পাখির বাসা ভাড়ার অর্থের চিঠি পেলেন মালিকরা
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে সেই পাখির বাসা ভাড়ার অর্থের চিঠি হাতে পেয়েছেন বাগান মালিকরা। বাগান মালিক ও ইজারাদারদের ক্ষতিপূরণের টাকার চিঠি মঙ্গলবার বাগান মালিকরা হাতে পেয়েছেন।
জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-২ শাখার উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী ২০২০ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক ৩৮টি আমগাছের পাঁচজন মালিককে বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত হতে বার্ষিক তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা প্রদানের চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমবাগানের শামুখখোল পাখি বিগত তিন বছর যাবত আছে। প্রাকৃতিক কারণে বা যে কোনো সময় পাখি ওই স্থান ত্যাগ করে অন্য কোনো নতুন স্থানে চলে যেতে পারে। সেহেতু আগামী কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে যে বছর পাখি বসবে না, সে বছর কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।
যে বাগান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তারা হলেন- মুঞ্জুরুল হক মুকুল, সানার উদ্দীন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম মুকুট ও ফারুক হোসেন।
বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম মুকুট বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে টাকা প্রদানের অনুমতির চিঠি হাতে পেয়েছি। মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ৩ বছর ধরে পাখিরা বাগানে আসছে। এর আগের দুই বছরের টাকা মালিকরা যদি পায়, তাহলে ক্ষতিটা অনেক পুষিয়ে আসবে।
গাছগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য নিয়মিত পরিচর্যার দাবি জানান তারা। পাখি সুরক্ষায় এটি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। বাগান মালিকদের জন্য সরকারি এমন একটি প্রকল্পের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আরেক বাগান মালিক সাহাদত হোসেন বলেন, এই পাখি প্রজননে অতীত কোনো ইতিহাস না থাকলেও খোর্দ্দ বাউসা গ্রামটি খাল-বিলের পাশে হওয়ায় প্রজনন সম্ভব হচ্ছিল। কিন্তু বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি আমগাছের ডাল কেটে পাখির বাসা ভেঙ্গে দেন আম ব্যবসায়ী।
ফলে হুমকির মুখে পড়ে হাজারো শামুকখোল পাখি। স্থানীয় পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ বাঁধা দিলে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন আমবাগান মালিকরা। এ খবর যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হলে পাখি সুরক্ষায় পাশে দাঁড়ায় র্যা ব।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায় পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আদালতে রিট পিটিশন করেন। পরে পাখির বাসা ভাঙা যাবে না বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা জানতে চেয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারপর আমবাগানের ক্ষতির বিষয়ে জরিপ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ৩৮টি আমগাছে পাখি বাসা বেঁধে আছে। সেই আমগাছের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেই মোতাবেক বাগান মালিকরা টাকার চিঠি হাতে পেয়েছেন।
সামাজিক বন বিভাগের রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বন সংরক্ষণ (সিসিএফ) কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নির্দেশনা আসছে। সেই নির্দেশক্রমে অনুমতি পেলে টাকার চেক হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে গত চার বছর থেকে স্বেচ্ছায় পাখি পাহারা দিয়ে আগলে রেখেছেন খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, বিচ্ছাদ আলী, নাসিম আঞ্জুম, সাইফুল ইসলামসহ গ্রামবাসী।