22 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৪:৩২ | ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার
পরিবেশ গবেষণা পরিবেশ রক্ষা বাংলাদেশ পরিবেশ

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেছেন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মত বর্তমান সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণকেও জিরো টলারেন্স নীতিতে দেখছে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের বিষয় এখানে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।

রবিবার রাজধানীতে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে ‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করণ: প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী এর সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি।

সংলাপটিতে মূল প্রবন্ধ প্রদান করেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।



প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণ বিধিমালায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৩টি মন্ত্রণালয় ও ৩৫টি সংস্থা আছে। তারা যথাসময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন না করায় চাপটা এক তরফাভাবে পরিবেশ অধিদফতরের দিকে চলে আসে। জলবায়ু সম্মেলনে আমরা বার বার বলছি আমরা ভিকটিম।

কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই স্টান্ডার্ড না মানি তাহলে তো আমাদের বক্তব্য দ্বিমুখী হয়ে যায়। শুধু বিদেশের কাছে বলার বিষয় নয়, দূষণ নিয়ন্ত্রণ জনস্বাস্থ্যের বিষয়। এটা সংবিধান থেকেই আমাদের দায়িত্ব। তাই আমরা নিজে থেকেই চাই না ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতিতে যেতে।

যদি কোথাও এমনটা থেকে থাকে অবশ্যই সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো, সমাধান করবো। আমাদেরকে এখন নির্ধারণ করা দরকার আমার নগরে কতটুকু সবুজ রাখতে হবে, কতটুকু জলবাভূমি রাখবো। এখান থেকে আমাদের কোনোভাবেই সরে আসা যাবে না।

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের বিষয় এখানে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সন্ত্রাস ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মত বর্তমান সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণকেও জিরো টলারেন্স নীতিতে দেখছে বলে জানান তিনি।

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, আমরা অঘোষিত জরুরি অবস্থায় আছি। আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ শহরও বিশ্বমানের চেয়ে ৯ গুন দূষিত। আমাদের এখন স্টাডি দরকার অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কত বাড়ছে?



এটার ক্ষতি উন্নয়নের চেয়েও বেশি কিনা? আমরা সার্বক্ষণিক একটা দূষিত পরিবেশে আছি। বর্তমান সময়ে নিজ বাসায়ও আমরা নিরাপদ না। এমন পরিস্থিতিতে কথার চেয়ে কাজ বেশি প্রয়োজন।

আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। আমি এ নিয়ে লড়তে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো এবং নাগরিক সমাজের সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশগত সকল সমস্যাগুলো সমাধান করতে সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

জাতীয় সংলাপে মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুমান উন্নয়ন না করলে ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কয়েক গুন বেড়ে যাবে। বায়ুমান উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হল বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা। যার ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবও তুলনামূলক ভাবে কমে আসবে।

তিনি তার বক্তব্যে দেশে বায়ুমান উন্নয়নের জন্য ৪টি সুপারিশ প্রদান করেন যথা- (১) বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২ এ বস্তুকণা ২.৫ এর পূর্ববর্তী মান প্রতিঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখা (২) উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদানকারী দেশগুলো নিজ দেশে যেভাবে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইমিশনের মাত্রা বজায় রাখে একইভাবে বাংলাদেশেও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইমিশনের মাত্রা বজায় রাখা (৩) পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত বায়ু দূষণ নির্দেশিকার ১৬ নং পৃষ্ঠার ১৯ নং ক্রমে উল্লেখিত কম সালফারযুক্ত (৫০ পিপিএম) ডিজেল আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করা (৪) সকল কয়লা, তেল ও গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মত লাল শ্রেণীভুক্ত রাখা।



বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি বলেন, বায়ুমান শুধু স্বাস্থ্যের বিষয় না। এটা আমাদের জীবনের বিষয়। বাতাস ছাড়া আমরা এক সেকেন্ডও বাঁচবো না। আগে আমরা জলবায়ুকে আগামী হিসেবে আলোচনা করতাম।

এখন আর আগামী নয়, বর্তমান হয়ে গেছে। এখন আর আগাম ব্যবস্থা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ করতে হবে। নতুন গেজেট হচ্ছে সরকারি যে কোনো স্থাপনায় ইটের পরিবর্তে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্লক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি বলেন, আমরা জলবায়ু ইস্যুতে কম্প্রোমাইস করছি বটে তবে একেবারে ছেড়ে দিলে চলবে না।

আমরা কখন কতটুকু উন্নয়নের সাথে কোন মানে পৌঁছাবো সেটা নির্ধারণ করতে হবে। অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমরা সংসদে একদিন না পারি এক ঘণ্টা হলেও পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা করবো।

পাওয়ার সেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর মহাপরিচালক, প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বিদ্যুতে আমরা সবাই উপকারভোগী অথচ বায়ু দূষণের কথা এলেই কেন যেন সবাই বিদ্যুৎকে সবার আগে দোষারোপ করছি।

আমরা এখন রিনয়েবল এনার্জিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কয়লাভিত্তিক অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কাজ করছি। বায়ু দূষণ রোধে প্রকৃতপক্ষে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

সুইডেন দূতাবাস বাংলাদেশ এর স্বাস্থ্য বিভাগের ফাস্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল নোভাক বলেন, মানুষের তিনটি রোগের কারণ হচ্ছে বায়ু দূষণ। বায়ু দূষণের কারণে শিশু, নারী, গর্ভবতী এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ু দূষণ একটি স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা পৌঁছেছে তাই আমাদের প্রয়োজন এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া।



বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকায় সবুজ ও জলাভূমি কমে যাওয়ার কারণে এই শহরে বায়ুদূষণ বাড়ছে।

সরাকার নানান প্রকল্প নিলেও সবুজ ও জলাভূমি বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং সবুজ ও পানি কমছে। এখানে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্বাচলসহ যেখানে নতুন শহর গড়া হচ্ছে সেখানে সবুজ রক্ষায় কঠোর হতে হবে।

ঢাকায় বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস উন্নয়ন কাজের দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করা। এখানে কঠোর হওয়া দরকার এবং বায়ুমানের তাৎক্ষণিক তথ্য নগরবাসীকে জানানো দরকার।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও ওয়াশ প্রোজেক্ট এর টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. সন্তোষ কুমার দত্ত বলেন, উন্নয়ন বন্ধ করা যাবে না।

কিন্তু সেটা কিভাবে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করে করা যাবে সেটার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। নগরীতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পানি ছিটানোর স্থায়ী যন্ত্র স্থাপন করা যেতে পারে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. এস.এম. মনজুরুল হান্নান খান বলেন, আমাদের উন্নয়নসূচকে খালি ভবন, রাস্তাঘাট নির্মাণকে উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই উন্নয়ন সূচকে পরিবেশ, সবুজ ও জলাভূমিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া শিখতে হবে।



পরিবেশ অধিদপ্তর এর বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের এর পরিচালক মোঃ জিয়াউল হক বলেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার মাধ্যমে অনেক দূষণ নিয়ন্ত্রণের শক্তি সরকার পেয়েছে।

এখন সরকার চাইলে যে কোনো ইটভাটা মূহূর্তে বন্ধ করে দিতে পারবে। কিন্তু স্বীকার করতে দিধা নেই আমাদের বড় দুর্বলতা হলো, আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোতে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে যেই কমিটি রয়েছে সেটি সচল করা গেলে দূষণের বিষয়ে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত