মাদারীপুর হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম হর্নমুক্ত জেলা
সম্প্রতি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্রের দেশব্যাপী এক জরিপে সবচেয়ে কম বায়ু দূষণের জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মাদারীপুর। এবার শব্দ দূষণ মুক্তের দিক থেকেও জেলাটিকে সবার আগে আনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, দেশের প্রথম হর্ণমুক্ত ঘোষিত জেলা হতে যাচ্ছে দক্ষিণ বঙ্গের এই প্রবেশদ্বার।
রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শব্দ দূষণ বিষয়ক সচেতনতামূলক এক সভায় জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন একথা জানান। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়াতে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদফতর পরিচালিত ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’।
এর আগে প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় শব্দ দূষণ পরিমাপের অংশ হিসেবে মাদারীপুর জেলার ৫টি স্থানের ২৪ ঘণ্টার শব্দ দূষণের তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।
ক্যাপস প্রধান ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে প্রকল্পটিতে গবেষণা ও জনসচেতনতায় পরিবেশ অধিদফতরকে সহযোগিতা করছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র ও ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিমুল কুমার সাহার সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক এই সভার শুরুতে শব্দ দূষণের কারণ, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি ও করণীয় নিয়ে গবেষণা তথ্যসহ আলোচনা তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। এ সময় তিনি শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদেরও মতামত জানতে চান।
সভায় অংশ নিয়ে জেলায় শব্দ দূষণ বিষয়ে নিজেদের নানান অভিযোগ তুলে ধরেন বিভিন্ন স্তরের জনগণ। সমাধানে করণীয় নিয়ে বেশ পরামর্শ দেন তারা।
এ সময় বিডি ক্লিনের জেলা সমন্বয়ক সোহান বলেন, হাইওয়েতে হর্ণ বাজানো নিষেধ সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বিআরটিএতে লাইসেন্স দেওয়ার সময় এই সংক্রান্ত আইন জানানো হয় না।
এজন্য চালকরা আইনও মানে না। তাদের জানাতে এবং মানাতে হবে। পরিবহন চালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও সচেতনতামূলক সভা করতে হবে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের যে কোনো সচেতনতামূলক কাজে সংগঠনটির সদস্যরাসহ জেলার তরুণ সমাজকর্মীরা জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে বলেও জানান তিনি।
জেলা ইমাম সমিতির নেতা মাওলানা লুৎফর রহমান বলেন, গাড়ির হর্ন যেমন দূষণ করে এছাড়া আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে দূষণ হয়। বিশেষ করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাইকের ব্যবহার এবং ডিজে পার্টি অন্যতম। তাই মাইক বা সাউন্ড বক্সের অযাচিত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এসব যন্ত্রের ভাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠানেও নজরদারি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইমামরা প্রশাসনের পাশে থাকবে বলে জানিয়ে গাড়ির চালকদের নিয়ে বেশি বেশি সেমিনারও করার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, শব্দ শুধু কানের পর্দাই ফাটায় না এটা নিউরণকেও নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা জেলাকে শব্দমুক্ত করার অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের সামনের এলাকাকে শব্দ মুক্ত ঘোষণা করেছি।
আমরা চাই পুরো মাদারীপুর শহর শব্দ দূষণমুক্ত নীরব এলাকার মতো হোক। নো হর্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা চাই দেশের প্রথম হর্নমুক্ত জেলা হোক মাদারীপুর।
তিনি বলেন, হর্নমুক্ত জেলা বাস্তবায়নে আমরা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করবো। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করবো। সমাজকর্মীদের মাঠে নামাবো। কেউ হর্ন বাজালেই তারা ধরে এনে দিবে।
ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে শাস্তি দিবে। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েও মোবাইল কোর্ট চালাবো। প্রয়োজনে হেল্পলাইন রাখবো অভিযোগ দেওয়ার জন্য। আমি চাই মাদারীপুর যেমন বায়ু দূষণের দিক থেকে সবচেয়ে কম দূষণের জেলা হয়েছে, শব্দ দূষণেও তেমন হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রকাশ করা সারাদেশের বায়ু দূষণের জরিপ প্রতিবেদনে দেশের সবচেয়ে কম বায়ু দূষিত এলাকা হিসেবে উঠে আসে মাদারীপুরের নাম। সেই জরিপ প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ দূষিত জেলা বলে চিহ্নিত হয় গাজীপুর জেলা।