বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে শামুকের শক্ত খোসা পুড়িয়ে তৈরি করা হয় চুন।শামুকের খোসা পোড়ানোর সময় তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হয় পুরো এলাকা।ফলে বায়ুদূষণ এবং দুর্গন্ধে প্রায়ই স্থানীয়রা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দুর্গাপুর গ্রামে শম্ভু সূত্রধরের রয়েছে শামুকের খোলস পোড়ানোর কারখানা। দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হয় এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শামুক পোড়াতে প্রচুর কাঠ লাগে, কাটা হয় গাছ।
কারখানার আশপাশের বসতবাড়ির লোকজন জানায়, দুর্গন্ধে প্রায়ই তারা অসুস্থ থাকে। বায়ুদূষণের শিকার ভুক্তভোগীরা জানায়, তাদের নালিশ করার কোনো জায়গা নেই।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, শামুক ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় দিনে গড়ে পাঁচ লাখ শামুক ধরা হয়। কেউ শাস্তি পায় না।দুর্গন্ধযুক্ত শামুকের শক্ত খোসা পুড়িয়ে পানের সঙ্গে খাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে চুন । অপরিচ্ছন্ন শামুকের খোলস মাসের পর মাস গাদা করে রেখে সারা বছর পোড়ানো হয়। এই খোসা পোড়ানোর সময় মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ হয়।
চুন তৈরির কারিগর নির্মল সূত্রধর জানান, মাটির তৈরি গোলাকার ‘তাফাল’-এ প্রতিবার ২০ থেকে ২২ ‘ঢোপ’ শামুকের খোসা পোড়ানো হয়। প্রতি ঢোপে প্রায় পাঁচ হাজার শামুক থাকে। তা পুড়িয়ে প্রায় ৪০০ কেজি চুন তৈরি হয়। প্রতি কেজি চুন ৫০-৬০ টাকায় বেচা হয়। চুন বরিশাল, ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। ২০০৯ সাল থেকে চলছে এ কাজ। বরিশাল থেকে আসা শম্ভু সূত্রধর বংশপরম্পরায় চুন ব্যবসায়ী। শম্ভু সূত্রধর জানান, তাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে।
এদিকে শামুক ভাঙা শ্রমিকদের হাতে অজানা রোগ দেখা দিচ্ছে। রোগটির নাম সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।রায়গ্রামের চিন্তা হালদার (৪১) প্রায় ১৯ বছর ধরে শামুক ভাঙেন। তাঁর হাতের তালুতে অসংখ্য গুঁড়ি গুঁড়ি ছিদ্র হয়েছে। তিনি জানান, কাজ শেষে বাড়িতে গেলে ছিদ্র থেকে কষ ঝরে, ব্যথা করে। ব্যথার যন্ত্রণা বাড়ে রাতে। সকাল হলে কাজের তাড়নায় সব ব্যথা হয়ে যায় একাকার।
এ সম্পর্কে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দন্ত বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আশীষ কুমার বৈরাগীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটাকে অনেকে পেশাগত কারণে চর্মরোগ (কন্টাক ডারমাটাইটিস) বলে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগের সঠিক নাম নির্ণয় করা সম্ভব। সমাধান একটাই, শামুক ভাঙা ছেড়ে দিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে ক্ষতস্থানে পচন ধরতে পারে।’
চুন খাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন,‘চুন দাঁতের এনামেল খেয়ে ফেলে এবং মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি করে। ফলে মুখের ভেতর বাসা বাঁধা রোগ, একপর্যায়ে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই পানের সঙ্গে চুন খাওয়ার আগে ভাবতে হবে।’