31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১১:১১ | ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
মানুষের মস্তিষ্কে বাড়ছে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি: গবেষণা
পরিবেশ বিশ্লেষন

মানুষের মস্তিষ্কে বাড়ছে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি: গবেষণা

মানুষের মস্তিষ্কে বাড়ছে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি: গবেষণা

মানুষের মস্তিষ্কে বাড়ছে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন মানুষের শরীর ময়নাতদন্তের সময় সংগ্রহ করা মস্তিষ্কের টিস্যু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, আট বছর আগে মস্তিষ্কে যে পরিমাণ অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ছিল, বর্তমানে তা অনেকটা বেশি।

গত মে মাসে অনলাইনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো পিআর-রিভিউ এবং তা কোনো সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়নি। গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল লেখক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন। তিনি যুক্তরাস্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক।

ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, ‘৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রতি গ্রাম টিস্যুতে আমরা ৪ হাজার ৮০০ মাইক্রোগ্রাম (১ গ্রাম সমান ১০ লাখ মাইক্রোগ্রাম) প্লাস্টিক কণা পেয়েছি।

এটি মস্তিষ্কের মোট ওজনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে মস্তিষ্কে যে পরিমাণ প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছিল, ২০২৪ সালে তা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এর অর্থ আজকের দিনে আমাদের মস্তিষ্ক ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ, বাকিটা প্লাস্টিক।’



এই প্লাস্টিক আমাদের মস্তিষ্কের কতটুকু ক্ষতিসাধন করতে পারে, সে সম্পর্কে গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফোয়েবে স্ট্যাপলেটন। এই গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই তাঁর।

ফোয়েবে স্ট্যাপলেটন বলেন, ‘এসব প্লাস্টিক কণা তরল কি না এবং সেগুলো মস্তিষ্কে যাচ্ছে আবার সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

এগুলো স্নায়বিক টিস্যুতে পাওয়া যাচ্ছে কি না বা তা রোগের কারণ হচ্ছে কি না, তা–ও এই গবেষণায় স্পষ্ট করা হয়নি। কীভাবে মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে এসব কণার মিথস্ক্রিয়া ঘটে এবং এগুলো বিষক্রিয়া ঘটায় কি না, তা বুঝতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।’

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়নাতদন্ত করা যেসব মানুষের শরীর থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে, তাঁদের কিডনি ও যকৃতের চেয়ে মস্তিষ্কে ৭ থেকে ৩০ গুণ বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে বোস্টন কলেজের অধ্যাপক ফিলিপ ল্যানড্রিগান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের হৃৎপিণ্ড, ধমনি, ফুসফুস, যকৃৎসহ বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৪ সালে এসে কেউই প্লাস্টিক এড়িয়ে চলতে পারেন না। যেমন প্লাস্টিক নেই, এমন মুঠোফোন বা কম্পিউটার পাওয়া যাবে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর সংস্পর্শে আসা কমানো যেতে পারে, যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ ও বোতল।

যেভাবে শরীরে প্রবেশ করে প্লাস্টিক

এই গবেষণার জন্য ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করা ৯২ জনের মস্তিষ্ক, কিডনি ও যকৃতের টিস্যু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকেরা।

অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, ‘টিস্যুগুলো পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা মনে করছি, আমাদের মস্তিষ্কে খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির প্লাস্টিক প্রবেশ করছে। এগুলোর আকৃতি ১০০ থেকে ২০০ ন্যানোমিটারের (১ ন্যানোমিটার হলো ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ) মতো। আর ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটারের মতো বড় আকৃতির প্লাস্টিকগুলো লিভার ও কিডনিতে প্রবেশ করছে।’

মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকৃতি ৫ মিলিমিটার (পেনসিলের মাথার মুছনির আকৃতি) থেকে ১ ন্যানোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানুষের একটি চুল প্রায় ৮০ হাজার ন্যানোমিটার চওড়া হয়।

এক মিটারের শতকোটি গুণ ছোট আকৃতির প্লাস্টিক কণাকে ন্যানো প্লাস্টিক বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ধরনের প্লাস্টিকের মধ্যে মানব শরীরের জন্য ন্যানো প্লাস্টিক সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। কারণ, অতিক্ষুদ্র এই কণাগুলো একটি কোষের মধ্যেও স্থান করে নিতে পারে।

অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, ‘এই ন্যানো প্লাস্টিকগুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। প্লাস্টিক ফ্যাট বা লিপিড পছন্দ করে। তাই একটি তত্ত্ব হলো, আমরা খাবারের মাধ্যমে যে ফ্যাট গ্রহণ করি, সেগুলোর সঙ্গে ন্যানো প্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর তা মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যায়।’

মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশ ফ্যাট, যা অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি। ওমেগা ৩-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো মস্তিষ্কের কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানব শরীর যেহেতু নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না, তাই এগুলো খাবারের মতো বাহ্যিক উপাদান থেকে শরীর গ্রহণ করে।



বোস্টন কলেজের অধ্যাপক ফিলিপ ল্যানড্রিগান বলেন, ‘বাতাসের মাধ্যমেও কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন আমরা সড়ক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাই, তখন গাড়ির টায়ারের সঙ্গে সড়কের উপরিভাগের ঘর্ষণ হয়।

এতে টায়ারের প্লাস্টিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে বাতাসে মিশে যায়। আর আপনি যদি সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি বসবাস করেন, তাহলে সাগরের পানিতে মিশে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণাও স্রোতের কারণে বাতাসের সঙ্গে মেশে। তাই খাবার ছাড়াও শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।’

কমাতে হবে প্লাস্টিকের ব্যবহার

মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। অধ্যাপক ফিলিপ ল্যানড্রিগান বলেন, প্লাস্টিকের মোড়কে খাবার রাখা এড়ানো কঠিন।

তবে রান্না করার আগে ও মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেওয়ার আগে প্লাস্টিকের মোড়ক থেকে খাবার বের করে নিতে হবে। কারণ, প্লাস্টিক গরম হলে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো খাবারে গিয়ে মেশে।

প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিল। তারা বলছে, লন্ড্রি থেকে কাপড় আনার সময়, তা যেন পলিথিনের ব্যাগে না দেওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।



কফির দোকানে প্লাস্টিকের মগের ব্যবহার কমাতে সঙ্গে করে ধাতব বা কাচের মগ নিয়ে যেতে হবে। অফিসেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে এ ধরনের পাত্র রাখতে হবে।

ল্যানড্রিগান বলেন, ‘আপনি যখন কেনাকাটা করতে যাবেন, তখন সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ নেবেন না। এর বদলে কাপড়ের ব্যাগ বা যে ধরনের ব্যাগ পুনর্ব্যবহার করা যায়, সেগুলো নেবেন।

সম্ভব হলে প্লাস্টিকের পানির বোতল এড়িয়ে চলবেন। খাবার কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করবেন। আর প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করতে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত