26 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৯:০৮ | ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বন বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়ায় অভিনব কায়দায় ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ
পরিবেশ রক্ষা

বন বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়ায় অভিনব কায়দায় ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ

বন বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়ায় অভিনব কায়দায় ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ

ইন্দোনেশিয়ার সরকারি চাকরিজীবী দোয়ি বানগুন। অযথা বসে থেকে অবসর সময় নষ্ট করেন না। আবার জাকার্তার রাস্তায় যানজটে আটকে থেকেও সময় নষ্ট করতে রাজি নন।

যখনই সময় পান, দোয়ি পায়ে হেঁটেই কাছাকাছি দূরত্বের সমুদ্র উপকূলরেখায় চলে যান। সেখানে পানির মধ্যে হেঁটে ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করেন তিনি।

হুতান ইতু ইন্দোনেশিয়া (ফরেস্ট ইজ ইন্দোনেশিয়া) নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন ৩০ বছর বয়সী দোয়ি। সংগঠনটি তরুণ নগরবাসীর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে, তাদের দেশের বন-জঙ্গলের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং বন সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় যুক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।



জাকার্তার উপকণ্ঠে তানগেরাং শহরে দোয়ির বসবাস। তিনি বলেন, ‘প্যারিসের কথা ভাবলে আপনার চোখের সামনে আইফেল টাওয়ার ভেসে উঠবে, নিউইয়র্ক সম্পর্কে ভাবলে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে দেখতে পাবেন, কিন্তু মানুষ যখন ইন্দোনেশিয়ার কথা ভাববে, তখন কী দেখতে পাবে? এটি আমাদের বন হওয়া উচিত। আমাদের এমন সমৃদ্ধ বন আছে।’

জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বের রেইনফরেস্টগুলোর (চিরহরিৎ বন) এক-তৃতীয়াংশেরই অবস্থান ইন্দোনেশিয়ায়। তবে গত কয়েক দশকে বন উজাড়, পাম অয়েলের মতো গাছ লাগানোর প্রবণতা, খননকাজ, কাগজ তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ এবং নগরায়ণের কারণে এসব বন ধ্বংসের ঝুঁকি বেড়েছে।

বন উজাড়ের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নির্ধারিত বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যায় না। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার জন্য দায়ী বলে বিবেচিত কার্বন ডাই–অক্সাইডের এক-তৃতীয়াংশ গাছপালা শোষণ করে নেয়। যখন এগুলো পচে যায় বা পুড়ে যায়, তখন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

বন ধ্বংসে ইন্দোনেশিয়া চতুর্থ

কঠোর নীতিমালা এবং দাবানল ঠেকাতে অপেক্ষাকৃত ভালো প্রস্তুতির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ায় বন উজাড়ের হার কমেছে। এরপরও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন ধ্বংসের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ।

২০১৫ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডায়েমিটার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ইন্দোনেশীয় নাগরিকদের অনেকের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ নাগরিকদের মধ্যে দেশের বন নিয়ে সচেতনতা এবং আগ্রহ খুব কম।

ইউগভ জরিপেও দেখা গেছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে বলে স্বীকার করেন না, ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৯ সাল নাগাদ এমন মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৮ ভাগ। এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।



পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, জলবায়ুবিষয়ক সচেতনতাকর্মীদের প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তা এবং আকর্ষণীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হাতে অপদস্থ হতে হয়। এসব কর্মকর্তা দাবি করে থাকেন, পরিবেশবাদীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন।

ডব্লিউআরআই ইন্দোনেশিয়ার প্রকল্প পরিচালক আরিফ উইজায়া মনে করেন, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য বন সংরক্ষণে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা খুব জরুরি।

তরুণদের উদ্যোগ

বন উজাড়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ২০১৬ সালে হুতান ইতু ইন্দোনেশিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকে সংগঠনটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপণের পাশাপাশি বনের সুরক্ষায় সচেতনতা তৈরির জন্য কনসার্ট, স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আসছে।

হুতান ইতু ইন্দোনেশিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ভিডিও প্রযোজক আন্দ্রে ক্রিশ্চিয়ান বলেন, ‘কীভাবে বন নিয়ে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং একে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, তা যেন এক বড় পরীক্ষা।’

হুতান ইতু ইন্দোনেশিয়া বিভিন্ন কনসার্ট আয়োজন করে থাকে। সংগীতশিল্পীদের অনেকে রেইনফরেস্টে ভ্রমণের পর নিজেদের লেখা গানগুলোই পরিবেশন করেন। ইন্দোনেশিয়ার আটটি প্রদেশে সংগঠনটি কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। তারা তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

হুতান ইতু ইন্দোনেশিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ভিডিও প্রযোজক আন্দ্রে ক্রিশ্চিয়ান বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়াকে আরও উন্নত করে তুলতে পারবেন কারা? তরুণেরা। তাঁরাই ভবিষ্যৎ।’

২০২০ সালে হুতুন ইতু ইন্দোনেশিয়া জাকার্তার বাইরে তিন দিনের একটি বুট ক্যাম্পের আয়োজন করে।

কীভাবে বন রক্ষা করতে হয়, তা নিয়ে তরুণদের শেখানো হয়ে থাকে। এই ক্যাম্পে প্রায় ৫০ জন তরুণ অংশ নিয়েছিলেন। দোয়িও তাঁদেরই একজন। সেখানেই পরিবেশসংক্রান্ত সচেতনতা গড়ে তুলতে নিজস্ব সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি।

এর নাম দেন ‘ফরেস্ট ইজ আওয়ার ফ্রেন্ড’। অনলাইনে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তরুণদের মধ্যে বন ও প্রকৃতিবিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।



ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের অবস্থান। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের তুলনায় এই ম্যানগ্রোভ বন চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি কার্বন শোষণ করতে পারে।

২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় একটি স্কিম চালু হয়। এর লক্ষ্য হলো ২০২৪ সাল নাগাদ ৬ লাখ হেক্টর (১৫ লাখ একর) নিম্নাঞ্চলের এলাকাকে নতুন করে সংরক্ষণ করা।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণকে অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে দেখেন। দোয়ি মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে বন সংরক্ষণের জন্য তরুণদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, পানিতে নামা, কাদামাটিতে ঘুরে বেড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডগুলো তরুণদের জন্য আনন্দের।

দোয়ি আরও বলেন, তরুণেরা তাঁদের এসব কর্মকাণ্ডের ছবি অনলাইনে প্রকাশ করেন। এতে আবার অন্য তরুণেরাও উদ্বুদ্ধ হন।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত