পরিবেশ রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাঁড়াতে হবে
ঢাকা মহানগরীর ৬৪ ভাগ পরিবার দরিদ্র। রান্না ও বিদ্যুৎ বাবদ গড়ে একটি পরিবার মাসে ২৩৮৯ টাকা খরচ করে। অর্থাৎ মোট আয়ের ১৫ ভাগ চলে যায় জ্বালানি খরচে।
তাই নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঢাকার নগর দরিদ্র পরিবারগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের আগ্রহ বাড়াতে হবে।
‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত ঢাকা মহানগরী’ শীর্ষক একটি জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের সভাপতিত্বে এই জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এনার্জি, ইনভেস্টমেন্ট গ্রান্টস ও ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সের অ্যাটাচি প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিয়ারা ভিদুসি। সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বারসিক এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মো. কামরুজ্জামান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বারসিক এর নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসীর অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রথমে বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। নগর দরিদ্রদের জন্য রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের (রাজউক) কোনও পরিকল্পনা নেই। নগর নীতিমালায় নগর দরিদ্রদের জ্বালানিসহ অন্যান্য অধিকার বিষয় বলা হয়েছে। তাই এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বায়ুমান এবং জ্বালানি উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাড়াতে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমরা যখন কোনও প্ল্যান করি তখন বস্তিবাসীদের বাদ দিয়েই প্ল্যান করি। নগরের এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে আমরা কখনোই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।
অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং বস্তিবাসীদের আলাদা করে না দেখে তাদের নিয়েই জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব নবায়নযোগ্য জ্বালানি কীভাবে সংরক্ষিত হবে সেটিও ভাবতে হবে।
বারসিক এর প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকা মহানগীর ৬৪ ভাগ নগর দরিদ্র পরিবার। রান্না ও বিদ্যুৎ বাবদ গড়ে একটি পরিবার ২৩৮৯ টাকা খরচ করে। অর্থাৎ মোট আয়ের ১৫ ভাগ চলে যায় জ্বালানি খরচে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, বিগত দুই বছরের মধ্যে ৮ ভাগ পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে যার ৫৪ ভাগ রান্নার লাকড়ি চুলা থেকে। রান্নার ধোঁয়ার কারণে গত ৬ মাসের মধ্যে ২২ ভাগ পরিবারের সদস্যের গুরুতর কাশির সমস্যা হয়েছে।
গবেষণায় মাত্র ১০ ভাগ উত্তরদাতা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। ঢাকার নগর দরিদ্র পরিবারগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহের অভাব রয়েছে।
মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা সর্বত্র বলছি কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।
কিন্তু কার্যত আমরা বস্তিবাসীদের পেছনে ফেলেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি যেটা কখনই সম্ভব নয়। আমাদের স্মার্ট টেকনোলজি নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং এটিকে সহজ ও সুপরিচিত করে তুলতে হবে।