দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে বানের পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। এ অঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি জমা হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। মৌসুম সক্রিয় এবং চাঁদের অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরের পানির স্তর বেড়েছে।
তাই সাগরের দিকে পানি নেমে যাওয়ার গতি অনেক কমে গেছে। যে কারণে মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
তিস্তা ও রাজধানীর আশপাশের তিনটিসহ সারা দেশের ১৯টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরের নিম্নাঞ্চল স্বল্প থেকে মাঝারি ধরনের বন্যায় কবলিত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ৩১ জেলার অর্ধকোটি মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আরও জানা গেছে, সরকার ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত জেলার ১৫৩ উপজেলাকে বন্যা উপদ্রুত হিসেবে ঘোষণা করেছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোর ৯০৮ ইউনিয়নের ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৯ পরিবার বর্তমানে পানিবন্দি। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন বন্যায় মারা গেছেন।
দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত এবং পানিবন্দি লোকের সংখ্যা বাড়ছে। দেশি-বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়, আসাম, অরুণাচলসহ হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশীয় অঞ্চলে গত ২ দিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি আছে। এরপর হয়তো এ অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হবে। কিন্তু মেঘালয়ের দিকে এরপর প্রায়
পাঁচশ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে মনে হচ্ছে, আপার মেঘনা অববাহিকা ৪-৫ আগস্টের পর ফের বন্যাকবলিত হতে পারে। যেহেতু এ দুই অববাহিকার পানি দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সাগরে নিষ্কাশিত হয়। তাই মধ্য আগস্টের আগে দেশ বন্যামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরসহ মধ্যাঞ্চল বন্যাকবলিত থাকতে পারে। আর আগামী কয়েক দিন মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তুলনামূলক তীব্র হওয়ার আশঙ্কা আছে। কেননা ঢাকার আশপাশের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল ১০-১২ দিনের জন্য বন্যাকবলিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বুলেটিনে দেখা যায়, দেশের ভেতরে ও বাইরে ২ দিন ধরে চলছে ভারি বৃষ্টিপাত। ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্য থেকে বানের পানি আসা আবার শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা আবার বিপদসীমা পার করতে পারে। বর্তমানে ১৯টি নদী ২৯ পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপরে।
যদিও খুব ধীরগতিতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং আপার মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো থেকে পানি নামছে। এ কারণে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টা বন্যার পানি কিছু কমবে। কিন্তু বাকি ২৬ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোতে পানির সমতল একই রকম আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ অঞ্চল থেকে পানি কমার লক্ষণ নেই।
বরং ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলো আরও ৪৮ ঘণ্টা পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। গত ৪-৫ দিন ধরে বালু নদ রাজধানীর ডেমরা পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার থেকে মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ এবং টঙ্গীতে টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার উপরে আছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, চলতি সপ্তাহে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটার সম্ভাবনা আছে। এ কারণে নেমে আসা বানের পানি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে দেবে না। বরং আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করবে। দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে গঙ্গা অববাহিকার জেলাগুলোতে। অপরদিকে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর নদী সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভূগাই ও কংস এ মুহূর্তে বিপদ সীমার নিচে থাকলেও চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বিপদসীমা পার করতে পারে। এ অঞ্চলের বন্যার পানি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে অব্যাহতভাবে হ্রাস পেতে পারে। সার্বিকভাবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (ডিডিএম) এবং এফএফডব্লিউসি বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ৩১টি জেলা বন্যা উপদ্রুত এবং ৩২টি বন্যাকবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী।
বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাগট, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালীগঙ্গা, আড়িয়ালখাঁ, মেঘনা ও তিতাস।
বন্যা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণত একদিনে ৩০০ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হলে তা অন্তত ১০ দিনব্যাপী বন্যার সৃষ্টি করে। আবহাওয়া অধিদফতর এবং এফএফডব্লিউসির তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের অন্তত ৬টি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সর্বোচ্চ ৯১ মিলিমিটার থেকে ৫২ মিলিমিটারের মধ্যে আছে। অন্য অঞ্চলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। ভারতের সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে বৃষ্টি হয়েছে ৬২ মিলিমিটার। গ্যাংটকে এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ৫৩ মিলিমিটার। আর গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উভয় অঞ্চলের পানি প্রবাহিত হয় তিস্তায়।
সারা দেশের চিত্র : দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ। এসব মানুষের ঈদের খুশি নেই বললেই চলে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ স্বল্পতার পাশাপাশি গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট অব্যাহত রয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পদ্মার প্রবল স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ৩ নম্বর রো রো ফেরিঘাট। তীব্র স্রোতে ঘাট বন্ধ থাকা ও ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কে পানি ওঠায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠনো খবর-
ডেমরা : ডেমরায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বালু নদ তীরবর্তী এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ সড়ক ডুবে গেছে। কোনো সড়কে কোমর পানি, কোথাও আবার হাঁটুপানি। নিম্নাঞ্চলের শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গত কয়েক দিন ধরেই বালু নদে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উজানের ঢলে আসা বন্যার পানি। তীরবর্তী অভ্যন্তরীণ প্রধান সড়কগুলোতে বালু নদের পানি ছুঁই ছুঁই করছে। যে কোনো সময় এসব সড়কে পানি চলে আসতে পারে।
