বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন; চীনের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপের ঘোষণা
-দীপক কুন্ডু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কিছু চীনা নাগরিকের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করবে; চীনা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে নিয়ম কঠোর হচ্ছে
গত ২৯/০৫/২০২০ খ্রি: তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, আমেরিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে।
তিনি পৃথিবী জুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চীনকে দায়ী করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থ এখন বরাদ্দ রয়েছে, তা সরিয়ে অন্যান্য বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া হবে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন এবং এর সাথে চীনের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বেশকিছু চীনা নাগরিককে আমেরিকাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না এবং আমেরিকাতে চীনা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করাসহ একাধিক সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন।
হংকংয়ের উপর চীনের নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেন যে, হংকংয়ের বিষয়ে কড়া নজরদারি বাড়াতে আমেরিকা তার ভ্রমণ নির্দেশনা পুনর্বিন্যাশ করবে।
হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে হাসিখুশি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আগ্রাসী ভাষণে বলেন, “চীনের কাছ থেকে বিশ্বের জবাব প্রয়োজন।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য বিষয়ে কোনও প্রশ্নের উল্লেখ করেনি । কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে এড়িয়ে এটি ঘটে চলেছে, যেমনটি এর আগে কেউ কখনও করেনি, চীনের বিরুদ্ধে নিজের অভিযোগের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, চীন কেবল মেধাস্বত্ব চুরি করেনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে এবং কাজকর্ম নিজেদের করায়ত্ত করেছে। এমনকি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে তার প্রতিশ্রুতি ও লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত রাজনীতিবিদ ও অতীতের প্রেসিডেন্টদের কারণে এর আগে এইসব চুরি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, চীন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে অবৈধভাবে ভূখন্ড দাবি করছে, নৌচলাচল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বাধীনতার উপর হুমকি দিচ্ছে এবং হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশ্বের কাছে দেয়া অঙ্গিকার ভঙ্গ করছে।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে একটি উন্মুক্ত ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়, তবে এই সম্পর্ক অর্জনের জন্য আমাদের জাতীয় স্বার্থকে জোরদারভাবে রক্ষা করা প্রয়োজন।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, চীন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনেক দেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করে আসছে। তিনি বলেন “এই সাধারণ তথ্যগুলিকে উপেক্ষা করা বা ভাসিয়ে দেওয়া যায় না।”
চীন সরকারের দুষ্কর্মের ফলে বিশ্ব এখন যে ভাবে ভুগছে, তা পর্যবেক্ষণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, চীন উহান ভাইরাসের বিষয়টি গোপন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী মহামারির আকার ধারণ করেছে। যার ফলে এক লক্ষেরও বেশি আমেরিকান এবং বিশ্বব্যাপী দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
“চীনা কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে তাদের প্রতিবেদন বাধ্যতামূলকভাবে অবগত করবার বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ যখন এই ভাইরাস প্রথম আবিষ্কার করে তখন তারা গোটা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চাপ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অসংখ্য প্রাণহানি হয়েছে, সারা বিশ্বজুড়ে গভীর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে । তিনি বলেন, বছরে কেবল ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা সত্তেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর চীনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তার তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করছে
“আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সেই সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি, কিন্তু তাঁরা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “যেহেতু তারা আমাদের অনুরোধ সত্তে¡ও, ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাই আমরা আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করছি এবং এই তহবিলগুলি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জরুরী এলাকায় পুনর্বন্টন করছি। তিনি বলেন, ভাইরাস নিয়ে চীন থেকে বিশ্বের জবাব প্রয়োজন ।
“আমাদের অবশ্যই স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কেন চীন উহান থেকে চীনের অন্যান্য অঞ্চলে সংক্রামিত লোকদের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে? এটা অন্য কোথাও গেল না; বেইজিং যেতে পারেনি;, কিন্তু তারা সেই লোকগুলোকে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে অবাধে যাতায়াত করার অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, এর ফলে সৃষ্ট মৃত্যু ও ধ্বংসের ঘটনা অগণিত । “আমাদের কাছে কেবল আমাদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য জবাব থাকতে হবে। এই মহামারীটি আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা গড়ে তোলার, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের চেইনগুলিকে টিকিয়ে রাখার, এবং আমেরিকার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলিকে সুরক্ষার ব্যাপারে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বছরের পর বছর ধরে চীন সরকার আমাদের শিল্পের গোপনীয় বিষয়গুলি চুরি করার জন্য অবৈধ গুপ্তচর পরিচালনা করছে যার মধ্যে অনেক আছে ।
পরবর্তীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে, আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাগুলো আরও ভালভাবে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি একটি ঘোষণা জারি করবেন এবং ”চীন থেকে কতিপয় বিদেশী নাগরিককে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রবেশ স্থগিত রাখতে হবে”।
আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থার অখন্ডতা রক্ষার জন্যও তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে, তিনি আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে, মার্কিন আর্থিক বাজারে তালিকাভুক্ত চীনা সংস্থাগুলির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁর প্রেসিডেনশিয়াল ওয়ার্কিং গ্রুপকে নির্দেশ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ সংস্থাগুলির তাদের ক্লায়েন্টদের সেইসব চীনা সংস্থার অর্থায়নের সাথে জড়িত হতে দেওয়া উচিত নয়- যারা গোপন এবং অযাচিত ঝুঁকির সাথে যুক্ত- যারা যথাযথ নিয়মাবলী অনুসরণ করে না। আমেরিকানরা ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত।”
হংকং এর নিরাপত্তা নিয়ে একতরফা চীনা নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটি যুক্তরাজ্যের সাথে করা বাধ্যতা মূলক পালনীয় ১৯৮৪ সালের বেইজিং চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি হংকংয়ের মৌলিক আইনের সুস্পষ্ট বিধান যা ২৭ বছর যাবৎ চলে আসছে ।
তিনি বলেন, “চীনের সর্বশেষ আগ্রাসনসহ অন্যান্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এই অঞ্চলের স্বাধীনতা খর্ব করেছে, এবং স্পষ্ট করে দিয়েছে যে হংকংয়ের হাতে হস্তান্তরের পর থেকে এই অঞ্চলটিকে আমরা যে বিশেষ সুযোগ দিয়েছি, তা বাস্তবায়নের মত তারা আর যথেষ্ট স্বশাসিত নয়।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে আরও বলনে, “চীন একটি দেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফর্মুলা বদলে দিয়েছে, এক দেশে দুই ব্যবস্থার প্রয়োগ শুরু করেছে। তাই, আমি আমার প্রশাসনকে সেইসব নীতিমালা দূর করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি যা হংকংকে একটি ভিন্ন ও বিশেষ মর্যাদায় অধুষ্টতি করবে।”