বিমান হতে বীজ বোমার মাধ্যমে বছরে রোপণ করা যায় ১ বিলিয়ন গাছ
সাদিয়া নূর পর্সিয়া (৭ম সেমিষ্টার স্টুডেন্ট,
ইংরেজী বিভাগ, আইইউবি, ঢাকা)
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধের যুদ্ধে প্রকৃতি কি জিততে পারে? হয়ত কিছুটা মানবতার সাহায্যে পারে।
পুরানো পুনঃনির্মিত সামরিক বিমান ব্যবহার করে, আমরা বছরে এক বিলিয়ন গাছ লাগাতে পারি। বিমানগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত বনগুলিতে “গাছ বোমা” নিক্ষেপ করতে পারে যা বাণিজ্যিকভাবে গাছ কাটার দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রস্তাবিত কর্মসূচী এর মাধ্যমে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এমন গাছ ব্যবহার করা যায় যেগুলো বছরে ১০ ফুটের বেশি বৃদ্ধি পায়। এ গাছগুলি কয়েক বছরের মধ্যে পুরোপুরি বন উজাড় করার নেতিবাচক প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে।
গার্ডিয়ানে বলা হয়েছে, “অব্যবহৃত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত সি-১৩০ হারকিউলিস মালবাহী বিমানের একটি বহর যারা মূলত স্থল মাইন ফেলার জন্য তৈরিকৃত তা এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
“লকহিড মার্টিন বৃহৎ সামরিক উদ্ভাবনী সংস্থা এবং নিউটনের নভোচারী বনায়ন সংস্থাটি, যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন আরএএফ বিমান চালক জ্যাক ওয়াল্টার্সের কাছ থেকে একটি পুরানো ধারণা নিয়ে এটিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছে। বিমানগুলি ৭০ টি দেশে ২,৫০০ টি অব্যবহৃত সি-১৩০ এর মাধ্যমে একদিনে প্রতিবারে ৯০০,০০০ টি পর্যন্ত গাছ শূন্য হতে নিক্ষেপের মাধ্যমে রোপন করতে পারবে এবং এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য ছোট ছোট চারাগাছ ব্যবহার করা যেতে পারে।”
মালবাহী বিমানগুলি বীজের শঙ্কু ফেলবে যা নিজেদের মাটিতে পুঁতে ফেলে। গাছের বোমাগুলি আঘাতে বিস্ফোরিত হয় না বরং সময়ের সাথে সাথে তাদের আবরণ দ্রবীভূত হয় এবং এগুলি পরিমাণমত সার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা ধরে রাখে যা গাছের শিকড় গজানো নিশ্চিত করে।
লকহিড মার্টিনের প্রতিনিধি পিটার সিমন্স বলেন, “সম্ভাবনাগুলিও চমৎকার।” “আমরা ১৩০ (1 নটিক্যাল মাইল=1.15 মাইল) গতিতে ১০০০ ফুট উপরে উঠে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একই ধাঁচে এক মিনিটে ৩,০০০ এর বেশি শঙ্কু রোপণ করতে পারি – ঠিক যেমনটি আমরা স্থল মাইন নিয়ে করেছিলাম, তবে এ ক্ষেত্রে, প্রতিটি শঙ্কু একটি চারাগাছ বহন করে। এতে প্রতিটি অভিযানে রোপন করা যাবে ১২৫,০০০ গাছ এবং এক দিনে হয় ৯০০,০০০ টি গাছ।”
গাছের শঙ্কুগুলি মাটির দিকে নির্দেশিত এবং একই গভীরতায় মাটিতে নিজেদের গেঁথে ফেলার জন্য তৈরিকৃত যেন নিজের হাতে রোপণ করা। এগুলিতে সার এবং এমন একটি উপাদান রয়েছে যা চারপাশের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে গাছের শিকড়কে জলসিক্ত করে।
