করোনাভাইরাস মহামারীতেও আমাজান রেইনফরেস্টকে ভুলে থাকবার সুযোগ নেই
দীপক কুন্ডু
ব্রাজিলের রোনডানিয়া রাজ্যের পোর্তো ভেলহোর নিকটে অ্যামাজনের একটি অরণ্য উজাড় করে তৈরীকৃত একটি শূন্য প্লট।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্ট খুব দূরের মনে হতে পারে। তাই বলে আমরা হাত গুটিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকতে পারি না।”বৈশ্বিক উষ্ণতা জনিত বিপদের লাগাম টেনে ধরবার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার” – এ মর্মে বিগত কয়েক দশক ধরে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।
এই শুভ বুদ্ধির বিরুদ্ধে, জীবাশ্ম জ্বালানী (ডিজেল, প্রেট্রোল, অকএটন, খনিজ কয়লা) এর স্বার্থে পরিচালিত চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র মূলক পদক্ষেপ যদি সফল হয় তাহলে খুব নিকট ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে একটি মহাবিপর্যয় ঘটবে, যার পুরো মাত্রা নির্ধারণ করা এখনও সম্ভব নয়।
ব্যাংকাররা এখন দাবী করছেন যে একটি “সামগ্রীক অর্থনৈতিক পরিবর্তন” আনতে হলে অবশ্যই বর্তমান মহামারীর গতিবিধি অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে যে চরম বিপর্যয় ঘটবে তা এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব।
কেন পুড়ছে পৃথিবীর ‘ফুসফুস’ আমাজন ? ভয়ংকর দাবনলে পুড়ছে আমাজন অরণ্য, নেপথ্যে কি ?
ব্রাজিলের চেয়ে বড় বিপদ আর কোথাও নেই। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি বৈশ্বিক র্কাবণ নির্গমনের মাত্র ২.২৫% তৈরি করে (সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্ররে জনসংখ্যা ব্রাজিল হতে ৫০% বেশি এবং যুক্তরাষ্ট্র জনসংখ্যার সাতগুণ বেশি পরিমাণে র্কাবণ নিঃসরণ করে)।
কিন্তু বনভূমি উজাড় ত্বরান্বিত করার ফলে বৈশ্বিক উত্তাপ দূরীভূত করার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত ব্রাজিল, যার সীমানায় অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের ৬০% রয়েছে।
এর কারণ আমাজন গ্রহের বৃহত্তম স্থলীয় কার্বন গ্রহণকারী এবং পানি চক্রে (Water Cycle) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, একই সাথে এটি স্থলভূমির অন্য যে কোন জায়গার চেয়ে বেশি প্রজাতির আবাস স্থলও বটে।
২৮ বছর আগে, ১৯৯২ সালের জুন মাসে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরোতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কাঠামো সম্মেলন (The UN framework convention on climate change- UNFCCC) অনুষ্ঠতি হয় এবং ঐ সম্মলেনরে মূল উদ্দশ্যে ছিল বিশ্বে গ্রীণ হাউজ গ্যাস যথা র্কাবন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো র্কাবণ এর নিঃসরণ বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে গ্রীণ হাউজ নর্গিমন বন্ধে ১৯৯৭ সালে বিশ্বেরে ১৯৭ টি দেশ কিয়োটো প্রটোকল (Kyoto Protocol) স্বাক্ষর করে।
অথচ সে ব্রাজলিইে ১৮ মাস আগে ক্ষমতায় এসে উগ্র-ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো’র সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে, রেইনফরেস্ট রক্ষার লক্ষ্যে পরিবেশবাদী এবং আদিবাসী কর্মীদের বছরের পর বছর ধরে সৃষ্ট কর্মকান্ড নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংস করেছে এবং এর পরিবর্তে অবৈধ কাঠুরে, খনি ব্যবসায়ী এবং গবাদি পশু খামারীদের ক্রমাগতভাবে বন ধ্বংসের আগুনের শিখায় হাওয়া দিয়েছে।
২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বন উজাড় ৯,৮০০ বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছেছে এবং গবেষণায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে রেইন ফরেস্টটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তের দিকে যাচ্ছে যা ২০৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কার্বন গ্রহণকারীর পরিবর্তে কার্বণ নিঃসরণকারী হয়ে উঠবে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে করোনাভাইরাস মহামারী এই ধ্বংস যজ্ঞের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
কোভিড -১৯ করোনাভাইরাস এ মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে জুন মাসের ৫ তারিখে ব্রাজিল ইতালিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ দেশে (আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পিছনে) পরিণত হয়।
ঐ দিনের মৃত্যুর রেকর্ড ১,৭৪৪৩ জন এবং নিহতের মোট সংখ্যা ৩৪,০০০ এরও বেশি। এখন ব্রাজিল মৃত্যু ও আক্রান্ত উভয় দিকে দিয়ে বিশ্বে ২য় স্থানে। WORLDOMETER এর তথ্যমতে গত ১৮ জুন ২০২০ তারিখে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতকের কাছাকাছি।
এই সংখ্যা এখন মিঃ বলসোনারো সরকারের জনস্বাস্থ্যের উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এই মহামারী চলাকালীন সময়ে আমাজন অঞ্চলের মারানহাও প্রদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী গত কয়েক মাসে পাঁচটি হত্যাকান্ডের শিকারসহ ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং রোগের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্ট খুব দূরের মনে হতে পারে। তাই বলে আমরা হাত গুটিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকতে পারি না। ব্রাজিলের সরকার এবং মাংস শিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে এমন প্রতিটি সম্ভাব্য হাতিয়ারকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
গত সপ্তাহে গার্ডিয়ান পত্রিকা রিপোর্ট করেছে যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলো বন উজাড়ের সাথে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি (১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড) ঋণ প্রদান করেছে।
ব্ল্যাকরক (BlackRock)এর মতো, মার্কিন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এখন চাপের মুখে ফেলতে অ্যামাজন রেইনফরেস্ট সংরক্ষণের জন্য একটি বিশাল আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
ব্রাজিলের জিডিপির এক -পঞ্চমাংশেরও বেশি আসে কৃষি-ব্যবসা থেকে। যদি গবাদি পশু শিল্পকে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে সেখানে অবশ্যই প্রণোদনাও থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং জলবায়ু পর্যালোচনাকারীদের কাজ শেষ হয়েছে। জনমতের দ্বারাও এখন কাজ করতে হবে।