রাজধানী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিজয় সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত
আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, মহান বিজয় দিবস, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দিবস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ্র বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ও উদ্ভূদ্ধ হয়ে পাক হানাদারদের বীরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতিকে আজন্ম দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত করে এ দিনে।
আজ এ মহান দিনের সকাল ১১ টায় ১৯৫২ সালের রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির জাতিসত্তা যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, সেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিভিন্ন বয়সী সাইক্লিস্টদের নিয়ে গৌরবময় বিজয় সাইকেল র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দেশের সর্বত্রই সাইকেলের পৃথক লেন স্থাপন, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সর্বত্রই সাইকেল পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির দাবীতে গ্রীণ পেইজের সৌজন্যে গ্রীণ মুভমেন্ট লি: এবং বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট কর্তৃক আয়োজিত তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতনতা ও দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধকরণে উক্ত সাইকেল র্যালী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট এর সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান এবং জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং গ্রীণ পেইজ এর প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মোঃ মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্ব আজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হুমকীর সম্মূখীন। মানুষের সীমাহীণ লোভ লালসা, বড় হতে আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন এবং অত্যাধিক আরাম প্রিয়তা মানুষকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং অত্যাধিক শিল্প উৎপাদনের ফলে শিল্প, রাসায়নিক এবং নতুন ভাবে শুরু হওয়া ইলেকট্রনিক বর্জ্যে দ্বারা পৃথিবীর পরিবেশ আজ মারাত্বক দূষিত হচ্ছে।
শিল্পে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, কৃষিতে এবং জ্বীবাশ্ম জ্বালানী তথা ডিজেল, প্রেট্রোল, অকটেন চালিত মোটর গাড়ী ব্যবহারে দিন দিন বায়ু মন্ডলে গ্রীণ হাউজ গ্যাস (মিথেন, কার্বণ ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি)এর নি:সরণ দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রীণ হাউজ গ্যাস নিঃসরণের কারণে বিশ্ব তাপমাত্রা আজ দ্রুততার সাথে বৃদ্ধির পাচ্ছে। ফলে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, ভূমি ধ্বস, সুনামী, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রাদূর্ভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও তীব্রতর হচ্ছে।
তিনি বলেন বায়ু মন্ডলে যত গ্রীণ হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ঘটছে তার ১৭% আসে জ্বীবাশ্ম জ্বালানী তথা ডিজেল, প্রেট্রোল, অকটেন চালিত মোটর গাড়ী ব্যবহারের কারণে। আর এই জীবাশ্ম জ্বালানী আমদানী করতে হয় আমাদের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে।
অথচ সরকার কর্তৃক সাইকেলের ব্যবহারের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে এর প্রসার ঘটালে জীবাশ্ম জ্বালানী চালিত গাড়ীর ব্যবহার অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, যা কৃষি উৎপাদনে, নাগরিকদের খাদ্য ক্রয়ে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যবহার করা যাবে।
অধিকন্ত সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে দেশের ঝানযট বহুলাংশে হ্রাস পাবে, এতে দেশের কর্মঘন্টা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের দ্রুত উন্নয়ন ঘটবে। ইহা ছাড়াও সাইকেল চালানোর ফলে নাগরিকগণ সুঠাম দেহী ও সুস্বাস্থের অধিকারী হবে, যার ফলে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যয় হ্রাস পাবে, কর্মশক্তির বৃদ্ধি ঘটবে।
এতদ্ব্যতীত সাইকেলে চালানোর ফলে নাগরিকদের যাতায়ত ব্যয় হ্রাস পাবে। আর সবচেয়ে বড় উপকার হবে এতে বায়ু মন্ডলে গ্রীণ হাইজের নিঃসরণ হ্রাস পাবে ও পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।
এতদ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ সকলকে অবহিত করে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত মোটর গাড়ির পরিবর্তে জ্বালানি বিহীন সাইকেল এর ব্যবহার প্রসারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সাইকেল চালোনোর সুযো-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী বাঙ্গালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ্র বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই ১৯৫৪ সাল হতে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাঙ্গালী জাতির জন্য তাঁর লড়াকু ঘটনাসমূহ বর্ণনাসহ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর কর্মতৎপরতা ও অবদানের বিষয়টি সকলকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান এজেন্ডা। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন যা তাঁর বক্তৃতা, বিবৃতি ও কর্মকান্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে।