ধারকটি ধাতব হলেও তবে তাৎক্ষণিকভাবে পচেঁ যায়/ধ্বংস হয়ে যায় যাতে চারা গাছটির শিকড় সহজেই মাটিতে গজাতে পারে।
বিমানের মাধ্যমে বনায়নের ব্যাপারে কথা বলতে মোশে আলামারো কয়েক দিন আগে ব্রিজনর্থে গিয়েছিলেন ডঃ ওয়াল্টার্সের সাথে দেখা করতে, যিনি ২৫ বছর আগে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে একটি গবেষণাপত্রে তাঁর ধারণা প্রকাশ করেছিলেন।
মিঃ আলামারো বলেছিলেন: “আমরা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করব ভেবেছি এবং পরামর্শ দেব যে জ্যাককে নাইট উপাধি দেয়া হোক।
“এটি একটি দুর্দান্ত পরিকল্পনা ছিল, যা সে ঐ সময় পরীক্ষা করে দেখেছিল যে এটি কাজ করেছে, তবে প্রযুক্তিটি তখন কাজ করার অবস্থায় পৌছেনি। এখন এ ধাতব বস্তুটি মাটিতে আঘাত করার সাথে সাথে উহা পচন ধরে/ধ্বংস হয়ে যায় আর গাছগুলি রোপিত হয়ে যায়।
ডঃ ওয়াল্টার্স বলেছেন: “আমি আনন্দিত যে এ ধারণাটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। গাছগুলি যেন মাটিতে নিক্ষেপের পরেও সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আমি প্রাথমিক পরীক্ষা করেছিলাম, এবং এটি কাজ করেছে। তবে উন্নয়ন বাজেটের জন্য আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না।
“মোশে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে আমার কাজ সম্পর্কে পড়েন এবং আমার সাথে দেখা করতে আসেন।”
তিনি বলেন, একজন মানুষ দিনে এক হাজার গাছ লাগাতে পারেন। “আমরা যদি গাছের মাধ্যমে কার্বন সংগ্রহ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা করতে চাই, তবে আমাদের বছরে লক্ষ লক্ষ গাছ লাগাতে হবে। বিমানের মাধ্যমে রোপণই সম্ভবত একমাত্র উপায়।”
মিঃ আলামারো বিশ্বাস করেন যে পদ্ধতি যে কোনও অঞ্চলে কাজ করবে যা গাছ ধারণ করত এবং এমনকি মরুভূমিতেও কাজ করবে যেখানে শঙ্কুগুলি উপযুক্ত গুল্ম রোপনের জন্য অভিযোজিত হতে পারে। মিশরের সিনাই মরুভূমির জন্য তার একটি বৈমানিক প্রকল্প রয়েছে।
“আমরা যে অঞ্চলে আগ্রহী সেগুলির মধ্যে একটি হল স্কটিশ পর্বত যাতে পূর্বে বনায়ন হত এবং আবার হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে জমির মালিকদের সাথে কথা বলেছি এবং তারা স্থানীয় প্রতিরোধ সম্পর্কে কিছুটা চিন্তিত কারণ মানুষ পাহাড়কে খালি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি স্থানীয় অরণ্যে গাছ রোপন করতে পারি।”
তিনি স্নায়ুযুদ্ধের সময় পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মধ্যে লোহার পর্দায় “দৃষ্টি রেখা” সরবরাহের জন্য কাটা ব্ল্যাক ফরেস্টের বৃহৎ অঞ্চলগুলিতে গাছ রোপনের প্রত্যাশা করছেন এবং উত্তর আফ্রিকা, কানাডার তুন্দ্রা, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সন্ধান করছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁর সংস্থা প্রতি বছরে এক বিলিয়ন গাছ রোপণ করতে পারবে – এটি ৩,০০০ বর্গমাইলে গাছ রোপন করার পক্ষে যথেষ্ট।
SOURCE: The Guardian ( Original Sunny Skyz)