মোংলা প্রতিনিধি: ঘুর্নিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় প্রস্তুত মোংলা বন্দর ও উপজেলা প্রশাসন, চলছে মাইকিং, আশ্রায় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। ঘুর্নিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলা সমুদ্র ন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস, এজন্য সকালে বন্দরে এলাট-৪ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই ঘোষনার পর পরই থেকে পৌরসভাসহ মোংলা উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাইকিং করছে দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসুচি (সিপিপি) সেচ্ছাসেবকের লোকজন। এর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২টি ইউনিট বিভিন্ন এলাকায় লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছেন। নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড ও পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থায়। ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত জানার পর সামান্য কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই অপেক্ষা করছে, ঘুর্নিঝড় আঘাত হানার পর্যায়ের জন্য।
বন্দর সুত্রে জানায়,শনিবার সকাল থেকে মোংলা বন্দর শহরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বাতাসের তিব্রতা তেমন দেখা যায়নী। বন্দরের অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাই কাজ বন্ধ রয়েছে। ১০ নম্বর বিপদ সংকেত হওয়ায় পশুর নদী ও মোংলা নদীতে সকল নৌযান নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শ্রক্রবার রাত থেকে বন্দরে বিশেষ সতর্কতা এলাট-৪ এখনও বলবত আছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রায় যাওয়ার জন্য সিপিপি, পৌরসভা ও উপজেলা প্রসাশন মাইকিং করে সবাইকে আশ্রায় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করে কিন্ত বেশীরভাগ লোকই আশ্রায় কেন্দ্রে যেতে চায়নী। শহরে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্ত বাতাসের তিব্রতা না দেখায় আশ্রায় কেন্দ্রে যাচ্ছেনা মানুষ। তবে উপজেলার পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়নের ৭৮টি আশ্রায় কেন্দ্র খুলে রাখা হয়েছে এবং সকল এলাকায় পাকা স্থাপনা ও স্কুল,কলেজ, মাদ্রসার ভবনগুলো মানুষের আশ্রায়ের জন্য প্রস্তুত রখেছে উপজেলা প্রসাশন। বাজারের শুকনা খাবার চিড়া-মুড়ি, গুড়, মোমবাতী ও বিশুদ্ধ পানী ব্যাবসায়ীদের মজুদ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তা। এদিকে ঘুর্নিঝড়ের কারনে উপকুলীয় পশুর নদীর পাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। ঘুর্নিঝড় বুলবুল‘র প্রভাবে সাগরে উত্তল রয়েছে। এর ফলে নদী ও খালে অবস্থান নেয়া মাছধরা ট্রলার ও নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও দুবলার চরাঞ্চলে শুটকি আহরনের জন্য যাওয়া প্রায় ১০ হাজারেরও বেশী জেলেকে মাছ ধরা ট্রলারসহ সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে। ট্রলারে থাকা জেলেরা জানান, দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া আর ঘুর্নিঝড় বুলবুল‘র খবর পেয়ে তরিঘরি করে চলে এসেছে। তবে এখনও অনেক জেলে সাগরে রয়েছে। বঙ্গপসাগর থেকে মোংলায় ইচ্ছে করলেই চলে আসা যায় না। আসতে প্রায় ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে বলে জানান ফিড়ে আসা জেলেরা। এদিকে ঘুর্নিঝড়ের কারনে উপকুলীয় পশুর নদীর পাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। সারারাত না ঘুমিয়ে শিশুসন্তানসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘুর্নিঝড়ের আতংকে রয়েছিল তারা। কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বন বিভাগের বন রক্ষিরা সুন্দরবনের সকল ক্যাম্প অফিস প্রস্তুত রেখেছে বলে জানায় বন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিন কবির। এ অঞ্চলের লোকজনের জান-মাল রক্ষায় সর্বক্ষনিক প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা। তাদের কন্টোল রুম থেকে ঘুর্নিঝড়েরর খবরা-খবর সর্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন ও সকলের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
দূর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসুচির মোংলা উপজেলা সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত জানার পর থেকে আমদের উপজেলায় ৯৯০ জন সেচ্ছাসেবক সবাই ম্যাগাফোনের মাধ্যমে প্রচার, হ্যান্ড সাইরেন বাজিয়ে মহাবিপদ সংকেতের বার্তা পৌছিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে, যাতে মানুষ দ্রæত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলে দেয়া হয়েছে।
মোংরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এহতেসামুল হক বলেণ, ঘুর্নিঝড়ের প্রভাব মানুষকে জানিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আমাদের ৩টি টিম বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে। এছাড়া উপজেলায় ৫টি টিম প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক প্রস্তত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি খাবারের আরও প্যাকেট তৈরির ব্যবস্থা চলছে। দূর্যোগের সময় চিড়া যেহেতু বেশি প্রয়োজন হয়, তাই আমরা বাজারে কয়েকটি ব্যাবসায়ীকে চিড়া ও গুড় মজুদ রাখতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে তারা আমাদেরকে চিড়া সরবরাহ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও প্রশাসন ও সিপিপির একাধিক টিম উপজেলার দূর্যোগের অধিক ঝুকিপূর্ন স্তানে অবস্থান করছে।