বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় অবৈধ দখল ও দূষণে মরে গেছে ৩০টি খাল ও একটি নদী। এতে পানির অভাবে কৃষি জমিতে যেমন চাষবাদ করা যাচ্ছেনা তেমনি খাল ও নদী দূষণের কারণে জীববৈচিত্র্যেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। খালগুলোতে পলিথিন আর ময়লা আবর্জনার স্তুপ হতে হতে সেগুলো আজ নিশ্চিহ্ন।
স্থানীয়রা এ সম্পর্কে জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৩০টি খাল প্রবাহিত হয় এবং পালরদী নদীর পানি ব্যবহার করে আশপাশের ফসলি জমির সেচের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। কিন্তু খাল-নদী দখল ও দূষণ হয়ে যাওয়ার কারণে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে অনেক খাল মরে গেছে। যার কারণে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে পানি পাচ্ছে না উপজেলার কৃষকরা। এতে কৃষি কাজ করতে না পারায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া জানা যায়, গত ৯ বছরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে উপজেলার সাত হাজার একর কৃষিজমি কমে গেছে।
এ সম্পর্কে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, গত দুই বছর আগে ৩০টি ছোট-বড় খাল এবং পালরদী নদীর আশেপাশে বিধ্যমান ২৭৩ অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করা হয়। পরে ওই তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী কমিশনে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়নি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা গ্রহণ করতে এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।
এদিকে নদী-খাল দখলকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ইতিমধ্যে খালের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তিনটি খাল পুনঃখননের জন্য প্রকল্প পাস হয়েছে।
উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের ইরি ব্লক ম্যানেজার মনির হোসেন সরদার জানান, গৌরনদীর গয়নাঘাটা খালের পানি দিয়ে আশপাশের ২২টি ইরি ব্লকে ধান চাষ হতো। গয়নাঘাটা খাল মরে যাওয়ার পর বড় খালে পাঁচ কিউসেকের সেচ পাম্প বসিয়ে মৃত খালে পানি দিয়ে ডবল লিফটিংয়ের মাধ্যমে ইরি ব্লকগুলো চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু এতে খরচ বেশি পড়ায় কৃষকরা ইরি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা মামুনুর রহমান এ সম্পর্কে বলেন, কৃষির মূল হচ্ছে পানি। খালগুলোর পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে এলাকায় কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হবে। ২০১১ সালে গৌরনদী উপজেলায় আবাদি জমি ছিল ৩৪ হাজার ১১২ একর। ২০২০ সালে ২৭ হাজার ৩৪ একর জমিতে কৃষি হয়েছে। ৯ বছরের ব্যবধানে সাত হাজার ৭৮ একর জমিতে কৃষি কমেছে।
স্থানীয়দের থেকে জানা য়ায় যে, উপজেলার গয়নাঘাটা খাল, কসবা খাল, সাউধের খাল, বার্থী খাল দখল করে সেসব স্থানে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। একইভাবে পালরদী নদীর সংযোগ খাল গৌরনদী বন্দর থেকে উপজেলা পরিষদ হয়ে বিল্বগ্রাম হাট পর্যন্ত খালে পাকা, আধাপাকা ২০টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা।এছাাড়া অনেক আগেই চাঁদশী, মাহিলাড়া, আশোকাঠি, বাটাজোর, শরিকল, খাঞ্জাপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খালের তীর দখল হয়ে গেছে। দক্ষিণের অন্যতম বৃহৎ বন্দর টরকী। পালরদী নদীর মোহনা ও ছোট-বড় ৬টি খালের সংযোগ ছিল টরকী বন্দরের সঙ্গে। অবৈধভাবে দখলের কারণে ও দূষণেও ভরাট হয়ে গেছে খালগুলো। এতে প্রায় সবগুলো খালই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।