25 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৯:২৪ | ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ রক্ষায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখতে মানববন্ধন
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবেশ রক্ষা মানববন্ধন

পরিবেশ রক্ষায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখতে মানববন্ধন

পরিবেশ রক্ষায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মাঠ উন্মুক্ত রাখতে মানববন্ধন

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস–সংলগ্ন মাঠে কোনো রকম স্থাপনা না করার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন। মাঠটি উন্মুক্ত রেখে ওখানে সবুজ বাগান গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে তারা শুক্রবার মানববন্ধন করেছে।

তাদের এই দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের সচেতন মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নয়, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামও এই দাবি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।

১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত সার্কিট হাউসটি নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। এই সার্কিট হাউস ভবনের চারপাশের প্রায় চার একর এলাকা ছিল উন্মুক্ত। কোনো ধরনের স্থাপনা ছিল না।

এখন যেখানে স্টেডিয়াম আর আউটার স্টেডিয়াম, দক্ষিণের সুইমিংপুল, মার্কেট এবং বিদ্যুৎ দপ্তর—সবটা জুড়ে ছিল বিশাল মাঠ—বলা যায় তেপান্তরের মাঠ। ওখানেই চারটি দল অন্তত খেলতে পারত। উত্তর-পশ্চিমে রাস্তার পর সদ্য অপসারণ করা শিশুপার্কের জায়গায় ছিল খোলা মাঠ, যেখানে অন্তত দুটি দলের খেলা চলত।

বর্তমানে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, মানে তখনকার সার্কিট হাউসের ভেতরেও একটি মাঠ ছিল, মাঝেমধ্যে ওখানেও তরুণেরা ফুটবল খেলতেন। অন্য মাঠে ফুটবল-ক্রিকেট—দুটিই চলত।

সার্কিট হাউস আর চট্টগ্রাম ক্লাবের মাঝখানেও ছিল একটি মাঠ। চারপাশের খোলা প্রান্তরের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন সার্কিট হাউসটিকে অতিকায় ক্যানভাসে একটি নিখুঁত শিল্পকর্মের মতোই লাগত।

যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের নাগরিকেরা এই সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন এবং এখানকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে একটি উন্মুক্ত নাগরিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছেন।



খোলা চত্বরের পাশে বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার দপ্তর ও সাবেক বিভাগীয় স্টেডিয়াম এবং সুবিশাল আউটার স্টেডিয়াম। ফলে এলাকাটি হয়ে ওঠে কিশোর–তরুণদের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ও স্টেডিয়াম এলাকায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের জমায়েত হতো। পরিবেশ থাকত উৎসবমুখর। কিন্তু নগরের অন্য সব খোলা সবুজ প্রান্তর, পুকুর, দিঘি, খালের মতো এই এলাকার প্রান্তরও সংকীর্ণ হয়ে গেল।

সার্কিট হাউসের নান্দনিক সৌন্দর্যের পটভূমি বিবেচনা না করেই মাঠে গড়ে তোলা হলো শিশুপার্ক, স্টেডিয়াম–সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হলো শত শত দোকানপাট, আউটার স্টেডিয়ামকে সংকুচিত করে বানানো হলো বিশাল বিপণিকেন্দ্র ও অকেজো সুইমিংপুল।

মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব স্থাপনা হয়েছে গুটিকয় মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। তাতে এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, সার্কিট হাউসের মতো ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে, কিশোর–তরুণদের খেলার সুবিধা কমে গেছে।

এমনিতেই চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে কয়েকটি স্কুল ছাড়া খোলা প্রান্তর তেমন আর চোখে পড়ে না। দিন দিন মাঠগুলোর জায়গা দখল করেছে অট্টালিকা ও স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

মাঠ নিশ্চিহ্ন করার আগে নগরজীবনের মানুষের আবশ্যিক চাহিদার কথা এতটুকু বিবেচনায় আনা হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়নের কারণে শহরে খোলা মাঠ ক্রমেই বিলীন হয়ে পড়েছে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতারা জানান, নানা কারণে চট্টগ্রাম শহর দিন দিন বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হচ্ছে। ইউরোপের বার্সেলোনায় ১০১ দশমিক ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ৫৪ দশমিক ৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে মাথাপিছু উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ৫ দশমিক ৬ বর্গমিটার। প্রতিবেশী ভারতে কলকাতায় ১৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ৪৬ দশমিক শূন্য লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে মাথাপিছু উন্মুক্ত স্থান রয়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ বর্গমিটার।

অথচ ১৬৮ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ৫২ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে উন্মুক্ত স্থান আছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৮ বর্গমিটার। সেই হাতে গোনা অল্প কটি উন্মুক্ত স্থানও বারবার নানা অপরিকল্পিত ও অপ–উন্নয়নে বিনষ্ট হওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে।

এ রকম একটা পরিস্থিতিতে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন মাঠে নেমেছে সার্কিট হাউসের মাঠ থেকে অপসারণ করা শিশুপার্কের জায়গায় আর কোনো স্থাপনা না করার দাবিতে।



পরিকল্পিত নাগরিক ফোরাম সার্কিট হাউস চত্বরকে একটি উন্মুক্ত নাগরিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য ১৯৬১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রণীত সবকটি পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনায় উন্মুক্ত পরিসরের পরিধি বাড়ানো ও এর যথাযথ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

চট্টগ্রামের কোথাও এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। তা ছাড়া সার্কিট হাউসের সামনে চত্বরটি মূলত স্থাপত্যকর্মটিরই একটি অংশ। এটি বিলীন করা মানে সার্কিট হাউসের একটি অংশ বিলীন করা। দেশ–বিদেশের সবার কাছে এই স্থাপনা চট্টগ্রামের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত।

ভবনটির ঐতিহ্য রক্ষার জন্য এর সামনের চত্বরটিতে কোনো রকম বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ না করে এটি খোলা বা খালি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতারা চট্টগ্রাম মহানগরের মাস্টারপ্ল্যানে উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে চিহ্নিত স্থানগুলোতে বিধিবহির্ভূতভাবে অন্য কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের জন্য উপযুক্ত হাওয়া, সবুজ খোলা অঙ্গন দরকার। এটি তাঁর অধিকার। সেই অধিকার রক্ষার জন্য দরকার বাগান, খেলার মাঠ, পুকুর, দিঘি, পাহাড়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলো।

এগুলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ ও বন্যা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা উন্মুক্ত পরিসরগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি বলে সচেতন নাগরিকেরা মনে করেন।

একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে, ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে সার্কিট হাউসের সামনের প্রাঙ্গণ নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর যৌক্তিক দাবিটির কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের খোলা প্রান্তরটি মানুষের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠুক।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত