প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক অপসারণ
বিশ্বের সমুদ্রগুলোতে প্লাস্টিকের যে দূষণ, তার সমাধানের জন্য বয়ান স্ল্যাট বহুদিন ধরে ‘এক দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাদায়ক’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি অলাভজনক পরিবেশ সংস্থা ‘দ্য ওশেন ক্লিন-আপ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ২৮ বছরের এই ওলন্দাজ উদ্যোক্তা। প্রশান্ত মহাসাগর হতে প্লাস্টিক বর্জ্য কিভাবে ছেঁকে তোলা যায়, গত দশ বছর ধরে সেই কাজে ব্যস্ত তিনি।
তিনি বলেন, যতটা ভেবেছিলেন, তার চেয়ে কাজটা অনেক বেশি কঠিন বলেই তার মনে হচ্ছে, আমাদের এই গ্রহটা তো আসলে অনেক বড়, আমাদের প্রায় এক হাজার নদী এবং সমুদ্রের পাঁচটি এলাকার বর্জ্য নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কাজেই প্রথম কয়েকটি বছর আমাদের কেটে গেছে কেবল সমস্যাটা উপলব্ধি করতে।
বিশ্বে সমুদ্রের সবচেয়ে বিশাল যে জায়গাটি জুড়ে প্লাস্টিক দূষণ ঘটেছে, সেটিকে সাধারণত ‘দ্য গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ’ বলে বর্ণনা করা হয়। এটির অবস্থান উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে। সেখানে বড় মাছ ধরার জালের ছেঁড়া অংশ থেকে শুরু করে ছোট প্লাস্টিকের কণা জমে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিরাট সমস্যা তৈরি হয়েছে।
‘দ্য ওশেন ক্লিন-আপ’ টিম যেসব এলাকা প্লাস্টিকের দূষণ-মুক্ত করতে চাইছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম।
জাল পেতে প্লাস্টিক অপসারণ
ওশেন ক্লিন-আপ সাগর থেকে প্লাস্টিক অপসারণের জন্য একটি দীর্ঘ ‘ইউ’ আকৃতির প্রতিবন্ধক ব্যবহার করে, যেটি আসলে জালের মতো। নৌকা দিয়ে এই জালটি প্লাস্টিকের বর্জ্য জমেছে সাগরের যেসব এলাকায়, তার মধ্য দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি টানা হয় খুব ধীরে ধীরে, যাতে সামুদ্রিক প্রাণী এবং জীব-বৈচিত্র্যের কোন ক্ষতি না হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে পরিচালিত ক্যামেরা দিয়ে সর্বক্ষণ সাগর-পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করা হয় প্লাস্টিকের বর্জ্যের সন্ধানে। এই ক্যামেরা আবার যুক্ত থাকে কম্পিউটারের সঙ্গে। ফলে ওশেন ক্লিন-আপ টিমের সদস্যরা বুঝতে পারেন প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এলাকাটিকে টার্গেট করতে হবে।
‘দ্য গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচের দিকে নজর দিলে আপনি বুঝতে পারবেন, অনেক এলাকায় প্লাস্টিকের বর্জ্যের ঘনত্ব অনেক বেশি। আবার অনেক এলাকা আছে, যেখানে প্লাস্টিক নেই বললেই বলে’, বলছিলেন বয়ান স্ল্যাট।
“প্লাস্টিক দূষণের এই বড় এলাকাগুলোতে যদি আমরা সর্বক্ষণ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে পারতাম, তাহলে আমাদের অভিযানে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সাফল্য পেতাম।”
ওশেন ক্লিন-আপের প্লাস্টিক অপসারণের এই নতুন যন্ত্রটি প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ। তাদের তৈরি এটি এরকম দ্বিতীয় কোন যন্ত্র। সাগর থেকে প্লাস্টিক অপসারণের পর সেগুলো রি-সাইক্লিং এর জন্য এই যন্ত্রকে মাঝে মাঝে তীরে ফিরে যেতে হয়।
বয়ান বলেন, এই সিস্টেমের মাধ্যমে তারা এ পর্যন্ত সাগর হতে প্রায় দুই লাখ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক অপসারণ করেছেন। কিন্তু বিশ্বের একটি মহাসাগরের সবচেয়ে বড় একটি প্লাস্টিক দূষণ এলাকা, যেখানে কি না ভাসছে দশ কোটি কিলোগ্রাম প্লাস্টিক, সেখানে এই অপসারিত প্লাস্টিকের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ মাত্র।
কিন্তু বয়ান মনে করেন, তারপরও এই কাজের একটা মূল্য আছে: ‘সব বড় কাজই তো শুরু হয় ছোট কিছু দিয়ে, তাই না?’
ওশেন ক্লিন-আপ টিমের বিশ্বাস, তাদের যন্ত্র দিয়ে তারা এ বছরের শেষ নাগাদ সাগরের এই এলাকাটি হতে এক শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করতে পারবেন।
কিন্তু তারা তাদের কাজের পরিধি আরও বাড়াচ্ছেন যাতে কাজটি আরও দ্রুত করা যায়। তারা এখন তৃতীয় একটি যন্ত্র তৈরি করছেন, যেটি প্রায় ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, এটি আকারে অনেক বড়। এবারের গ্রীষ্মে তারা এটি ব্যবহার করবেন।
ওশেন ক্লিন-আপ টিম আশা করছেন, যদি এরকম সুবিশাল দশটি যন্ত্র তারা অদূর ভবিষ্যতে সাগরে নামাতে পারেন, সেগুলো দিয়ে এই দশকের শেষ নাগাদ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্লাস্টিকের বর্জ্যের ৮০ শতাংশ অপসারণ করা সম্ভব।