বনের ভেতরেই অবৈধ ইটভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ
কক্সবাজারে বনের ভেতরেই নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা। চুল্লিতে দেওয়ার জন্য কাটা হচ্ছে বনের গাছ। পুড়ছে কাঠ। পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কেটে সরবরাহ হচ্ছে ইটভাটায়। পরিবেশ অস্তিত্বের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য।
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে প্রাণিজগতৎ। স্থানীয়রা বলছেন, দিনের পর দিন আইন অমান্য করে ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও নীরব ভূমিকা পালন করছে পরিবেশ প্রশাসন। প্রভাবশালীদের হাতবদল হয়ে বহুবছর ধরে চলছে এসব ইটভাটা।
আইনমতে, বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। অপরদিকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ রয়েছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর তো নয়ই, অন্তত তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
জেলা প্রশাসন, বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধনবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ৮৫টি ইটভাটা রয়েছে। উখিয়াসহ তৎসংলগ্ন এলাকাতেই রয়েছে ২৫টি। এতে বনের কাঠ পুড়িয়ে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ১২ লাখের বেশি ইট। এর মধ্যে ৩৩টি ইটভাটার অবস্থান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে।
প্রশাসন দাবি করছে, অধিকাংশ ভাটা কাঠ পুড়িয়ে ইট উৎপাদন করলেও আইনি জটিলতায় এসব ইটভাটা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। ফলে বনসম্পদ উজাড়ের সাথে জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বুনো হাতির পাল অবাধে বিচরণ করত। পরিবেশ বিধংসী কর্মকাণ্ডে এসবের আনাগোনা ও বিচরণ এখন নেই।
উখিয়া রেঞ্জের কর্মাধক্ষ্য গাজি শফিউল আলম জানান, তার এলাকায় ২১ হাজার হেক্টর বনভূমির দুই-তৃতীয়াংশই বেদখলে। শত শত একর ভূমির গাছগাছালি চুরি করে সাবাড় করা হয়েছে।
একশ্রেণির পেশাদার বনচোর রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বনের গাছ কেটে নিচ্ছে, বনভূমি পরিণত হচ্ছে বিরান ভূমিতে। তবে তার এ রেঞ্জে আসার পর কিছুটা রোধ করা হলেও কার্যত বনভূমি পাড়া-মহল্লায় পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, রামু, টেকনাফ, নাইক্ষংছড়ি, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ১১৮টি।
তার মধ্যে ৩৩টি ইটভাটা নির্মিত হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে। ৫৪টি ইটভাটা বিভিন্ন গ্রামে তৈরি হলেও এসবের বিপরীতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কৃষিজমির উর্বর মাটি, পাহাড় ও টিলার মাটি ৬০টির বেশি ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ লাখ ইট উৎপাদিত হচ্ছে এসব মাটি দিয়ে।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনানুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখার তিন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
আইনে বলা আছে, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা করা যাবে না। ইট উৎপাদনের জন্য কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও রামু উপজেলার অবৈধ ১০টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বেশ কয়েকটি ভাটার আগুন নিভিয়ে উৎপাদন বন্ধ করা হয়। কয়েকটি ভাটার চুল্লিও ভেঙে ফেলা হয়।