তিনি বলেন আমি সাইকেলের ব্যবহারের প্রতি একাত্বতা ঘোষণা করছি এবং ঢাকা শহরে আলাদা সাইকেল লেন বাস্তবায়ন ও সর্বস্থানে সাইকেল পার্কিং স্থাপনের জন্য সিটি কর্পারেশনের মেয়রদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা তার বক্তব্যে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু এবং বাঙ্গালী জাতির সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রতি সন্মাণ প্রদর্শণ করেন এবং বলেন আজ বিশ্ব পরিবেশ যে চরম আকার ধারণ করেছে তা দূষণমুক্ত করে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজে আমাদেরকে আবার একটা যুদ্ধ শুরু করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মহোদয় সম্প্রতি মিশরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন (COP 27) এ জাতি সংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর “ বিশ্ব এখন জলবায়ু-নরকের মহাসড়কে রয়েছে” উদ্ধৃত করে বলেন আমাদেরকে আবশ্যই পরিবেশ দূষণমুক্ত করে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তণ রোধে মনোযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন অসময়ে বন্যা, ঘূর্ণীঝড় যে হচ্ছে তা হলো জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে। তিনি বলেন যে আজ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ চলে যাচ্ছে শীতের কোন দেখা নাই, অথচ অতীতে এ সময়ে শীতের কাপড় ছাড়া এখানে কেহ দাঁড়িয়ে থাকার কোন সুযোগ ছিল না। এর থেকেই সহজেই অনুমিত যে পৃথিবীর তাপমাত্রা কত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুতরা্ং আমাদেরকে অবশ্যই জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে কাজ করে যেতে হবে। তিনি সাইকেলের ব্যবহার প্রসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য থাকা কালে একটি পৃথক সাইকেললেন স্থাপনসহ সাইকেল চালানোর সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন সাইকেল শুধু পরিবেশ সুরক্ষা দেয় না, সাইকেল সুস্বাস্থ্যও গঠন করে।
একজন সাইকেল চালক ডায়াবেটিস হতে শুরু করে বহু রোগের আক্রান্ত হতে রক্ষা পায়। তাই সাইকেল প্রসারে যে কোন অনুষ্ঠান/র্যালীতে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ভাবে অংশগ্রহনের কথা জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট এর সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ উপস্থিত সর্বস্তরের সূধীবৃন্দ এবং অংশগ্রহনকারী সাইক্লিস্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাইকেল ব্যবহার প্রসারে সাইকেল র্যালীসহ এতদসংক্রান্ত আন্দোলন দিন দিন স্থিমিত হয়ে যাচ্ছে বলে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ আন্দোলনেকে বেগবান করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উক্ত সাইকেল র্যালীতে আরো উপস্থিত ছিলেন মিরপুর স্টান্ট বয়েজের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী রিমন, বিশিষ্ট লেখক ও ট্যুরিস্ট গবেষক রফিকুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ সাইক্লিংএর সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব নাজিমু উদ্দিন নাজিম, বিডি ক্লিক এর উপদেষ্টার সদস্য মোঃ মুসা, ধানমন্ডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের সভাপতি তাহাজ্জত হোসেন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদুল মাহমুদ শহীদুল্লা প্রমূখ। সাবেকুন নাহার অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী ও অভিনেত্রী নাহার কনা ও তার দলের শিল্পীসহ প্রমূখ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা সাইক্লিস্ট নারী পুরুষ সমবেত হয়ে ঐতিহ্য বাহনে রংবেরঙের বেলুন,গায়ে লাল/সবুজ, টি শার্ট,চড়িয়ে গৌরবময় প্রাণের বিজয় সাইকেল র্যালিতে দেখা যায়, হাতে পতাকা নিয়ে, সাইক্লিস্টদের বিজয়ের গান, সমবেত কন্ঠে হাজার মানুষ গেয়ে উঠে
“আমার সোনার বাংলাদেশ সবার চাইতে বেশ” বাদ্য বাজনা আর নৃত্য শিল্পীর পরিবেশনায় সাইক্লিস্টদের বিজয়ের গানের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাবির মনোরম পরিবেশে প্রাণ ভরে সাইকেল চালান বিভিন্ন বয়সীরা, র্যালীতে তিন থেকে চার শত সাইক্লিস্ট অংশ গ্রহন করে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে থেকে দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমী, টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এসে শেষ হবে,পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করে আসছে তাদের কে সার্টিফিকেট প্রদানের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটে।