বিশ্বব্যাপি বনভূমির পরিমান আশংকাজনকভাবে কমছে
দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিনির্মানের একমাত্র আদর্শ প্রক্রিয়া যা ইতোমধ্যেই সকলের কাছে গৃহীত ও প্রশংসিত হয়েছে।
বনভূমিকে পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে বায়ু দূষণের শোধনাগার বলা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপি এই বনভূমির পরিমান আশংকাজনকভাবে কমছে। ২০০২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বনভূমির পরিমান কমেছে শতকরা ৭.৪ ভাগ।
অপরদিকে ক্রমবর্ধন শিল্প-কারখানা বা কৃষিকাজের মাধ্যমে উৎক্ষিপ্ত দূষক বায়ুমন্ডলকে দূষিত করছে ফলে বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জলবায়ু হারাচ্ছে তার স্বকীয়তা।
জলবায়ুর আচরন হয়ে উঠছে অনিয়মতান্ত্রিক। ঘটছে অসময়ে কোথাও অতিবৃষ্টি আবার কোথাও অনাবৃষ্টি, কোথাও অতিরিক্ত শীত আবার কোথাও মাত্রাতিরিক্ত গরম।
একইভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনে জৈব জ্বালানির ব্যবহারও কম দায়ী নয়। এই জৈব জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৫ সালে মোট জৈব জ্বালানি ব্যবহারের পরিমান ছিল ৬৬.০৪ কোয়ডরিলিয়ন বিটিইউ যা ২০২৩ সালে দাড়ায় ৭৭.১৮ কোয়ডরিলিয়ন বিটিইউ।
সুতরাং একদিকে জৈব জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে জৈব জ্বালানি বৃদ্ধি জনিত কারনে সৃষ্ট দূষণ পরিশোধনকারী বনভূমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর এক্সট্রিমিটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষকরে তাপ ও বৃষ্টিপাতের অনিয়মতান্ত্রিকতার ক্ষেত্রে। যা বিশ্বব্যাপী মরুময়তাবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব কম নয়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এমনিতেই খরা প্রবন। বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে তাপমাত্রার আধিক্য এবং কম বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এই বৈশিষ্ট্য আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। সুতরাং সমনের বছরগুলিতে এই মাত্রা যে আরো বৃদ্ধি পাবে তা সহজেই অনুমেয়।
এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ খুব সহজ নয়। কেননা বায়ুমণ্ডলের কোন রাজনৈতিক সীমানা নেই। তাই এক জায়গায় সৃষ্ট দূষণ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবর্তন নিয়ে আসে বিশ্ব জলবায়ুতে। বায়ুমন্ডলের দূষণে বাংলাদেশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য না হলেও সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। তাই বিষ্বর সঙ্গে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে কাজ করতে হবে এবং একই সঙ্গে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এইরূপ কৃষিব্যবস্থা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষকরে উত্তর-পশ্চিম বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য এমন ধরনের শস্য উদ্ভাবন এবং চাষ করতে হবে যাতে কম সেচের প্রয়োজন হয়। এছাড়া শস্য-প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে অবনয়নকৃত পরিবেশ যেমন পুনুরুদ্ধার করা জরুরী, তেমনি আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আর পরিবেশের অবনয়ন না ঘটায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরী। সকলের সচেতনতাই পারে ভবিষৎ প্রজন্মকে দূষণমুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে।