পর্যটকদের ভিড়ে নষ্ট হচ্ছে নিকলীর পরিবেশ
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়েই বিস্তুত হাওর। এই হাওর উপভোগ করতে প্রতিদিন নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে। তবে পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় প্রভাব পড়ছে হাওরের পরিবেশের ওপর।
প্রতিদিন হাওরে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এই পর্যটন শিল্প যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে পরিবেশ নষ্ট হবার ঝুঁকি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুকনো মৌসুমে হাওর অঞ্চলের চাষাবাদ।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিত। বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসেন প্রায় অর্ধলাখ প্রকৃতিপ্রেমী। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা। ওপরে নীল আকাশ, নিচে বিস্তুত নীল জল হাওর পর্যটনকে ঘিরে এরইমধ্যে নিকলীতে গড়ে উঠছে হোটেল-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।
বর্ষাকালের কয়েক মাস কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলরাশি মেলে ধরে পর্যটন এলাকার মোহনীয় রূপ। তবে পর্যটন শিল্পের প্রসার হলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওর এলাকার পরিবেশ। শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত করছে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্য।
নিকলী বেড়িবাধেঁ দেখা যায়, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের প্লেট, ওয়ানটাইম বিরিয়ানির প্যাকেট, কফির কাপসহ অপচনশীল বিভিন্ন পলিথিন। তাছাড়া এই পর্যটনীয় এলাকায় ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা নদীর বুকে ভাসছে এতে হারাচ্ছে হাওরের সৌন্দর্য।
স্থানীয় কৃষক বাবুল বলেন, এভাবে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া ময়লায় আমাদের পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে। শুকনো মৌসমে হাল চাষ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলগুলো ট্রিলারের দা এর মাধ্যমে টুকরো হয়ে জমিতে মিশে যায়।
এরপর জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলের টুকরায় আমাদের পা কেটে যায়। এ বিষয়ে সরকার বা ইউএনও যদি ভালো কোনো উদ্যোগ নিত তাহলে পরিবেশ আরও সুন্দর হত।
নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকার নৌকার মাঝিরা বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় যেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় তাহলে সবার জন্যই ভালো। পরিছন্ন থাকলে পর্যটকদের জন্য ভালো।
ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পরিচ্ছন্ন করা হয় না এখানে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এখানের সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ব্যবহার ও তদারকি করা উচিত।
স্থানীয়রা বলেন, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা এদিক-সেদিক ফেলে আমরাই পরিবেশকে ধ্বংস করছি,এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।হাওরে যদি সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে চাই তাহলে পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা মনে করি পর্যটন শিল্প প্রসারের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দরকার কঠোর নজরদারি। তাহলেই রক্ষা পাবে হাওরের কৃষি।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় গত বছর আমার গ্রাম পুলিশ ও লেবারের মাধ্যমে একবার পরিচ্ছন্ন করেছিলাম। এ বারও সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও হাঙ্গার প্রজেক্ট (পিএইসপি) এর যৌথ উদ্যোগে ৩০ জুন মঙ্গলবার দুপুর থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম করেছি।
গত ৩ বছর আগে আমি কিছু ড্রাম্প কেটে ডাস্টবিন বসিয়েছিলাম কিন্তু কিছুদিন পর কে বা কারা সেটি চুরি করে নিয়ে যায়। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। শুকনো মৌসুমে প্লাস্টিকের বজ্যের জন্য কৃষকদের কৃষি কাজে সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার বলেন, হাওরে যত্রতত্র ময়লা ফেলার এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আমরা হাওরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। বেড়িবাধঁ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত ডাস্টবিনও দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।