বেড়েই চলেছে ঢাকার বায়ুদূষণ, বাড়ছে কাশি ও শ্বাসকষ্ট
২ ডিসেম্বর, সোমবার, বেলা ১১টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি (যক্ষ্মা) হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বহির্বিভাগ রোগীর ভিড়ে ঠাসা। একটি চেয়ারও খালি নেই। দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীত আসতেই রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালটিতে। কেউ এসেছেন যক্ষ্মা নিয়ে, কেউ হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ে, কেউ শ্বাসকষ্ট নিয়ে।
টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তার সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে। দূষণ বেড়ে যাওয়ার এ সময়ে রোগীও বাড়ে।
যক্ষ্মা হাসপাতালে যখন রোগীর ভিড়, বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার জানাচ্ছে, বিগত সাত দিন ঢাকার বায়ুমান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর।
শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে থাকে। গতকাল রবিবার রাত পৌনে ৯টায় বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, দ্বিতীয় ভারতের নয়াদিল্লি।
আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ বেশি বাংলাদেশে। এ তালিকায় ১ নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
বাংলাদেশ ও রাজধানী শহর ঢাকায় বায়ুদূষণের সমস্যাটি নতুন নয়। বছর বছর বায়ুর মানের অবনতি হচ্ছে। আইকিউএয়ারের হিসাবে, ২০১৬ সালে ঢাকার বায়ুমান সূচক ছিল ১৫০, যা ২০২৩ সালে ১৭১-এ উঠে যায়। মানে হলো বায়ুদূষণ বেড়েছে।
বায়ুদূষণের উৎসগুলো সবার জানা। ঠিক যেন পশ্চিমবঙ্গের গায়ক কবীর সুমনের গান, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’
বায়ুদূষণের বড় কারণ অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) কমাতে হলে ১৭টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কাজের কাজ অতীতে তেমন কিছু হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, একের পর এক প্রকল্প নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ঢাকার বায়ুমান দিন দিন অবনতির দিকেই গেছে। এখনো নতুন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কথা হচ্ছে, কাজ হচ্ছে না।