বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ী মুক্ত দিবস উদযাপিত
”ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি, হাঁটা, বাইসাইকেল ও গণপরিবহন বান্ধব নগর গড়ি” – এই স্লোগানে গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ীমুক্ত দিবস পালিত হয়। সংবাদ বিবরণী।
গত দুই দশকে ঢাকা শহরে সাতটি উড়াল সড়ক এবং ফ্লাইওভার তৈরি করতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ এর প্রধান সুবিধাভোগী শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীরা।
অপরদিকে যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তারা মহাসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেছে, যা তাদের অর্থ-সময় নষ্ট করেছে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই বাস্তবতায় ব্যক্তিগত গাড়িকে সীমিত করে হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহনের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জনবান্ধব নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকাল ৩.০০ টায় ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আয়োজক সংস্থাসমূহের নানা আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনে বক্তারা এ কথা বলেন।
এবারের বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসে শিশুসহ সকল এলাকাবাসীর জন্য বিভিন্ন ধরণের দেশীয় খেলা, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনের ব্যবস্থা ছিলো।
আয়োজনে শতাধিক এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করে। নাগরিকদের সচেতন করা এবং বিশ^ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে পুরো মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি বিভিন্ন ধরণের ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়।
আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব মাহামুদুল হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, হেলাল আহমেদ, জেনারেল সেক্রেটারী, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, মেহেরুন নেসা, প্রধান শিক্ষক, রায়ের বাজার হাই স্কুল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির সভাপতি জনাব এ আর এম ছালারে জাহান।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষদের একটি পছন্দের এবং সহজলভ্য বাহন বাইসাইকেল। এই বাহনটি শুধু সাশ্রয়ীই নয়, এটি পরিবেশবান্ধবও বটে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, পরিবেশবান্ধব এ বাহনটির উপর এত কর আরোপ করা হয়েছে যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
এ আয়োজন থেকে সরকার ও প্রশাসনের কাছে পরিবেশবান্ধব এ বাহনটিকে সকলের ক্রয় ক্ষমতার মাঝে নিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এতে করে যেমন জনবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে তেমনি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব হবে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, জ্বালানী সংকট ও শহরের তীব্র যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি।
ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে জায়গা দখল করে বেশি কিন্তু যাত্রী পরিবহন করে কম। জ্বালানী সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে অযান্ত্রিক যানবাহন যেমন- রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেলের ব্যবহার।
এতে করে নগরের যানজট কমে আসবে, দূষণ হ্রাস পাবে ও হাঁটার পরিবেশও নিরাপদ হবে। ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে গণপরিসরের সংকটের কারণে খেলাধুলার অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা।
ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে সড়কের মত গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর শিশু-কিশোরদের খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত করা হলে তাদের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী হেলাল আহমেদ বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের শিশুরা তেমন শারীরিক একটিভিটিসের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে তারা অন্যদিকে ধাবিত হচ্ছে।
শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার জায়গা দিতে, তাদের শারীরিক বিকাশে মনোযোগ দিতে হবে অভিভাবকদেরকে। আজকের আয়োজনের মাধ্যমে সকলকে আহ্বান জানাতে চাই শিশুদের জন্য অন্তত পক্ষে এলাকাভিত্তিক এমন আয়োজন করা হোক।
রায়ের বাজার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন নেসা বলেন, আমাদের সকলকে সকলের প্রতি সহনশীল হতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের প্রতি। আগামীতে তারা নেতৃত্ব দিবে। তাই তাদেরকে মানবিক মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের জন্য শহর তাদের মত।
গণপরিবহণের গুরুত্ব তুলে ধরে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির সভাপতি এ আর এম ছালারে জাহান বলেন, এলাকাবাসীর বিনোদন ও খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে গাড়িমুক্ত সড়কের মত উদ্যোগকে আরো সমর্থন দিতে হবে। এ ধরণের আয়োজন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে।
ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি আমাদের পরিবেশ ও নগর ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যক্তিগত গাড়ির বৃদ্ধির ফলে নাগরিক জীবনে কি সমস্যা হতে পারে তা আমরা প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যানযটে আটকে থেকে বুঝতে পারছি।
তাই ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করে হাঁটা, সাইকেল, গণপরিবহনসহ একটি সমন্বিত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে আমাদের সুদৃষ্টি দিতে হবে।
এছাড়াও আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদী ইয়ুথ ক্লাব, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, স্কেটিং৭১, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স, লোকাল ফিউচার, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন ইত্যাদি সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।