পানি ছিটিয়ে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধের চেষ্টা করছে উত্তর সিটি করপোরেশন
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বিশ্বে শীর্ষে পৌঁছে বেশ কয়েকবার। এছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বায়ুমান প্রায় সময় থাকে অস্বাস্থ্যকর। এমন অবস্থায় বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর কোনও ভূমিকা নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। নেই কোনও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
আন্তর্জাতিক মান ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ (একিউআই) অনুযায়ী কোনও শহরের বায়ুর মান ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে তা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয় এবং ৩০১ এর বেশি স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সর্বশেষ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে বায়ুদূষণে শীর্ষে অবস্থান করে ঢাকা। এদিন ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ২৫২। এর আগের দিন ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫০।
এদিন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুমান বর্তমানে অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোর কারণে সবাইকে বাইরে মাস্ক পরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়।
ক্রমাগত রাজধানীর বায়ুদূষণের মান আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছালেও কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রুটিন করে পানি ছিটালেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃশ্যত কোনও উদ্যোগ নাই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পরিবেশ অধিদফতর। তবে কারও মধ্যে কোনও সমন্বয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বায়ুদূষণ রোধে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটি থেকে জানায়, শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত ডিএনসিসির প্রতিটি অঞ্চলে পানি ছিটানোর কার্যক্রম চলমান।
এছাড়াও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও কোনও নির্মাণাধীন প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রী রেখে পরিবেশের ক্ষতি করতে দেখলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এগুলো ছাড়া অন্যান্য চলমান প্রকল্প এবং যেকোনও ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালি সৃষ্টি হয়ে যেন বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে জন্য সমন্বয় সভায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএনসিসির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। স্থায়ী উদ্যোগ হিসেবে ফুটপাত, মিডিয়ান এবং খালের পাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে বলে জানায় ডিএনসিসি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির পক্ষ হতে কেউই ফোন ধরেননি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে ডিএসসিসির কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই বায়ুদূষণ রোধে।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর থেকেও সমন্বিত কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এতদিন। সম্প্রতি বায়ুদূষণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আগামী বর্ষা পর্যন্ত কাজ করতে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণের প্রধান উৎস চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্মাণ কাজের ধুলা, ইটভাটা এবং যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইন বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জোরদার করার মাধ্যমে বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধান করা হবে।’
নগরের বায়ুদূষণ রোধে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদের। তারা বলেন, এতদিন যেহেতু কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তাই এখন সময় আগামীতে এই বায়ুদূষণ রোধে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নেওয়ার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘কেবল পানি ছিটিয়ে শহরের বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব না। প্রয়োজন ছিল পরিকল্পিতভাবে কাজ করার।
যেহেতু এতদিন কার্যকর কোনও পদক্ষেপ ছিল না, তাই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আগে এখনই সব অংশীজনের সমন্বয়ে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর কাজ অনুসরণ করা যেতে পারে।
বায়ুদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি নগর কর্তৃপক্ষকে নিবেদিত হতে হবে এই কাজে। উদ্যোগ নেওয়া হলো, কিন্তু বাস্তবায়নে অবহেলা করা হলে অতীতে যেমনটা হয়ে আসছে আগামীতেও তাই হবে।’