রাজধানীর ডেমরা থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি মূলত বন্যাকবলিত এলাকা। তবে ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলে টানা বৃষ্টির পানিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : শিমুলিয়া ৩ নম্বর রো রো ফেরিঘাটের পাশে একটি মসজিদ ও বিআইডব্লিউটিএ-র একটি সেটও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে শিমুলিয়া ঘাটের প্রায় ১৫শ’ বর্গমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। মঙ্গলবার জোয়ারের অতিরিক্ত পানির স্রোতে ফেরিঘাটটি তলিয়ে যায়। এ ছাড়া ২ নম্বর ফেরিঘাটটিও বিলীন হওয়ার পথে এবং ঘাটের আশপাশের এলাকা নদীতে বিলীন হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক মো. শাখাওয়াত আহাম্মেদ জানান, পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে বিআইডব্লিউটিএ-র নবনির্মিত একটি স্থাপনা ও একটি মসজিদ ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া শাহ মখদুম নামের একটি রো রো ফেরি বিকল হওয়ায় ৩ নম্বর ঘাটের পাশে নোঙর করে রাখা ছিল; কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ-র উদ্ধারকারী জাহাজ দুরন্ত এসে পন্টুনটি টেনে উপরে ওঠায় এবং পন্টুনে থাকা জরুরি জিনিসপত্র উদ্ধার করে জাহাজে উঠিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মাওয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সিরাজুল কবীর জানান, শিমুলিয়া ঘাটে মাত্র ১ নম্বর ঘাটটি সচল রাখা হয়েছে। দুই নম্বর ঘাটটিও ভাঙনের মুখে। তাই আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে এই ঘাটটি।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যার পানিতে ৪টি উপজেলায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বন্যার পানি কমতে থাকায় জাজিরা উপজেলায় নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে।
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বেপারিডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধে বন্যার্তরা ঝড়-বৃষ্টি, বান-তুফান উপেক্ষা করে দিন কাটাচ্ছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আবদুস সোবাহান ১০৫ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন।
সিংড়া (নাটোর) : সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পাশাপাশি বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। প্রবল বন্যায় উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মঙ্গলবার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীতে বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেমি. পানি কমে বিপদসীমার ৮০ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনাসহ অন্য নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বন্যার পানির তোড়ে নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ভবানিপুর এলাকায় সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
শেরপুর : পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শেরপুরের ১৩টি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে তা এখন বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বানভাসি পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ার দোকান ও শিমুলতলী ডাইভারশনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ : ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকিতে রয়েছে রাজবাড়ীর শহররক্ষা বাঁধ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র স্রোতে ঘাট বন্ধ থাকা ও ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কে পানি উঠে তলিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঘাট এলাকায় কয়েকশ’ গাড়ি আটকে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। দৌলতদিয়ার ৬টি ঘাটের মধ্যে ১ও ২নং ঘাট গত বছর ভাঙনের পর থেকে বন্ধ। চালু থাকা ৪টি ঘাটের মধ্যে ৩নং ঘাটটি মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। অপর ৩টি ঘাটের মাত্র ৪টি পকেট দিয়ে কোনো মতে চালু রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিস।
রাজশাহী : রাজশাহীর বাগমারায় অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যায় ১০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি টাকা। সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সোনাডাঙ্গা ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা ও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সব কটি নদ-নদীর পানি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১১টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ পানির স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে। এতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আশুলিয়া (ঢাকা) : আশুলিয়ার সীমানা ঘেঁষা চক্রবর্তী এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এসব মানুষের অধিকাংশই গার্মেন্ট শ্রমিক।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি দ্রুত কমছে। অপরদিকে তিস্তার পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি কমতে শুরু করলেও এ নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক উপরে। ফলে উপদ্রুত এলাকায় মানুষের ঘরবাড়ি থেকে এখনও পানি নেমে যায়নি। এতে বন্যার কারণে বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণকারী বন্যার্ত লোকজন তাদের গরু-ছাগল নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে পারছেন না।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে সব কটি নদীর পানি। এতে উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। নদী অববাহিকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। করোনা-পরবর্তী বন্যার্তদের মাঝে সরকারি সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
সুন্দরগঞ্জে জাতীয় পার্টির এমপির ত্রাণ বিতরণ : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মাদারিপাড়া ও রাঘব চরে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মঙ্গলবার ৫ হাজার বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। দীর্ঘ লাইনে বন্যাকবলিত বানভাসি নারী ও পুরুষ ত্রাণের জন্য হাঁটুপানিতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থেকে এ ত্রাণ গ্রহণ করেন।
ত্রাণ বিতরণকালে উপজেলা নিবার্হী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি, হরিপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আমজাদ হোসেন, উপজেলা যুব সংহতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম রানা, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি সরওয়ার হোসেন বাবু, কৃষক পাটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র সমাজের সভাপতি শাহ সুলতান সরকার সুজন, সংসদ সদস্যের বিশেষ সহকারী নুর মোহাম্মদ রাফিসহ উপজেলা জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: যুগান্তর