেগের সঙ্গে আমরাও লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্পের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করছি।

সংশ্লিষ্ট মানুষের মতামত উপেক্ষা করে লাঠিটিলা ধ্বংসের এই প্রকল্প এগিয়ে নিলে তা বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেবে বলে আমরা মনে করি।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত