বন্যপ্রাণীরাই জঙ্গলের রক্ষক, মাটির মডেল তৈরি করে বোঝাল শিশুরা, উদ্যোক্তা ‘শের’
ভারতীয় অংশের সুন্দরবন সংবাদ: মানুষ বনাম বন্যপ্রাণী (Man Vs Wild)- এই দ্বন্দ্ব চিরকালের। প্রাচীন সময়ে মানুষের সংখ্যা কম থাকায় দন্দ্ব থাকলেও তা তেমন প্রভাব না পড়লেও সভ্যতা যত এগিয়েছে এই দ্বন্দ্বও ততই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু উলটোদিকে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ মানুষ আর বন্যপ্রাণীর সহাবস্থানের দিকটিও তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং পাশে দাড়িয়েছে প্রানীকূলের।
ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা ‘শের’ (SHER) এদের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল এলাকা লাগোয়া বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে সংস্থার সদস্যরা এই সহাবস্থানের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন। শুধু তা ই নয়, পরিবেশ সুন্দর রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা কাজে উৎসাহও দেওয়া হয়।
এবার তেমনই এক অভিনব উদ্যোগ নিল ‘শের’। হুগলির (Hooghly) নালিকুলে মাটির মডেল দিয়ে মানুষের সঙ্গে বাঘ, হাতিদের বন্ধুত্বের বার্তা দিল ছোটরা। শুধু ইন্ডিয়া নয় গোটা বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি প্রেমীদের ভিতর দারুণ সাড়া ফেলল এই ফেস্টিভ্যাল।
কেউ বানিয়েছেন মাটির হাতি, কারও হাতে একতাল মাটি দিয়ে অবয়ব পেয়েছে কুমির কিংবা বাঘ। কেউ বা রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছে জঙ্গলের ছবি। সকলের বয়স সাত থেকে চোদ্দর মধ্যে। কেউ বা তার চেয়েও কমবয়সি। সেই ছোটরাই নিজেদের হাতে তৈরি করেছে এসব মাটির মডেল।
আর তাদের কাজ এক জায়গায় এনে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে ‘শের’। কারও কারও হাতে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে জঙ্গল-লোকালয়ের মেলবন্ধন। আরও উল্লেখযোগ্য, একেবারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছে এসব মডেল, ছবি।
এমনকী কৃত্রিম রংও ব্যবহার করেনি কেউ। জবাফুল, গাঁদাফুল, গাছের পাতা ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে খাঁটি রং। তা দিয়েই সাদা পাতায় জঙ্গলের ছবি এঁকেছে খুদেরা। একথা জানিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার জয়দীপ কুণ্ডু। তাঁর মতে, এভাবে ছোটরা পরিবেশ বান্ধব হতে শিখছে।
‘শের’ সারা বছরই একাধিক সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। করোনা, আমফানের (Amphan) সময়ে বিপর্যস্ত সুন্দরবনবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু সামগ্রী তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘শের’।
বাঘ, হাতিদের মতো বন্যপ্রাণকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে না গিয়ে তাদের রক্ষা করা মানুষের সামাজিক কর্তব্য, এই বার্তা বারবারই নানা কাজের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছে ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা। এবার তাদের সেই কাজে শামিল হল হুগলির ছোটরা।
মাটির মডেল দিয়ে বুঝিয়ে পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে তাদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাওড়া বনবিভাগের দল। শামিল হয়েছেন অধ্যাপক শিলাঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়।