বিশ্ব নদী দিবস ২০২২
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, বিশ্ব নদী দিবস। বিশ্বে ২০০৫ সাল হতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের ৪র্থ রবিরার বিশ্ব নদী দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।
২০০৫ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব পানি সম্পদের আরও ভাল যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মধ্যে বৃহত্তর সচেতনতা তৈরিতে ”জীবনের জন্য পানি দশক (Water for Life Decade)” চালু করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কানাডার নদী আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে একটি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রতিবছর বিশ্ব নদী দিবস পালন প্রতিষ্ঠা করে।
বিশ্বে এমন কোন দেশ নাই যেথায় একটিও নদী না্ই। মোট কথা নদী বা জলাশয় ছাড়া বসতি হয়না, দেশ হয়না। মানব জাতির সৃষ্টির লগ্ন হতে মানুষের জীবন যাত্রায় নদীর কাছাকাছি বসতি স্থাপন করা শুরু করে।
নদীর পানি পান করা, গৃহস্থালীয় ব্যবহার, খাদ্য ফলানোর জন্য চাষাবাদ, চলাচল, মৎস আহরণ সবকিছুতে মানব জাতি সৃষ্ট লগ্ন হতে নদীর উপর নির্ভরশীল, মোট কথা মানবজীবন নদীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিশ্ব পানিচক্রে নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবছর সমূদ্র, নদী- জলাশয়, জীবের জীবনপ্রক্রিয়ায় যে পানি বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ ও পর্বতশৃঙ্গে বরফ জমা করে।
মেঘ হতে স্থলভাগে পতিত বৃষ্টির পানি এবং গ্রীষ্মের তাপে পর্বতের বরফ গলা পানিই মূলত নদী বহন করে ভূ-পরিস্থভাবে সমূদ্রে নিষ্কাশন করে। নদীর এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য সারা বছর ধরে নদী প্রবাহমান থাকে এবং পরিষ্কার পরিছন্ন পানি বহন করে।
পানি ব্যতীত মানুষসহ কোন জীবই একবিন্দু বেঁচে থাকতে পারে না। এ মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক আমাদের এ গ্রহটি ব্যতিত আর কোন গ্রহ, উপগ্রহে পানির অস্তিত্ব নাই বলে পৃথিবী ব্যতীত আর কোথাও জীবনের অস্তিত্বও নাই। তাইতো পানির অপর নাম জীবন।
এ পৃথিবীর ৩ ভাগের ২ ভাগই জল আর একভাগ মাত্র স্থল। কিন্তু পৃথিবীতে এত পানি থাকতেও মানব জাতিসহ সকল জীবের ব্যবহায্য পানির পরিমান ও এর উৎসহ খুবই সীমিত।
পৃথিবীর সব পানির মধ্যে মাত্র ২.৫% স্বাদু পানি (Fresh Water)। এ স্বাদু পানির মধ্যে ১% এরও অনেক কম মানুষের ব্যবহারে নাগালের মধ্যে।
কারণ, এ ২.৫% স্বাদু পানির মধ্যে গ্লেসিয়ারস ও আইসক্যাপ ৬৮.৭% – যা মানব জাতির নাগালের বাহিরে উত্তর মেরু ও তৎসংল্গগ্ন আর্টিক সাগরে ও সংযুক্ত সাগরসমূহে এবং দক্ষিন মেরুর এর্ন্টাটিকায় যা বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গলে গলে লোনা পানিতে মিশে সমূদ্রের পানির তলের উচ্চতা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে, ৩০.১% পানি ভূতলে যার নগণ্য পরিমানই আমরা ব্যবহার করতে পারি এবং আর মাত্র ১.২% হল ভূ-পরিস্থ পানি।
আবার এ ১.২% ভূ-পরিস্থ পানির মধ্যে ৬৯% রয়েছে পর্বত শৃঙ্গসমূহে ও মরু অঞ্চলের পারমাপ্রষ্ট (Permafrost ) এ, ২১% লেকসমূহে যার মধ্যে শুধুমাত্র বোকাল হ্রদেই আছে এ পানির ৫০%, ৩% বায়ু মন্ডলে, ৩.৮% মাটির আদ্রতায়, ২.৬% হাওর- বাওর জাতীয় জলাভূমিতে, ০.২৬% জীবজন্তু ও বৃক্ষাদির দেহে এবং মাত্র ০.৪৯% নদীতে বিদ্যমান রয়েছে।
অথচ এ নদীর পানি আমরা বর্জ্য ফেলে নষ্ট করছি, নদী দখল করে শিল্পখারাখানা স্থাপন করে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নদ-নদী, খালবিল ধ্বংস করে চলেছি।
মানবজাতির বেদখল ও অত্যাচারে দিন দিন পৃথিবীর ছোট ছোট নদীসমূহ ভূ-পৃষ্ঠ হতে হারিয়ে যাচ্ছে, বড় বড় নদীসমূহ ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতির উপর মানবজাতির এহেন আচরণের বিশ্বে দিন দিন মারাত্বক বন্যা, খড়া, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধ্বস দিন দিন মাত্রারিক্তভাবে বেড়েই চলেছে- এতে মানবজীবন ও সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, মানব খাদ্য শস্য উৎপাদন মাত্রারিক্তভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে – যাতে অতিস্বল্প সময়ের মধ্যে সারা বিশ্ব ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের কবলে পড়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশ বাংলাদেশ ছিল নদী মার্তৃক, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলণায় বহুগুণ অধিক হারে আমাদের দেশের নদীগুলো মানচিত্র হতে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হচ্ছে। তাই আমাদেরকে আমাদের অস্তিত্বের প্রয়েঅজনেই নদীসমূহকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।