করোনাভাইরাস সংকটে চাহিদা থাকায় একবার ব্যবহার উপযোগী (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিকের চায়ের কাপের ব্যবসা এখন জমজমাট। এই কাপ খুলনায় প্রতিদিন সাত থেকে আট লাখ বিক্রি হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্লাস্টিকের চায়ের কাপের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।কিন্তু এই কাপই এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে।পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে অপচনশীল এ কাপ।
প্রতিদিন লাখ লাখ প্লাস্টিকের চায়ের কাপ ব্যবহার শেষে যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে।পরিবেশের হুমকি এই কাপের ব্যবহার দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন খুলনা বিভাগীয় কমিটির সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই প্লাস্টিকের চায়ের কাপ একসময় পরিবেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে।
ক্রেতারা চা খেয়ে এসব কাপ ড্রেনে ফেলছে। এতে ড্রেনে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। এ কাপ উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ’ বিকল্প ব্যবস্থা পেপার (কপি) কাপ ব্যবহার করার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা যেতে পারে বলে এ নাগরিক নেতা মনে করেন।
ওয়ান টাইম চায়ের কাপ পাইকারি বিক্রেতা বড় বাজারের গোবিন্দ স্টোরের মালিক ব্রজেন্দ্রনাথ সানা জানান, তারা খুলনায় সাত-আট জন পাইকারি বিক্রেতা রয়েছেন। এখন প্রতিদিন জনপ্রতি প্রায় এক লাখ পিস কাপ বিক্রি হচ্ছে।
প্লাস্টিক চায়ের কাপের দাম রাখা হচ্ছে একশ পিস ৭৫-৭৮ টাকা। আর পেপার কাপের দাম বেশি। এ জন্য কাপের ব্যবহার কমছে। পেপার কাপ পরিবেশবান্ধব। প্লাস্টিক কাপের দাম কম হওয়ায় ওই কাপ বেশি চলছে। পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বেশি চাহিদা থাকায় প্লাস্টিকের তৈরি চায়ের কাপই বিক্রি করা হয় বলে তিনি জানান।
খালিশপুর পিপলস গেটের নতুন চা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি অন্য পেশায় ছিলেন। করোনার কারণে সে পেশা এখন বন্ধের পথে। এখন লাভজনক পেশা চা বিক্রি করা। তাই পুরনো পেশা ছেড়ে চা বিক্রি শুরু করেছেন। তিনি একশ পিস প্লাস্টিকের কাপ ৯৫ টাকায় আর পেপার কাপ ১১০ টাকায় কিনে আনছেন।
পিপলস গেটের চা বিক্রেতা পলাশ জানান, বর্তমানে প্লাস্টিকের একশ কাপের দাম রাখছে ৮০ টাকা। যা আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা।
দৌলতপুরের খুচরা চায়ের কাপ বিক্রেতা মামুন হোসেন জানান, প্লাস্টিকের কাপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। পেপার কাপ পাইকারি ৯০ পয়সা আর খুচরা এক টাকা করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস।
তবে দাম বেশি হলেও পেপার কাপ পরিবেশের জন্য ভালো। এটা পচনশীল হওয়ায় পরিবেশ দূষিত করে না। তারপরও বেশি লাভের আশায় প্লাস্টিকের চায়ের কাপ বিক্রি করতে হয়। তবে সরকার নিষিদ্ধ করলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের চায়ের কাপ আর বিক্রি করবেন না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুল রহমান মুকুল বলেন, ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের চায়ের কাপ পরিবেশের জন্য নিরাপদ নয়। এটি ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এসব কাপ যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে। পচনশীল না হওয়ায় পরিত্যক্ত এ কাপ ড্রেনের পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা বলেন, ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের চায়ের কাপ এখন চায়ের দোকানে একচ্ছত্র স্থান করে নিয়েছে। করোনা সংকটে এসব কাপ ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার কোনও ব্যবস্থা নেই। ’
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আ. আজিজ বলেন, ‘ড্রেন পরিষ্কার করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলের সঙ্গে এখন নতুন যোগ হয়েছে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের চায়ের কাপ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে এসব কাপের স্তূপ ড্রেনে পাওয়া যাচ্ছে। এসব কাপ নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করছে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন