পরিবেশ রক্ষায় যুবসমাজের ভূমিকা
বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ জনবহুল দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই বিশাল জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুবসমাজ। জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ অনুযায়ী ১৮-৩৫ বছর বয়সের বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক যুব বলে গণ্য হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুব। আনুমানিক এদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। অর্থাৎ বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চেয়ে কম বয়সীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অধিক। যুব নারী-পুরুষের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের সাথে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল অর্জন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে পরিবেশ-বান্ধব একটি প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
যুব সমাজের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং প্রধান পরিবেশগত সমস্যাগুলি চিহ্নিতকরণ ও নিরসনে করণীয় এবং টেকসই উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সম্পর্কে তাদের সচেতন করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব।
তারুণ্য হচ্ছে জীবনের বসন্ত। এটা আবিষ্কার এবং বড় স্বপ্ন দেখার বয়স। প্রগতিশীল তরুণেরা যখন স্বপ্ন দেখে – তারা শুধুমাত্র নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য স্বপ্ন দেখে না, জাতি এবং সমগ্র মানবতার উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
\
তরুণেরা সুস্পষ্ট কারণে সকল দেশের ভবিষ্যত নেতা। তাদের শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা, অপার সম্ভাবনা সঠিকভাবে বিকাশ ও ব্যবহার করা হলে তারা নিজ নিজ দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বের উন্নয়ন ও প্রগতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
জাতীয় উন্নয়ন ‘ধারণা’ যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া অর্জনসাধ্য নয়। বস্তুত জাতীয় উন্নয়নকে একটি দীর্ঘ রিলে দৌড় হিসাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। পুরানো প্রজন্ম অপেক্ষারত তরুণ দলের কাছে বেটন পাস করবে। তরুণদের রয়েছে সংগঠনশীল স্বপ্ন, আবেগ এবং আশা।
যুব সমাজ শুধুমাত্র আগামীকালের নেতাই নন, আজকেরও অংশীদার। অল্পবয়সী নারী-পুরুষ পরিবর্তন এবং অগ্রগতির সামাজিক অভিনেতা। তারা জাতির উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান মতে জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে ৩২তম। PricewaterhouseCoopers- এর প্রক্ষেপণ মতে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ অর্জন ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে হবে। আর এসব উন্নয়ন হতে হবে টেকসই ও স্থায়িত্বশীল। এ লক্ষ্যে পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত পরিমন্ডলের বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, মাটি, বন, পাহাড়, নদ-নদী, সাগর, মানুষ নির্মিত অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও জীবজগত সমন্বয়ে যা কিছু সৃষ্ট তাই পরিবেশ। মানুষ পরিবেশের একটি অংশ এবং জীবজগতসহ মানুষের জন্যই পরিবেশ।
পরিবেশ জীবজগতের স্বাভাবিক জন্ম, স্থিতি, ক্রমবৃদ্ধি, মৃত্যুকে প্রভাবিত করে থাকে। পরিবেশের সব উপাদান একে অপরের সম্পূরক ও সহযোগী হিসাবে কাজ করে এবং এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। পরিবেশ ক্রমশই বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। বায়ু, পানি, মাটি দূষিত হচ্ছে সীমাহীনভাবে।
পরিবেশ দূষিত এবং পরিবেশের ভরসাম্য নষ্ট হলে, তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের শরীর ও মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। মানুষ রোগাক্রান্ত হয় এবং মানুষের ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
যেমন, দূষিত পানি পান করার ফলে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়সহ অনেক মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে। দূষিত পরিবেশ মানুষের ব্যবহার্য সম্পদ নষ্ট করে। অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষের সুস্থ ও ভাল থাকার জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ অত্যাবশ্যক।
পৃথিবী আমাদের খাদ্যসহ সকল মৌলিক চাহিদার যোগান দেয় এবং আমাদের যত্ন নেয়। কিন্তু আমরা কি তার যত্ন নেই? না, আমরা নেই না। এর পরিবর্তে আমরা বায়ু, পানি ও মাটি দূষিত করছি, আমরা প্রতিবেশ ব্যবস্থার অবক্ষয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রাস করছি।
আমরা হাজার হাজার প্রজাতি বিলুপ্ত বা বিপন্ন করছি। আমরা পৃথিবীর সঙ্গে এমন আচরণ করছি যে, আমরা এর মালিক। আজ পৃথিবী বিপর্যয়ের মুখে। আমাদের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই এ বিশ্ব বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম, যদিও এই হুমকির জন্য আমরা একেবারেই দায়ী নই। তা সত্ত্বেও সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশটি নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রশমন ও অভিযোজন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।