পরিবেশ রক্ষায় দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর দাবি
জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দেশ অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ অবস্থা থেকে সরে আসতে সরকার ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একদল তরুণ জলবায়ুকর্মী।
তাঁদের মতে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কার্যক্রম বন্ধ এবং একটি জ্বালানি নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি উৎসাহিত করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্কুলশিক্ষার্থীদের আন্দোলন ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’–এর ডাকে শনিবার সারা বিশ্বে জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এ ধর্মঘট উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার বাংলাদেশ ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নামে দুটি সংগঠনের তরুণ কর্মীরা এ দাবি জানান।
ধ্বংসের হাত থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, দায়িত্বশীল আচরণ ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। তরুণেরাই পারে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং এর জন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে বিশ্বজুড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। ‘উই ওয়ান্ট ক্লাইমেট জাস্টিস’ স্লোগান সামনে রেখে রাজপথ ও অনলাইন মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে স্থানীয় তরুণেরা এ আহ্বানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ২৬টি জেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জলবায়ু ধর্মঘট পালন করেন।
দেশে চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তরুণ জলবায়ুকর্মীরা বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) একটি জীবাশ্ম জ্বালানি, যা আমদানি করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
এর চেয়ে বিদ্যুৎ খাতের জন্য নতুন মহাপরিকল্পনা করে তাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বৃদ্ধি করা হলে জ্বালানির সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
সমাবেশে তরুণ জলবায়ুকর্মীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল পরিবেশদূষণ বন্ধ করা, উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া।
তরুণ জলবায়ুকর্মীরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশের জীবন ও সম্পদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের কার্যকর ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানান।
এ ছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযোজনমূলক পদক্ষেপের জন্য তহবিল সরবরাহ করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের একটি দ্রুত ও কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানান।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় উন্নত দেশ ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেন তরুণেরা। তাঁরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বর্তমান বিশ্ব এক সংকটময় মুহূর্ত পার করছে।
এ পরিস্থিতিকে মানবতার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসকারী কার্যকলাপের দায় নিতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে তাদের সবার কাজ করতে হবে।
সমাবেশে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু সংকট আমাদের দেশ ও বিশ্বের জন্য একটি বড় দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করা জরুরি।
এ ছাড়া দূষণকারী দেশগুলোর থেকে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই পৃথিবী আমাদের। তাই এই পৃথিবীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
এ সময় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে দূষণকারী দেশগুলোর জন্যই মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের জীবন ও সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর জন্য সরকার ও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান উভয় দায়ী এবং তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
জলবায়ু সংকটের পেছনে প্রকৃত অপরাধী যারা, সেই জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে মোকাবিলার সময় এসেছে। এরা মুনাফার লোভে জেনেশুনে ক্ষতি করেছে ও দূষণকারী দেশের রাজনীতিকদের প্রভাবিত করছে, যারা এ–সংক্রান্ত কাজ ও পদক্ষেপের অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে।’
কর্মসূচিতে বেসরকারি সংগঠন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ধ্বংসের হাত থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচাতে হবে।
সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, দায়িত্বশীল আচরণ ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। তরুণেরাই পারে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।’