বিষাক্ত বায়ু দূষণ প্রতিরোধে ভারতীয় রাজধানীতে প্রচার চালানো হচ্ছে
আসন্ন শীতের আগে দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা রোধ করার প্রয়াসে নয়াদিল্লী কর্তৃপক্ষ সোমবার (০৬/১০/২০২০ তারিখ) এ একটি দূষণবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। সাধারণত শীতকালে দিল্লীর আকাশ কুঁয়াশা, ধুলিকণা এবং বিষাক্ত গ্যাসে আবদ্ধ থাকে।
প্রচারে জনগনকে সতর্ক করা হচ্ছে যে নোংরা বায়ু করোনাভাইরাস মহামারীকে আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে।
রাজধানীর শীর্ষ নির্বাচিত নেতা দিল্লীর মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, সরকার ধুলোবিরোধী অভিযান শুরু করবে, কৃষির উচ্ছিষ্ট পোড়ানো ধোঁয়া হ্রাস
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, দীর্ঘায়িত সময়ের মধ্যে উচ্চ বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর নয়াদিল্লিতে বসবাসকারী মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করছে, কারণ বায়ু দূষণ করোনাভাইরাসকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে।
প্রাথমিক গবেষণাগুলি আরও পরামর্শ দিয়েছে যে উচ্চ স্তরের বায়ু দূষণ ভাইরাল সংক্রমণকে আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে।
এটি অনুমান করা হয় যে বায়ু দূষণজনিত রোগের কারণে প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় মারা যান। গত ০৬/১০/২০২০ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে করোনভাইরাসে ২৮৫,১০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে ৫,৫১০ জন মারা গেছে।
বহু ভারতীয় শহরে বায়ু দূষণের দরূণ শ্বাস নিতে মানুষের কষ্ট হয়, তবে নয়াদিল্লি এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। শীতকালগুলোতে দিল্লীতে স্বাস্থ্য সমস্যা নাঁজুক আকার ধারণ করে, যখন শহরটি একটি বিষাক্ত ধোঁয়ায় আবৃত থাকে যা আকাশকে অস্পষ্ট করে তোলে এবং সূর্যের আলোকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দেয়।
দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায় যখন পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর কৃষি অঞ্চলের কৃষকরা ফসল কাটার পরে তাদের জমি পরিষ্কার করতে এবং পরবর্তী ফসলের মৌসুমের জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজে কৃষি উচ্ছিষ্টে (ফসল কাটার পর ফসলের মাঠে ফসলের যে অবশিষ্টাংশ থাকে- খড়ের নীচের অংশ) আগুন ধরিয়ে দেয়।
অ্যান্টি-স্মোগ বন্দুক (Anti-smog gun)এমন একটি ডিভাইস যার দ্বারা বায়ু দূষণ হ্রাস করতে বায়ুমণ্ডলে পরিস্কার জলের ফোঁটা স্প্রে করা হয়।
এটি একটি জলের ট্যাঙ্কের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং একটি গাড়ীতেও আরোহণ করা যায়। ডিভাইসটি বায়ুতে জলের ফোটা ফোটা ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে বায়ুর মধ্যে ভাসমান ধুলো- বালি এবং অন্যান্য বস্তুর কণা জলে ভিজে মাটিতে পড়ে যায়, ফলে বায়ু পরিস্কার হয়।
যানবাহন ও শিল্প হতে কার্বন নির্গমন, ধর্মীয়, সামাজিক বিভিন্ন উৎসব গুলিতে পটকা ফুটানো এবং নির্মাণ কাজের ধুলাবালি শীতে একত্রিত হয়ে তীব্র বায়ু দূষণের সৃষ্টি হয়ে জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক গ্রুপ সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং একজন বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেছেন, রাজধানীর খারাপ বায়ু মানের কারণগুলি সুপরিচিত,এগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ।
তবে তিনি বলেছেন, বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সঠিক ভাবে নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, “এটি রকেট বিজ্ঞান নয়।”
অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন ইহা রকেটের মত হঠাৎ কার্যকর হবে না, বায়ু দূষণ প্রতিরোধে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা হলে ধীরে ধীরে বায়ু দূষণ মুক্ত হবে। ভায়ু দূষণ যেমন একদিনে ঘটেনি, দীর্ঘ দিন, দীর্ঘ কালের দূষণ প্রক্রিয়ার পরিনতি, তেমনি ইহাকে দূষণমূক্ত করতেও সময়ের প্রয়োজন হবে।
বিগত কয়েক বছর যাবত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে প্রায়শই রাস্তায় গাড়ি সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে, বিশাল অ্যান্টি-স্মোগ বন্দুক ব্যবহার করে এবং নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে বায়ু দূষণ হ্রাসের চেষ্টা করা হয়েছে।
কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য সরকারগুলি সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পদক্ষেপগুলি খুব একটা কার্যকর হয়নি। কারণ নয়াদিল্লীর প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ এর কৃষি জমির কৃষি বর্জ্য খোলা আকাশের পোঁড়ানো (agriculture byproduct’s open firing) এর কারনেই দিল্লীর বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বায়ু দূষনের ফলে নয়াদিল্লি বেশ কয়েক দিন ধরে একটি গাঢ় হলুদ রংয়ের ধোঁয়াশায় আবদ্ধ ছিল এবং বায়ু দূষণ রেকর্ড উচ্চ স্তরের উঠেছিল, ফলে স্কুলগুলি বন্ধ করতে হয় , বিমান বন্দর বন্ধ করতে হয়।
এমনকি বায়ু দূষণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যে যার ফলে ঐ সময় নয়াদিল্লীতে চলমান ভারত- বাংলাদেশের টি২০ ম্যাচ এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত- শ্রীলংকা টেস্ট খেলায় মারাত্বক বিঘ্ন ঘটেছিল ।
Source: PHY.ORG, Associated Press (AP), AP World News, AP Business