অধিক সংখ্যক আমেরিকান আগের তুলনায় বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে সজাগ হয়েছে
মূল: Drew Kann, CNN
বাংলা রূপ: রহমান মাহফুজ ও সাদিয়া নূর পর্শিয়া
একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে যে আমেরিকান যারা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে “আতঙ্কিত” রয়েছে তাদের অনুপাত, গত পাঁচ বছরে তিনগুন বেড়েছে এবং এ সংখ্যা সর্বকালের অধিক। জরিপের তথ্যমতে পূর্বের যেকোন সময় হতে আমেরিকানরা জলবায়ুর পরিবর্তণ বিষয়ে বেশী উদ্বিগ্ন।
প্রতি ১০ জন আমেরিকানের মধ্যে ৬ জন বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। জলবায়ু গবেষকদের কথা ও ভবিষ্যৎবাণী শুনে এবং বিষয়াদি জনসাধারনের উপলব্ধিতে এনে একটি বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন যোগাযোগ সম্পর্কিত ইয়েল প্রোগ্রাম এবং জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন যোগাযোগ কেন্দ্রের দ্বারা জরিপটি পরিচালিত হয়, যা ২০০৮ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সর্ম্পকে আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি একত্র করেছে।
২০১৪ সালের হিসাবে আমেরিকানদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিষটি যারা উড়িয়ে দিয়েছিল সে শ্রেণী যারা প্রায় ১১% থেকে ১২% এবং এ বিষটি নিয়ে যারা সন্দেহহিত ছিল তাদের অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এর পরের বছর গুলোতে এ শ্রেণীর যারা বিশ্বাস করে যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ঘটনা ঘটছে না বা মানুষের দ্বারা সৃষ্ট নয় তাদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে মাত্র ১০% হয়েছে।
একই সময়ে, “উদ্বেগিত” গোষ্ঠী – যে সমস্ত ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এবং যারা তাপ বৃদ্ধিকারী কার্বণ নির্গমনের হ্রাসের পক্ষে তাদের সংখ্যা ৩১% বেড়েছে এবং একই সাথে যারা এর বিরুদ্ধে ছিল তাদের সংখ্যা ৩-১ এরও বেশি বেড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তণ হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকানদের ক্রমবর্ধমান অনুপাত জলবায়ু সংকটকে একটি আসল সংকট হিসাবে দেখাচ্ছে।
অনেক আমেরিকানদের দ্বারা অনুভূত হওয়া এ নতুন তাৎপর্যটি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোর বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, যা ডজন খানেক পরিবেশ বিধিবিধানকে ফিরিয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে অনেকের লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তণ রোধের পক্ষে ছিল।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিগত নির্বাচনে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ এর একটি সমাবেশে কয়লা সমর্থনকারী একটি চিহ্ন দেখিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে ট্রাম্পের প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তণ বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত পূর্বের অনেকগুলো বিধিমালা সহজ করেছে।
জরিপটির নেতৃত্বদানকারী জলবায়ু পরিবর্তণ যোগাযোগের ইয়েল প্রোগ্রামের পরিচালক অ্যান্টনি লিসেরোভিটস বলেছেন, জনগনের মতামতের পরিবর্তণটি এখনও ফেডারেল স্তরের নীতিতে অর্থবহ চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি।
তিনি আরও বলেন, “সামগ্রিক প্রবণতা এদেশের জলবায়ু পরিবর্তণের রাজনৈতিক আবহাওয়ার একটি বড় পরিবর্তণ, তবে ‘উদ্বেগিত’ এর পূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটি এখনও ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। কারণ এটি এখনও তুলনামূলকভাবে অসংগঠিত রয়েছে”।
এ পরিবর্তণের পিছনে কী থাকতে পারে তা নিয়ে লিসেরোভিটস বলেছেন যে, এর বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে।
ল্যান্ডমার্কের জাতিসংঘের প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করা হয়েছে যে, সমুদ্রের স্তর ২১০০ সালের পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এর এক নম্বর কারণ তিনি বলেছেন, “বিজ্ঞান” ।
“বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলি আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে”, তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তণ ২০১৮ এর প্রতিবেদনের বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তণকে দূর্যোগের জানালা হিসাবে দেখিয়েছে যা ১ টি উদাহরন হিসাবে দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আর একটি কারণ হল রাজনৈতিক নেতারা ইস্যু নিয়ে বেশি কথা বলেছেন এবং জরিপে দেখা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তণকে মোকাবেলা করা এখন অনেক গণতান্ত্রিক ভোটারদের পক্ষে শীর্ষস্থানীয় বিষয়।
নিউজ মিডিয়া কভারেজের প্রভাবকেও উপেক্ষা করা যায় না, লেসারোভিটস বলেছেন। তিনি বলেন, “সামগ্রিক গণমাধ্যম যখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন না, তখন বিষয়টি জনসচেতনতা এবং উদ্বেগ থেকে দূরে হয়ে যায়”।
রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা গ্রিন নিউ ডিলের মতো জলবায়ু নীতি নিয়ে বিতর্ক সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়িয়ে তুলবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন
তারপরে, চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা রয়েছে যা অনেক আমেরিকানকে সরাসরি প্রভাবিত করে। জলবায়ু পরিবর্তণ এ ঘটনাগুলি অনেক বেশি সম্ভাবনা এবং আরও ধ্বংসাত্মক করে তুলেছে। লেজারোভিটস বলেছেন যে, সাংবাদিক এবং জনসাধারনের পরিসংখ্যান লোকদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন “আমেরিকানরা এ মুহূর্তে যে ভয়াবহ বিপর্যয়গুলির মুখোমুখি হচ্ছে, লোকেদের বোঝার জন্য এটি ব্যাখ্যা করা দরকার” । তিনি আরও বলেন, ”আমরা যা দেখছি তা হল, যখন অনেক আমেরিকানরা তাদের বাড়ির উঠোনগুলিতে বা টেলিভিশনের পর্দায় এ জিনিসগুলি দেখে, তারা জিজ্ঞাসা শুরু করে, ‘আবহাওয়া নিয়ে কী হচ্ছে?’”
Source: CNN