প্লাস্টিক দূষণের শিকার মায়ের গর্ভফুলেও
দিনে দিনে আমরা প্লাসিটক নির্ভর হয়ে পড়ছি যা বড় হুমকি হয়ে উঠছে। প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব সাগরতলে মাছের পেট থেকে শুরু করে পর্বতের ওপর পর্যন্ত সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা যা জানিয়েছেন, তা সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় উদ্বেগের বিষয় বিশেষ করে মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় এটি আঘাত হেনেছে। সেই জায়গাটি হচ্ছে মায়ের গর্ভফুল। এমন ঘটনা এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন বিজ্ঞানীরা।
ইতালিতে এই পরীক্ষা হয়েছে যেখানে কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভফুলে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণিকা পেয়েছেন গবেষকেরা। গবেষণার অংশ হিসেবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ওই নারীরা তাঁদের গর্ভফুল দান করেছিলেন গবেষকদের।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারন্যাশনাল (Environment International) এ-সংক্রান্ত একটি শংকামূলক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিজ্ঞান, কারিগরি ও চিকিৎসা বিষয়ক তথ্য ও বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এলসেভিয়ের এই সাময়িকী প্রকাশ করে।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, যেসব নারীকে নিয়ে এই গবেষণা, তাদের সবাই কোনো জটিলতা ছাড়াই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তাঁদের গর্ভফুলে প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায় যা নবজাতক বা মায়ের শরীরে কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে কি না, তাও এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, মায়ের গর্ভফুলে প্লাস্টিক পাওয়ার অর্থ হতে পারে বড় উদ্বেগের বিষয় এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
গবেষণাটি করেছেন রোমের ফাটেবেনেফ্রাটেলি হসপিটাল ও ইতালির পলিটেকনিকা ডেল মার্চ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। ফাটেবেনেফ্রাটেলি হসপিটাল মূলত নারী ও প্রসূতি স্বাস্থ্যের সেবাদান ও গবেষণা করে থাকে। গবেষকেরা বলেছেন, শরীরের ভেতর প্লাস্টিকের উপস্থিতি অস্বাভাবিক আর এমন থাকলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা। কিন্তু ওই মায়েদের বা তাঁদের সন্তানদের শরীরে এমন কোনো প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
ফাটেবেনেফ্রাটেলি হসপিটালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান এবং গবেষণা নিবন্ধের মূল অ্যান্টোনিও রাগুসা জানান যে, যে সকল মায়েদের গর্ভফুলে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণিকা পাওয়া গেছে, তাঁরা বিষয়টি জেনে হতভম্ব হয়ে গেছেন আবার অনেকে বিশ্বাস ও করতে চাইছেন না। নিজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যখন প্রথমবারের মতো কোনো মায়ের গর্ভফুলে প্লাস্টিকের কণা আবিষ্কার করলাম, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম এবং আমার চিন্তা করার ক্ষমতা রুদ্ধ হয়ে এলো।’
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, গর্ভফুলে যে প্লাস্টিক কণাগুলো পাওয়া গেছে, তার সবগুলোই রঙিন। এ ধরনের উপাদান রঞ্জক পদার্থ হিসেবে রং করার কাজে, অ্যাডহেসিভ, প্লাস্টার, নেইল পলিশ, পলিমার ও প্রসাধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার হয়।
বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের যে ব্যবহার ও দূষণ তার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে গবেষকেরা বলেছেন, বিগত একশো বছরে বৈশ্বিক প্লাস্টিক উৎপাদন বেড়ে বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টন হয়েছে। এর মধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশ একবার ব্যবহার্য প্যাকেজিং প্লাস্টিক। তাঁরা বলছেন, প্লাস্টিকের কণা অন্য রাসায়নিকের বাহক হিসেবেও কাজ করতে পারে। মানব শরীরের ভেতর প্লাস্টিক কণাকে বহিরাগত উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়।
গবেষণা নিবন্ধে গবেষকেরা উপসংহার টেনেছেন, ‘মায়ের গর্ভফুল ভ্রূণের বেড়ে ওঠা ও তার র্পূনাঙ্গতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভ্রূণের সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগের সূত্র হিসেবেও এটি কাজ করে। এমন একটি জায়গায় বাইরের সম্ভাব্য ক্ষতিকর এই প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি অনেক বড় উদ্বেগের বিষয়। যা আমাদের নতুন করে ভাবার জন্যে প্রমান হিসাবে যথেষ্ঠ।’
সূত্র: প্রথম আলো