প্লাস্টিক ‘দূষণ প্রকল্পে’ বিনিয়োগ করছে ব্যাংক
প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়ে গোটা পৃথিবীর পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। তবুও পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পে ৪০টি কোম্পানিকে ৫ বছরের জন্য এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন ব্যাংক।
ভাবতে অবাক হলেও সত্য যে, এই বিনিয়োগের পুরোটাই দেওয়া হবে প্লাস্টিক উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে সচল রাখতে। অথচ বিশ্বের নদী ও সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ রুখতে নেই কোনো নির্দেশনা বা সামগ্রীক পরিকল্পনা।
ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বা ঋণ দিচ্ছে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক এ প্রকল্পগুলো আরো বাড়াচ্ছে পরিবেশ দূষণ। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ কমানো কিংবা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার মতো কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন বা ঋণের সহযোগিতা নেই উল্লেখযোগ্য ব্যাংকগুলোর একটিরও।
সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ভিভিড ইকোনমিসের পরিচালক আর প্রতিবেদনের পরামর্শক রবিন স্মেল বলেন, আর্থিক খাতের এখনো এমন কাউকে প্রয়োজন, যে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ করার মানসিকতা রাখে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব আমেরিকান করপোরেশন, সিটি গ্রুপ এবং জেপি মরগান ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বাণিজ্যে অর্থায়ন করেছে।
তিনটি ব্যাংক চৌদ্দ হাজার চারশো থেকে সতের হাজার দুশো কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানিকে কেমিকেল প্রস্তুতে, পণ্য প্যাকেটজাতকরণে আর কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর বোতল তৈরি করার ক্ষেত্রে। ইউরোপের বারক্লেস আর এইচএসবিসি ব্যাংক প্লাস্টিক পণ্যে অর্থায়ন করেছে এগারো হাজার আটশো এবং নয় হাজার ছয়শো কোটি ডলার। তবে এ বিষয়ে কোনো ব্যাংকই সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্স এজেন্সির এক গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের নিচে অন্তত এক কোটি চল্লিশ লাখ টন মাইক্রো প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে যতোই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, সমুদ্রে প্রতি বছর কয়েক লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা পড়ছে।
অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্স এজেন্সি সংস্থাটির গবেষণা বলছে, সমুদ্রের নিচে ছোট ছোট প্লাস্টিকের কণা সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিকের চেয়ে বেড়েছে ২ থেকে ৩ গুণ হারে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক প্রাণির জীবন ও পরিবেশ। সেই প্রভাব ঘুরে ফিরে আসছে মানুষের খাদ্যচক্রেও।
তাই প্লাস্টিক দূষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান, বন্যপ্রাণীর ওপর। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। প্লাস্টিক পণ্য তৈরিতে কাজ যারা করেন কিংবা যারা ব্যবহার করেন, তাদেরও আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
একটি চালের দানার সমান হয় মাত্র ৫ মিলির একটি মাইক্রো প্লাস্টিকের টুকরার সমান। তাই সামুদ্রিক প্রাণীরা খাবারের সঙ্গে এগুলোও অজান্তেই খেয়ে ফেলে। এই প্লাস্টিকের টুকরোগুলো আসে প্রসাধনী, টুথপেস্ট আর গুঁড়া সাবান থেকে।
যত দ্রুত সম্ভব প্লাস্টিক দূষণের লাগাম টানতে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের আহ্বান জানান বিজ্ঞানীরা। শুরুতেই একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক পণ্য করতে হবে।
সরকার, শিল্পকারখানা মালিকসহ সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ করতে। না হলে আগাম প্রস্তুতী নিতে হবে বিভিন্ন ধরণের মারাত্বক সব প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ভারসম্যহিনতার মুখোমুখী হতে।