রাজশাহীর চাষিরা আমন ধানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়াকে মাথায় রেখে পোকার আক্রমণ রোধে আগে থেকেই কৃষকদের মাঝে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করাসহ ঢাকা থেকে একটি বিশেষ দল বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এবার রাজশাহীতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৭৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনেক কৃষককে এবার দেরিতে ধান লাগাতে হয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করেই এবার পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে তারা আগে থেকেই কৃষকদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করাই তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
কৃষকরা বলছেন, এবার আবহাওয়ার কারণে বীজতলা তৈরিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ধান লাগাতে ভালো হয়েছিল। ধান গাছও ভালো ছিল। হঠাৎ করেই পোকার আক্রমণ দেখতে পায় তারা। তবে কীটনাশক প্রয়োগ করাই এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে এখনও পুরোপুরি পোকা দমনও হয়নি। এছাড়া পচনও দেখতে পাচ্ছেন তারা।
রাজশাহী পবা উপজেলার কৃষক নিরাশ আলী জানান, তিনি এবার প্রায় আড়াই বিঘার মতো জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। আবাদ ভালোই ছিল। হঠাৎ করেই পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এরপরই স্থানীয় ডিলারের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করি। এখন অনেকটায় কমেছে। কিন্তু পুরোপুরি দমন হয়নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার সাত্তার আলী জানান, তিনি প্রায় দুই বিঘার মতো জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। আবাদ এখন অনেকটায় ভালো আছে। কিছুদিন আগে পোকা দেখা দিয়েছিল। কীটনাশক প্রায়োগ করাই ভালো আছে। তবে এখনও তিনি শঙ্কা মুক্ত নন। কেননা পাশের জমিতে এখনও পোকা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া তার এক বিঘা মতো জমি কিছুটা উঁচু। শিষ না ফুটতেই ইঁদুরের আক্রমণ দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, তার উপজেলাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে আগে থেকেই তারা সর্তক আছেন। এবিষয়ে তিনি মাঠকর্মীদের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করছেন। পোকা দমনের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো তাদের জানানো হচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত তার উপজেলাতে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল হক জানান, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া খারাপ। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি আবার ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি ধানের আবাদের জন্য ভালো। তবে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় বেশকিছু জায়গায় কৃষদের ধান লাগাতে দেরি হয়েছে। আর আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে রাজশাহীতে বিশেষ করে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলাতে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা আগে থেকেই সর্তক আছেন। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করছেন। পোকা দমনে আলোর ফাঁদ, জমিতে বিলিভাঙ্গা (রোদ খাওয়ানোর বিশেষ পদ্ধতি)সহ কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলছেন। এতে আবাদের তেমন কোওন ক্ষতি হয়নি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন