শেখ রাসেল ইকোপার্ক। পাশেই রূপসা নদী। উত্তরে খান জাহান আলী (র.) সেতু বা রূপসা সেতু। দৃষ্টিনন্দন এ সেতুতে দাঁড়িয়ে দেখা যায় নদীর অনেক দূর পর্যন্ত। নদীতে চলতে দেখা যায় ডিঙ্গি নৌকা, লঞ্চ, ট্রলার ও লাইটারেজ জাহাজ। পড়ন্ত বিকেলে সেতুতে দাঁড়ালে গায়ে পরশ বুলিয়ে যায় মৃদু-মন্দ হাওয়ায়। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। সেতুটি যেন হয়ে উঠেছে খুলনার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। আর দক্ষিণে রয়েছে নির্মাণাধীন রূপসা রেল সেতু।

শেখ রাসেল ইকো পার্কে বিশুদ্ধ বাতাস আর নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা, থাকবে পাখির অভয়ারণ্য ও সুন্দরবনের গাছপালা
এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাই এখন ছুটে আসছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গায় অবস্থিত শেখ রাসেল ইকো পার্কে। সবে বিদায় নিয়েছে শরৎ। তারপরও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি কাশফুল। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে নদীর পাড়ের বিস্তৃত খোলা জায়গাজুড়ে থাকা শুভ্র কাশবন মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের।
এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই নদীর পাড়ে ছুটে আসেন তারা। কেউ কাশবনে ছবি তোলেন তো কেউ দেন আড্ডা, কেউ আবার নৌকায় করে ঘোরেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে পার্ক এলাকা।
এ পার্কে সপরিবারে ঘুরতে আসা খানজাহান আলী রোডের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, সব সময়ই কাশবন আমাকে খুব টানে। গ্রাম থেকে শহরে আসার পর যান্ত্রিকতায় আটকে গিয়ে বহু দিন আর কাশ দেখা হয়নি কাছ থেকে। যে কারণে সুযোগ করে পরিবার নিয়ে শেখ রাসেল ইকো পার্কে কাশফুল দেখতে চলে এলাম।
আলমগীরের মতো অনেক প্রকৃতিপ্রেমীই বেড়াতে আসেন রূপসা সেতু থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে রূপসার কোল ঘেঁষা পার্কটিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশসম্মত পার্ক তৈরির নির্দেশনায় সুন্দরবনের আদলে তৈরি করা হচ্ছে তার ছোট ভাইয়ের নামে শেখ রাসেল ইকো পার্ক। এখানে পাখির অভয়ারণ্য, উপকূলবর্তী সুন্দরবনের গাছপালা, বিভিন্ন পশু-পাখির মিলনমেলার পাশপাশি ম্যানগ্রোভ কালচার সেন্টারসহ বিনোদনের জন্য থাকছে নানা ব্যবস্থা।
দক্ষিণাঞ্চলের একটি মডেল পার্ক হিসেবে বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে শেখ রাসেল ইকো পার্কের উন্নয়ন কাজ। পার্কটির কাজ শেষ হলে এটি হবে এ জেলার অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র।
খুলনা জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চলমান এ কাজে বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সার্বক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছে। রূপসা সেতুর দক্ষিণ পাশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ‘ভূতের আড্ডা’ পার্কের পাশেই নদীর তীরে গড়ে উঠছে শেখ রাসেল ইকো পার্ক। পার্কটি স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ২১০০ ফুট লম্বা এবং ৯৫০ ফুট চওড়া জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়। জমি অনুমোদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে পার্কের কাজ শুরু হয়েছে।
সরকার দক্ষিণাঞ্চলের বটিয়াঘাটায় একটি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইকো পার্কটি তারই প্রথম পদক্ষেপ।

শেখ রাসেল ইকো পার্কে বিশুদ্ধ বাতাস আর নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা, থাকবে পাখির অভয়ারণ্য ও সুন্দরবনের গাছপালা
বর্তমানে কাজ শেষ না হলেও প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইকো পার্ক এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন। এজন্য রূপসা নদী সংলগ্ন পুল, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য দুই পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষরাজি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বনের আবহ। পূর্ণাঙ্গভাবে পার্কটি চালু না হলেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এখানে আসা দর্শণার্থীরা। সূর্য ওঠা আর অস্ত যাওয়ার দৃশ্য বুকে নিয়ে বিনোদনপ্রেমীরা বাড়ি ফেরেন।
রবিবার (১৮ অক্টোবর ২০২০) সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, কাজ শেষ না হলেও প্রতিদিন বিনোদনপ্রেমীরা আসছেন শেখ রাসেল ইকো পার্কে। খুলনায় তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় দর্শনার্থীরা এখানে এসে বিশুদ্ধ বাতাস আর নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন। চলমান কাজের তদারকি করতে প্রতিনিয়ত আমাকে এ পার্কে আসতে হয়। যখনই আসি, তখনই দেখি মানুষের ভিড়।
তিনি জানান, পার্কের কালচারাল সেন্টারের দোতলা ভবনের পাইলিংয়ের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বনবিভাগের কাজ টেন্ডার হয়ে গেছে, যে কোনো সময় শুরু হবে।